৬ বছরের চাকুরিতে কর কমিশনারের পেশকার মেহেদী হাসান আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ঘুষ, দুর্নীতি ও প্রতারণার আশ্রয় স্থল এবং অবৈধ ভাবে অর্থ উপার্জনের আঁতুড়ঘরে পরিণত হয়েছে। অসৎ কর্মকর্তা এবং কর্মচারীরা প্রতিনিয়ত রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে নিজেদের আখের গোছানোর নতুন নতুন পন্থা অবলম্বন করছেন। ছাগল কাণ্ডের মতিউর তার একটি জ্বলন্ত উদাহরণ। অফিস খরচের নামে অবৈধ পন্থায় কামাচ্ছেন কোটি কোটি টাকা। ঘুষ বা নজরানা দিলে রাজস্ব কমিয়ে দেওয়ার অভিনব পন্থা বের করেন অতিরিক্ত সহকারি কর কমিশনার এইচ এম আতাউর ও পেশকার মেহেদী হাসান। কাজল এন্ড কোং প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী শাহাদাত হোসেন কাজল মোল্লা অভিযোগ তুলে বলেন,আমার কাছ অফিস খরচ বাবদ ভয় ভীতি দেখিয়ে মোটা অংকের টাকা দাবি করেন এইচ এম আতাউর ও পেশকার মেহেদী হাসান। আমি তাদের হুমকি ধামকিতে ভয় পেয়ে ৫২ লক্ষ টাকা প্রদান করি। আতাউর ও মেহেদী হাসান আমাকে বলেন ইনকাম ট্যাক্স ফাইলে, কর আইনের পূর্ববর্তী ৭৪ এবং বর্তমান ১৭৩ ধারা অনুসারে কর প্রদান করতে হয়না। ফাইল লুকিয়ে (গোপন) রাখার কথা বলে এই ৫২ লক্ষ টাকা অফিস খরচ বাবদ ঘুষ নেয় এইচ এম আতাউর ও পেশকার মেহেদী হাসান। রাজস্ব আদায় যাদের কাজ ,তারা রাজস্ব কমিয়ে অভিনব পন্থায় লুটে নিচ্ছেন কোটি কোটি টাকা। বছরে রাজস্ব ঘাটতির এটি একটি বড় কারণ বলে ধারনা বিজ্ঞজনের। বিভিন্ন কোম্পানির ফাইল আটকে মিথ্যা প্রলোভন দিয়ে রাজস্ব ফাঁকিসহ নানা অভিযোগ উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে ।
এ বিষয়ে সরেজমিনে জানতে চাইলে কর অঞ্চল ৩/৪৮ সার্কেলের পেশকার মেহেদী হাসান দৈনিক আজকের সংবাদের প্রতিবেদকের কাছে সমস্ত বিষয় অস্বীকার করে বলেন,আমার বিরুদ্ধে পরিকল্পিতভাবে ঈশ্বর্নিত হয়ে বানোয়াট ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলেছেন কাজল এন্ড কোং। আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগগুলা সব সত্য নয় । আমি কাজল এন্ড কোং এর অফিসে গিয়েছি তবে টাকা-পয়সার লেনদেন এই বিষয়গুলো সঠিক নয় ।
কাজল এন্ড কোং প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী শাহাদাত হোসেন কাজল মোল্লা বলেন, গত ১৫ জানুয়ারী, ২০২৫ ইং তারিখে তাদের চাপে চার লক্ষ টাকার একটি চেক দেই, চেক নং- CD-B 0353577, ওয়ান ব্যাংক মুগদা শাখা, গ্রহণকারী মেহেদী হাসান, স্থান কাজল এন্ড কোং এর অফিস। আর বাকি টাকা মেহেদী হাসানের মাধ্যমে নগদ প্রদান করি ।
অনুসন্ধানে উঠে আসে, ২০১৯ সালে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে পেশকার হিসেবে চাকরিতে যোগদান করেন মেহেদী হাসান। মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান মেহেদী হাসান অর্থনৈতিকভাবে খুব সচ্ছল ছিলনা বলে জানা যায় স্থানীয় লোকদের কাছে। গত পাঁচ বছরে এই মেহেদী হাসান বনে যান বিপুল সম্পদের মালিক। সরকারি চাকরি পাওয়ার সাথে সাথে গুপ্তধনের সন্ধান পেয়েছেন তিনি। সরেজমিনে উঠে আসে রাজধানী ঢাকার আগারগাঁও ৬০ফুট রাস্তার পাশেই ২২০/২/১ পীরেরবাগে ১৬ (ষোল) কাঠা ক্রয়কৃত জমির উপর ১০ তলা বিশিষ্ঠ্য তিনটি বিল্ডিং এর ১৮জন মালিকের একজন মেহেদী হাসান। উক্ত ভবনগুলো নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। জানা যায় উক্ত ভবনের মালিকানা সহ একাধিক ফ্ল্যাট ক্রয় করেছেন তিনি। গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইলের গোপালপুরে ক্রয় করেছেন কোটি টাকার সম্পদ ।
উপরোক্ত সম্পদের বিষয়ে পেশকার মেহেদী হাসানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন ,আমি যে সকল সম্পদ করেছি তা আমার স্যারেরা জানেন এবং আমার ইনকাম ট্যাক্সের ফাইলে দেখানো আছে। কিভাবে এত সম্পদের মালিক হলেন, কোথা থেকে এত টাকা আসলো এ বিষয়ে তার কাছে জানতে চাইলে কোন উত্তর দিতে রাজি হননি পেশকার মেহেদী হাসান।
এদিকে অনুসন্ধানে প্রয়োজনে কাজল কোং এর অফিসে গেলে কম্পিউটার অপারেটর, ম্যানেজার সহ সকলেই বলেন, মেহেদী হাসান সপ্তাহে দুই দিন আমাদের অফিসে এসে কম্পিউটার বসে কাজ করতেন। তারা আরো বলেন, এইচএম আতাউর রহমান ও মেহেদী হাসানের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর একটি বিশেষ মেইল থেকে আমাদেরকে হুমকি ধামকি ও টাকা পয়সা দাবি করছে। আতাউর রহমান এবং মেহেদী হাসানের সাথে মীমাংসা না হলে আমাদেরকে বিভিন্নভাবে হারানির কথা উল্লেখ করে এই মেইলে। আমরা সকলেই এখন ভয় ও আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছি। এ সকল অনিয়ম ,দুর্নীতি দেখেও দর্শকের ভুমিকায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। উপরে উল্লেখিত অনুসন্ধানে উঠে আসা সমস্ত তথ্য-উপাত্ত আজকের সংবাদের কাছে সংরক্ষিত আছে ।