হামিদ-হাসিন-তারেক সিন্ডিকেট লুটেপুটে খাচ্ছে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, নির্বিকার উপদেষ্টা

বাংলাদেশ ছাত্রলীগের মইন-ইকবাল কমিটির সময়ে জগন্নাথ কলেজ ছাত্রলীগের তুখোর ক্যাডার মোঃ হামিদুর রহমান খান বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের সকল সুবিধা নিয়ে সচিব পদে পদোন্নতি বাগিয়ে হঠাৎই ভোল পাল্টে বিএনপিপন্থী অফিসার হয়ে গেলেন। আবার সচিব পদে বসেই তার দপ্তর ও অধিদপ্তরের বিএনপিপন্থী আফিসারদের নানাভাবে হয়রানি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
সুত্রমতে সম্প্রতি তার অধীনস্থ রাজউকের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার কাছ থেকে মোটা আংকের টাকা আদায় করেছেন শুধুমাত্র রাজউকে বহাল রাখার জন্য। গণপূর্ত অধিদপ্তরের উপসহকারী প্রকৌশলী থেকে শুরু করে আতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী পদে বদলি ও পদোন্নতির নামে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে আমেরিকায় পাচার করেছেন। ইতিমধ্যে নিউইয়র্কে তিনি বাড়ি কেনার প্রক্রিয়া শুরু করেছেন।
বিগত সরকারের সময়ে বিশেষ কোটায় বরাদ্দ দেওয়া গুলশান, উত্তরা, ঝিলমিল ও পূর্বাচল প্রকল্পের বরাদ্দ বাতিলে টালবাহানা করছেন। বরাদ্দপ্রাপ্ত এসব লোকজনের কাছ থেকে বরাদ্দ বহাল রাখার কথা বলে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এ কাজে তাকে সহযোগিতা করছেন এ্যাবের নেতা প্রকৌশলী আলমগীর হাসিন আহমেদ ও মন্ত্রণালয়ের সদ্য সাবেক উপ সচিব তারেক শিমুল। গৃহায়ণ ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান শুভ্রর ঘনিষ্ট পরিচয়ে রাজউক, গনপূর্ত, জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষসহ ঢাকার বাইরে সিডিএ, কেডিএ থেকে কোটি কোটি টাকা কামিয়ে নিয়েছেন। হামিদ-হাসিন-তারেক সিন্ডিকেটের কাছে অসহায় হয়ে পড়েছেন গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ও প্রকৌশলীরা।
হামিদ টাকা কামাতে এতোটাই মরিয়া হয়ে উঠেছেন যে, তার বাল্য বন্ধু ছাত্রলীগের সাবেক নেতা, ফ্যাসিস্ট সরকারের সুবিধাভোগী শাহেদ চৌধুরীর পূর্বাচলে বিশেষ বরাদ্দের সাড়ে সাত কাঠা প্লটের বরাদ্দ বহাল রাখতে বিপুল অংকের টাকা দাবি করেছেন। ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী যে কয়েকজনকে নিষিদ্ধ করতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা লিখিত অভিযোগ দিয়েছিল তার মধ্যে শাহেদ চৌধুরী অন্যতম।
প্রকৌশলী আলমগীর হাসিন আহমেদের সাম্প্রতিক কর্মকান্ড সম্পর্কে পূর্ত উপদেষ্টা অবহিত হওয়ার পর তাকে আর সুযোগ দিচ্ছন না। উপদেষ্টা পরিস্কারভাবে বলে দিয়েছেন, বর্তমান সরকারের অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছে। এসব বদলি পোস্টিং পদোন্নতি আমার কাজ নয়। এগুলো নিয়ে ধান্ধা বন্ধ করো। উপদেষ্টার কাছে সুযোগ না পেয়ে হাসিন এখন হামিদের ঘাড়ে চড়ে বসেছে। তারাই লিস্ট করছেন কাকে কোথায় বসাতে হবে।
সম্প্রতি এ্যাবের সিনিয়র নেতা, ছাত্রদলের সাবেক নেতা গণপূর্ত অধিদপ্তরের রংপুর বিভাগের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আবুল খায়েরের ঢাকা মেট্রোপলিটন জোনে পদায়নের ফাইল ফেরত পাঠানো হয়েছে এই হামিদ-হাসিন সিন্ডিকেটের কারনে। ছাত্রদলের নেতা হওয়ায় এই সময়ে তিনি পোস্টিংয়ের জন্য টাকা দেবেন না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন। আর এ কারনেই তার ফাইল আটকে দিয়ে গণপূর্তের মেট্রো জেনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী নাসিম খানের কাছ থেকে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট মহলে গুঞ্জন রয়েছে।
সম্প্রতি এই চক্র গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী পদে একজনকে চলতি দায়িত্ব দিতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। ২০ কোটি টাকার এই মিশন সম্পর্কে উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান শুভ্র অবহিত হওয়ার পর পুরো প্রক্রিয়াই থমকে গেছে। জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের প্রেষণ থেকে ফেরত আনা মোসলেহ উদ্দিন আহমেদকে ঢাকা মেট্রোপলিটন জোনের দায়িত্ব দেয়া হতে পারে। গ্রেডেশন তালিকায় তিন নম্বরে থাকা মোসলেহ উদ্দিনকে দু জনকে ডিঙিয়ে সুপারসিড নিয়োগ দিয়ে বিতর্কিত হতে চাননা উপদেষ্টা। আর মোসলেহ উদ্দিনের চাকরি রয়েছে মাত্র ৬ মাস। এই সময়ে নিয়োগ দিয়ে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়ার কন্ট্রাক্ট নিয়েছে এই চক্র। যাতে এখনো সায় দেননি উপদেষ্টা। কিন্তু নিজেকে বিএনপি জাহির করতে যাওয়া সচিব হামিদকে নিয়ে বিতর্ক থামছেই না।
মোঃ হামিদুর রহমান খান ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখে সচিব পদে পদোন্নতি পেয়ে ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে যোগদান করেন। তিনি জগন্নাথ কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে পড়ার সময়ে ছাত্রলীগের রাজনৈতিক সক্রিয় কর্মী ও ক্যাডার ছিলেন। পুরোনো ঢাকায় বিভিন্ন দোকানে বাকি খাওয়া আর চাঁদাবাজির নানা অভিযোগ রয়েছে। তার এক সহপাঠী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। আর এখন তিনি বলে বেড়াচ্ছেন তার চোদ্দগুষ্টিতে কেউ রাজনীতি করতো না।
অথচ সাবেক ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু, শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন ও পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নজরুল ইসলাম হিরুর প্রভাব খাটিয়ে একের পর এক প্রাইজ পোস্টিং নিয়েছেন। ফ্যাসিবাদের সহযোগী এই হামিদের বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার জোর দাবি উঠেছে।