ফ্যাসিস্ট আওয়ামীপন্থী এনবিআর চেয়ারম্যান সহ ৩৪ সচিবকে সরিয়ে দিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয় তৎপর

বিশেষ প্রতিনিধি
বিশেষ প্রতিনিধি
প্রকাশিত: অক্টোবর ২৬, ২০২৫ ২০:৫৪:০৪

প্রশাসনকে দলনিরপেক্ষ এবং ফ্যাসিস্ট হাসিনার আমলের সুবিধাভোগী সচিব সহ ৭২ সচিবের বিষয়টিতে সরকার কঠোর মনোভাব পোষণ করেছেন। সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টার সাথে রাজনৈতিক দলগুলোর বৈঠকে বিএনপি, জামায়াত, এনসিপি চিহ্নিত দলবাজ আমলাদের তালিকা তার হাতে তুলে দেয়া হয়। দলবাজ আমলাদের গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে সরানোর দাবিও জানায় ঐ রাজনৈতিক দলগুলো। এ কারণে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথমার্ধে নির্বাচনের লক্ষ্যে ডিসেম্বরে তফসিল ঘোষণার আগেই প্রশাসনযন্ত্রকে দলনিরপেক্ষ করতে জনপ্রশাসন সচিবকে নির্দেশ দেন।

রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে দেয়া তালিকা অনুযায়ী প্রশাসনে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ও সচিব পদে ৭২ জন কর্মকর্তা বর্তমানে দায়িত্বে রয়েছেন। এর মধ্যে প্রশাসনে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগপন্থি ৩৪ জন সচিব, জামায়াতপন্থি কর্মকর্তা ২৯ জন এবং বিএনপিপন্থী কর্মকর্তা পাঁচ জন এবং সুবিধাভোগী কর্মকর্তা ১০ জন সচিব রয়েছেন। প্রশাসনে কর্মরত কর্মকর্তাদের একটি বড় অংশই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষ হয়ে কাজ করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল একটি সূত্র মতে প্রশাসনে থাকা ফ্যাসিস্ট আওয়ামীপন্থী এনবিআর চেয়ারম্যান ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সচিব মোঃ আব্দুর রহমান খান সহ ৩৪ সচিবের বিষয়ে কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছেন সরকার। এনবিআর চেয়ারম্যান সম্পর্কে সূত্রটি জানায় শাহজালাল এয়ারপোর্টে আগুন লেগে শত মিলিয়ন ডলারের আমদানি পন্য পুড়ে ছাই হয়ে যাবার পর দেশে না ফিরে তিনি ব্যক্তিগত সফরে কানাডায় অবস্থানের বিষয়টিতে সরকার বিব্রত। তাছাড়া ফ্যাসিস্ট সরকারের আজ্ঞাবহ চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান খান ২০১৪ সালে উপ সচিব হিসেবে কর ক্যাডার হতে ডিএস পুলে যোগদান করেন। যোগদানের পর হতেই তিনি ফ্যাসিস্ট সরকারের সাথে হাত মিলিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পদায়ণ বাগিয়ে নেন।

তিনি ২০১৪ সাল হতে ২০২৩ সালে সচিব হওয়ার আগ পর্যন্ত অর্থ মন্ত্রণালয়ের উপ সচিব, যুগ্ম সচিব এবং অতিরিক্ত সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে অবৈধ প্রকল্পের যত অর্থ ছাড় হয়েছে তার বিপুল অংকের পার্সেন্টেজ তিনি নিয়েছেন এবং বিদেশে টাকা পাচারের নেপথ্যের কারিগর তিনি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তৎকালীন গভর্ণর আব্দর রউফ তালুকদারের অত্যন্ত ঘনিষ্টজন হিসেবে পরিচিত আব্দুর রহমান খান অসংখ্য কর্মকর্তাকে ডিঙ্গিয়ে ২০২৩ সালে ফ্যাসিস্ট সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় এর ব্যাংকিং ডিভিশনের সচিব হন। ব্যাংকিং ডিভিশনের সচিব থাকা অবস্থায় তিনি এস.আলম গ্রুপের ঘনিষ্ট জন হিসেবে বিদেশে অর্থ পাচারসহ যাবতীয় কার্যক্রম সিদ্ধহন্তে সম্পাদন করেন।

জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয়ের অপর একজন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অতিরিক্ত সচিব জানান, এনসিপিসহ অন্যান্য কয়েকটি রাজনৈতিক দলের দাবি, প্রশাসনের কর্মকর্তারা কাজ করছেন বিএনপি ও জামায়াতের হয়ে। প্রশাসনের বদলি, পদোন্নতি ও পদায়নের মতো বিষয়গুলো জামায়াতের রাজনৈতিক বিবেচনায় করা হচ্ছে। জামায়াতের পক্ষ হয়ে বিদ্যুৎ উপদেষ্টা এবং মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব মূল ভূমিকা পালন করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। সব কিছু বিবেচনায় নিয়ে প্রশাসনে থাকার ফ্যাসিবাদি সুবিধাভোগী এবং চুক্তিতে নিয়োগ পাওয়ার ৮২ ব্যাচের কর্মকর্তাদের চুক্তি বাতিল করে প্রশাসনের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে নতুন সচিব পদে নিয়োগ দেয়ার জন্য প্রধান উপদেষ্টা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবকে নির্দেশনা দিয়েছেন। যেকোনো সময় মন্ত্রিপরিষদ বিভগ সচিবকেও প্রত্যাহার করা হতে পারে। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে ফ্যাসিবাদি সুবিধাভোগী এবং চুক্তিতে নিয়োগ পাওয়া আমলাদের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। ইতোমধ্যে নৌ পরিবহন সচিবকে জনপ্রশাসনে ন্যস্ত করা হয়েছে। চলতি সপ্তাহে অনেক সচিবের মন্ত্রণালয় পরিবর্তন করা হবে। সংসদ নির্বাচনের আগে বাধ্যতামূলক অবসরের তালিকা আরো দীর্ঘ হচ্ছে, বিগত সরকারের নিয়োগ পাওয়া সচিবদের বিষয়ে তদন্ত চলছে। চলতি সপ্তাহে প্রশাসনে সচিবসহ বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে। এর ফলে প্রশাসনে তাদের দাপট কমছে। রাজনৈতিক প্রতিশোধ নয়, প্রশাসনে নিরপেক্ষতা ফিরিয়ে আনার এ প্রক্রিয়া শুরু করতে যাচ্ছে সরকার। ভূমি উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদারকে এবার প্রশাসনের দেখভালের দায়িত্ব দেয়া হতে পারে বলে জানা গেছে। ইতিমধ্যে নতুন সচিব নিয়োগ দিতে দুইটি ব্যাচের একাধিক কর্মকর্তার তদন্ত শুরু হয়েছে। তদন্তের কাজ শেষ হলে তাদের সচিব পদে নিয়োগ দেয়া হবে।

উল্লেখ্য গত মে মাসে ৮০টি সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত জুলাই ঐক্য নামের সংগঠনটি এক সংবাদ সম্মেলনে হাসিনার অপকর্মের দোসর হিসেবে ৪৪ সচিব ও ১২ ম্যাজিস্ট্রেটের নাম প্রকাশ করে তাদেরকে প্রত্যাহারের জন্য প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা করেন। প্রধান উপদেষ্টার বরাবরে দাখিলকৃত ৭নং ক্রমিকে থাকা মো: আব্দুর রহমান খান (৭৭৬৮) সচিব, অভ্যান্তরিন সম্পদ বিভাগ ও চেয়ারম্যান জাতীয় রাজস্ব বোর্ড’র বিরুদ্ধে অভিযোগ আনেন যে, তিনি অতিমাত্রায় আওয়ামীলীগ ও দুর্ণীতি পরায়ন কর্মকর্তা আওয়ামীলীগ আমলে নিয়োগপ্রাপ্ত সচিব। সাবেক গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার ও দরবেশ খ্যাত সালমান এফ রহমানের অত্যান্ত ঘনিষ্ঠ ও প্রিয়ভাজন। তিনি নিজ উদ্যেগে অনেকবারই ধানমন্ডিস্থ শেখ মুজিবের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে ধন্য হয়েছেন।