বৈশম্য বিরোধী আন্দোলনের সুবিধা ভোগী কর্তৃপক্ষের নিকট বৈশম্যের স্বীকার হতে চলেছে ৩৩ তম বিসিএস'র ডাক্তাররা

দেশের ২৬টি বিসিএস ক্যাডারে কর্মরত সরকারি কর্মকর্তাদের কাজের দক্ষতা ও চাকুরীর বয়সসীমা বৃদ্ধির সাথে পদোন্নতি প্রদান করা হয়। তবে পদোন্নতি যোগ্য কর্মকর্তার তুলনায় যদি পদোন্নতির পদ কম থাকে তবে বিভিন্ন ক্যাডারে সুপারনিউমারী পদ সৃজন করা হয়। এবং এই সুপারনিউমারী পদের পদোন্নতি বিসিএস ব্যাচ ভিত্তিক হয়। স্বাস্থ্য ক্যাডার বরাবরের মত অধিকাংশ চিকিৎসক পদোন্নতি বঞ্চিত।লিস্ট এর পর লিস্ট হয় কিন্তু পদোন্নতির জন্য এলিজিবল হওয়ার পর ও মেডিকেল অফিসার হিসেবে কেটে যায় চাকুরী জীবন। দীর্ঘদিনের দাবীর প্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবার সুপার নিউমারি পদোন্নতির উদ্যোগ গ্রহন করে।
উল্লেখ্য যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ২২/১০/২০২৪ইং তারিখের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসের ২৭ তারিখের মধ্যে সকল পদোন্নতি যোগ্য স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে অনলাইনে HRIS (Human Resource Information System) এ তথ্য হালনাগাদ করতে বলা হয়। পরবর্তীতে HRIS এর প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে ডিসেম্বর মাসে বিভিন্ন সাবজেক্টের সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি যোগ্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের ফিটলিস্ট প্রকাশ করা হয়।এই ফিটলিস্টের যোগ্য স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের মোট সংখ্যার উপর ভিত্তি করে পদোন্নতির আশ্বাস দেয়া হয়। গত মার্চ মাসে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডাঃ সায়েদুর রহমান পদোন্নতির জন্য ১২ সপ্তাহ সময় নেন এবং ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে প্রকাশিত ফিটলিস্টের উপর ভিত্তি করে ৭৫০০ পদ সৃজনের আশ্বাস দেন।
এরই ধারাবাহিকতায় গত দেড় মাসে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপে ফিটলিস্টের পদোন্নতি যোগ্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের নাম স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হলেও ২০২৪ সালের ডিসেম্বরের ফিটলিস্ট থেকে ৩৩ বিসিএস এর ৪৯২ জনকে অন্যায়ভাবে বঞ্চিত করার পায়তারা চলছে। স্বাস্থ্য ক্যাডারে ৩৩তম বিসিএসের সহকারী অধ্যাপক এর জন্য এলিজিবল কিছু স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে অন্যায়ভাবে বৈষম্যের শিকার করা হচ্ছে। অথচ ফিটলিস্টে এলিজিবল সবার সংখ্যা হিসেব করেই এই সুপার নিউমারির সুপারিশ করা হয়। এই ৪৯২ জন বাদ পড়ার সুযোগ নেই। তাই অসমর্থিত সূত্রে জানা যায় যে , ফিটলিস্টে নাম আসার জন্য তথ্য প্রদানের ডেড লাইন ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসের ২৭ তারিখ হলেও অনেকেই অন্যায়ভাবে ২০২৫ সালের জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি এমনকি মার্চ মাসেও তথ্য হালনাগাদ করে ফিটলিস্টে ঢুকে পড়ে ,যারা শেষ ডেড লাইনের মধ্যে ফিট এন্ড এলিজিবল ছিলনা।
যার কারণে অন্যায়ভাবে ৪৯২ জন চিকিৎসককে বঞ্চিত করা হচ্ছে।এই ৪৯২ জন চিকিৎসক ৩৩তম বিসিএসের।একই বিসিএস ব্যাচের অধিকাংশকে সহকারী অধ্যাপক হবার সুপারিশ করা হলেও এই ৪৯২ জনকে বৈষম্যের শিকার করা হচ্ছে।এই বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছে ব্যাখ্যা জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে বলা হয় যে উপজেলা ভিত্তিক হাসপাতালের জুনিয়র কনসালটেন্ট পোস্টের জন্য ৪৯২ জনকে সুপারিশ বঞ্চিত করা হয়েছে। এখানে উল্লেখ্য যে ৩৪ তম বিসিএস থেকে শুরু করে ৩৯ তম বিসিএস পর্যন্ত জুনিয়র কনসালটেন্ট হবার মত যথেষ্ট পদোন্নতি যোগ্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক থাকার পরও ৩৩ তম বিসিএসের অল্প কয়েকজনকে বঞ্চনার শিকার করা হচ্ছে।চাকুরির এগারো বছর পরও ৩৩ তম বিসিএসের অনেকেই এখনো পদোন্নতি বঞ্চিত। তাছাড়া এই ৪৯২ জনের অনেকেই দীর্ঘদিন যাবত জুনিয়র কনসালটেন্ট হিসেবে বিভিন্ন উপজেলায় কর্মরত রয়েছেন। চাকুরী শুরুর প্রারম্ভিক পর্যায়ে সবাইকে উপজেলায় পদায়ন দেবার এগারো বছর পর পুনরায় কাঙ্ক্ষিত পদোন্নতি না দিয়ে উপজেলায় পদায়ন অনেককেই হতাশ ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে তুলছে।অথচ ৩৪ তম বিসিএস থেকে শুরু করে ৩৯ তম বিসিএস পর্যন্ত বিশাল সংখ্যক কর্মকর্তা জুনিয়র কনসালটেন্ট পদের জন্য অপেক্ষমাণ।
এছাড়া এই ৪৯২ জন বঞ্চিত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মধ্যে বিভিন্ন সাবজেক্টের মাত্র ১৫ থেকে ২০ জন রয়েছেন।এই ১৫ থেকে ২০ জন চিকিৎসক দ্বারা দেশের ৪৯৫ টি উপজেলা হাসপাতাল চালানোর যুক্তি নিতান্তই হাস্যকর। তাছাড়া ইতিপূর্বে ৩৩ তম বিসিএসের অনেককেই চলতি দায়িত্ব দিয়ে জুনিয়র কনসালটেন্টের দায়িত্ব দেয়া হয়।এর ফলে সরকারের যথেষ্ট আর্থিক সাশ্রয় হয়। সেই হিসেবে ৩৩ তম বিসিএসের ৪৯২ জনকে বঞ্চিত না করে অন্যান্য বিসিএস থেকে চলতি দায়িত্বের মাধ্যমে বিষয়টির সুন্দর সুরাহা সম্ভব।এছাড়া শসহযোগী অধ্যাপক পদে ২ ধাপে ১৩৯৮ সুপার নিউমারি পদোন্নতির সুপারিশ করা হয়েছে। যেগুলা তে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি দিলে কেউ বঞ্চিত থাকার কথা না। ঐতিহাসিক ৫ই আগস্টের প্রেক্ষাপটের পর দেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তর এর উচ্চপদস্থ কর্তা ব্যক্তিদের এই ধরনের হঠকারি ও বৈষম্যমূলক আচরণ কোনভাবেই কাম্য নয়।
তাই , যথা সময়ে আবেদনকৃত অধিদপ্তর কর্তৃক প্রকাশিত ফিট লিস্টের ৩৩ বিসিএস এর সবার নাম মন্ত্রণালয়ে যথা সময়ে প্রেরণ ও ব্যাচ ভিত্তিক সহকারী অধ্যাপক হিসেবে সুপার নিউমারি পদোন্নতি দেওয়ার এই যৌক্তিক দাবি বৈষম্য বিহীন এই নতুন বাংলাদেশে করাটা অত্যান্ত ন্যায় সঙ্গত।
এছাড়া এখানে স্বল্প মেয়াদি (২ বছর) উচ্চতর ডিগ্রি ধারী (ডিপ্লোমা/এম.সি.পি.এস) ও দীর্ঘ মেয়াদী (৫ বছর) গবেষণা সম্পন্ন এম.এস/ এম.ডি/ এফ.সি.পি.এস ডিগ্রি ধারী সবাইকে একই সাথে সহকারী অধ্যাপক পদের জন্য সুপারিশ করা হচ্ছে। যাতে দীর্ঘ মেয়াদি কোর্স করা চিকিৎসক গণ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে গবেষণা সহ অধিক সময় ব্যায় করার পরও ফিট লিস্টে সিরিয়ালে পিছিয়ে পড়ছেন এবং বাদ পড়ার আশংকায় পড়ছেন।
যেটাও এক ধরনের বৈষম্য। ডিপ্লোমা / এম. সি.পি.এস ধারী চিকিৎসক গণের সহকারী অধ্যাপক হতে নিয়মানুযায়ী বাধা না থাকলেও উনাদের অধীনে ট্রেইণী চিকিৎসক দের পোস্ট গ্রাজুয়েশন ট্রেনিং দেশে এবং দেশের বাইরে কোথাও গণ্য হয়না। স্বল্প মেয়াদি কোর্স এর বিশেষজ্ঞ দের অধীনে গবেষণা/ থিসিস করার ও সুযোগ থাকছেনা পোস্ট গ্রাজুয়েট ট্রেইণীদের। যা ভবিষ্যৎ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তৈরির পথে একটা বাধা হয়ে দাড়াবে। তাই প্রয়োজনে ডিপ্লোমা/ এম.সি.পি.এস চিকিৎসক দের জুনিয়র কনসালটেন্ট/সিনিয়র কনসালটেন্ট এরকম পদোন্নতি দিলে উপজেলা /জেলা লেভেলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এর ঘাটতি পুরন হওয়া সম্ভব। আর এম.এস/ এম ডি/এফ সিপিএস ধারী চিকিৎসক গণ একাডেমিক পোস্টে সহকারী অধ্যাপক / সহযোগী অধ্যাপক / অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পাবে। ফলে ভবিষ্যৎ বিশেষজ্ঞ প্রত্যাশী চিকিৎসক দের উচ্চ শিক্ষার দাড় উন্মুক্ত থাকবে। তা না হলে সঠিক মূল্যায়ন এর অভাবে গবেষণা ধর্মী দীর্ঘ মেয়াদী কোর্স করার আগ্রহ হাড়াবেন চিকিৎসক রা। তাছাড়া এতে চান্স পাওয়া ও অনেকে বেশি কঠিন এবং শেষ করাও অনেক কষ্ট সাধ্য। সঠিক মূল্যায়ন না থাকলে এত শ্রম ও সময় ব্যায় , শেষ করতে গিয়ে পদোন্নতি পিছিয়ে পড়ার গ্লানি আকড়ে ধরবে।