শত কোটি টাকার আর্থিক অনিয়ম করেও
ধরা ছোয়ার বাইরে গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম

তেজগাঁও গণপূর্ত বিভাগের সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী (ইএম) জাহাঙ্গীর আলমের অনিয়ম আর দূর্ণীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) তদন্ত করে দেখার দাবি উঠেছে। দুর্নীতিবাজ বলে সুপরিচিত এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ঘুষ ও কমিশন বাণিজ্যের মাধ্যমে কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার বিষয়টি ওপেন সিক্রেট থাকলেও বরাবরই তিনি রয়ে গিয়েছেন ধরা ছোঁয়ার বাইরে। কোন যাদুর কাঠির ছোয়ার তিনি যেকোনো সরকারের সময়ই ধরাছোয়ার বাইরে থেকে যান সেটিই এখন তার দপ্তরে কোটি টাকার প্রশ্ন।
দুর্নীতি দমন কমিশনে দেয়া অভিযোগে একজন ঠিকাদার দাবি করেন, তেজগাঁও গণপূর্ত বিভাগের সাবেক (ইএম) নির্বাহী প্রকৌশলী মো.জাহাঙ্গীর আলম
বর্তমানে রাজশাহী গণপূর্তের ইএম পিএন্ডডি বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। গণপূর্তের একজন দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তা হিসেবে তিনি পরিচিত। আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে সখ্যতা থাকায় ঠিকাদারদের সাথে আঁতাত করে বিভিন্ন প্রজেক্টের কাজ শেষ না করেই বিল উঠিয়ে টাকা আত্মসাৎ করতেন। এমনকি কাজ না করেও ভূয়া বিল ভাউচার করে টাকা উত্তোলন করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। নিজের পছন্দের ঠিকাদারদের সাথে আঁতাত করেই এই ভূয়া বিল ভাউচার মাধ্যেমে টাকা উত্তোলন করেছেন আওয়ামী ঘরনার এই আলোচিত প্রকৌশলী।
অন্যদিকে, জাহাঙ্গীর আলম গত জুলাই মাসে রাজশাহীতে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমানোর জন্য আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের আর্থিকভাবে সহায়তা করেছেন বলেও জানা গেছে। এনিয়ে রাজশাহীতে তার বিরুদ্ধে মিছিল বের করেছিলো সাধারণ শিক্ষার্থীরা। নির্বাহী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলমের বিভিন্ন অনিয়ম আর দুর্নীতির খবর কর্তৃপক্ষের নজরে আসলে তাকে বদলী করা হয় গনপূর্তের ইএম পিএন্ডডি বিভাগ রাজশাহীতে। এর আগে ঢাকায় থাকাকালীন জিগাতলা প্রকল্পের এক হাজার বর্গফুট এর দুই টি ভবনের ৮ কোটি টাকার কাজের বিল ঠিকাদারের সাথে যোগসাজশ করে ভাগাভাগি করে নিয়েছেন জাহাঙ্গীর আলম। ওই কাজের মেয়াদ শেষ হলেও তার পছন্দের প্রতিষ্ঠান মাহবুব কনস্ট্রাকশন এখনো কাজ বুঝিয়ে দিতে পারেনি।
একই ভাবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গ্লাস টাওয়ারের লাইট এর মূল্য তিন গুণ বেশি দেখিয়ে এনার্জি প্লাস এর সাথে যোগসাজশ করে সেখানেও ৮ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন এই কর্মকর্তা। এরকম অসংখ্য কাজ ঠিকাদারকে দিয়ে কখনো অর্ধেক আবার কখনো কাজ না করিয়েই বিল উত্তলন করেছেন অহরহ। মাত্র নয় বছর পিডব্লিউডিতে চাকরি করে জাহাঙ্গীর আলম এখন শত কোটি টাকার মালিক।
গনপূর্তের দুর্নীতিবাজ এই কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম যেকোন কাজের বিল দেয়ার আগে দায়িত্বরত প্রকৌশলীদের সাথে তার বনিবোনা না হলে তার পছন্দের প্রকৌশলীকে অর্ডার করে বিল প্রস্তাবের নির্দেশ দিতেন। সময়ের ব্যবধানে দায়িত্ব বদল করতে না পারলে দায়িত্বরত প্রকৌশলীর স্বাক্ষর ছাড়াই নিজ ক্ষমতার অপব্যবহার করে ঠিকাদারকে বিল প্রদান করতেন। তার প্রমাণ হিসেবে রায়ের বাজার বদ্ধ ভূমির উপকেন্দ্র সহ আনুষাঙ্গিক চতুর্থ আর/ এ বিলের উপ প্রকৌশলীর স্বাক্ষর ব্যতি রেখে ও ঝিগাতলা প্রকল্পের উপ সহকারী প্রকৌশলী এবং উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলীর স্বাক্ষর ব্যতি রেখেই বিল প্রদান করা হয়েছে। এরকম অসংখ্য বিলই দায়িত্বগত কর্মকর্তাদের স্বাক্ষর ছাড়াই প্রদান করে সরকারি টাকা আত্মসাৎ করেছেন তিনি।
অভিযোগ রয়েছে, নির্বাহী প্রকৌশলী (ইএম) জাহাঙ্গীর আলম এপিপি ও থোক বরাদ্দের প্রকল্প পাশের ক্ষেত্রে ঠিকাদারদের কাছ থেকে ১৫ শতাংশেরও বেশি কমিশন নিয়ে থাকেন। কমিশন না দিলে ফাইল আটকে রাখেন। এছাড়া জাহাঙ্গীর আলম চিফ ইঞ্জিনিয়ারের ক্যাশিয়ারের দায়িত্ব পালন করে কোটি কোটি টাকা আয় করেন।
ঢাকা থাকা অবস্থায় জাহাঙ্গীর আলমকে একেক ঠিকাদার একেক রিসোর্টে সুন্দরী, রমনী দিয়ে আনন্দ ও মনোরঞ্জন করাতেন। তিনি বোট ক্লাবে দশ লাখ টাকা খরচ করে মেম্বারশিপ নিয়েছেন বলেও আলোচনা আছে।
নির্বাহী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম অনিয়ম দূর্নীতির মাধ্যেমে প্রায় শতকোটি টাকার সম্পদের মালিক। ঢাকার মোহাম্মদপুরে আলিশান বাড়ি, কুয়াকাটায় ও কক্সবাজারে রিসোর্স এবং ফ্ল্যাট রয়েছে। গ্রামের বাড়িতে বহু বিঘা জমি ক্রয় করেছেন।
এছাড়া মিরপুরে একটি বাড়িসহ রাজধানীতে বেশ কয়েকটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট জায়গা জমি কিনেছেন। তার রয়েছে ব্রান্ড নিউ হ্যারিয়ার লেকসাস গাড়ি, রামপুরায় ৬তলা ভবন, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ডি ব্লকে ৩ টি ৫ কাঠার প্লট। এছাড়াও মিরপুরের পশ্চিম মনিপুর মোল্লা পাড়ায় রয়েছে আলিশান বাড়ি যার ঠিকানা, বাসা নং-৮৯ পশ্চিম মনিপুর মোল্লা পাড়া, মিরপুর ঢাকা। রাজধানীর উত্তরার ১৩ নং সেক্টর রোড নং-৮ বাসা নং-৯১/৫ এর দ্বিতীয় এবং ৩য় তলায় তার স্ত্রীর নামে রয়েছে আলিশান ফ্ল্যাট। যার বাজার মূল্য প্রায় ৮৫ লক্ষ টাকা। স্ত্রীর নামে কোটি টাকার দুইটি এফডিআর করা রয়েছে। তার বন্ধুর মাধ্যমে বিদেশে টাকা পাচার করেছেন বলেও গুঞ্জন চলছে গণপূর্ত অধিদফতরে। এছাড়া তার শাশুড়ীর ব্যাংক একাউন্টে রয়েছে কোটি কোটি টাকা যা তদন্ত করলে বেড়িয়ে আসবে।
অভিযোগের বিষয়ে গণপূর্তের এই বিতর্কিত নির্বাহী প্রকৌশলি জাহাঙ্গীর আলম তার বিরুদ্ধে থাকা অভিযোগ অস্বীকার করে অভিযোগগুলো আরো যাচাই বাছাই করে দেখার অনুরোধ জানান।