জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশের করণীয় ও অগ্রাধিকার: এক নতুন দৃষ্টিভঙ্গি

বিশ্ব আজ এমন এক সংকটের মুখোমুখি, যা প্রতিটি মানুষের জীবনে গভীর প্রভাব ফেলছে-তা হলো জলবায়ু পরিবর্তন। এই সংকট শুধু প্রকৃতির পরিবর্তন নয়, বরং মানুষের জীবনধারা, অর্থনীতি, স্বাস্থ্য, খাদ্যনিরাপত্তা এবং বাসস্থান-সবকিছুতেই এর ছায়া বিস্তার করেছে। বাংলাদেশের অবস্থান ও প্রকৃতি এমন যে, এই পরিবর্তনের প্রভাব এখানে সবচেয়ে বেশি দৃশ্যমান।
প্রতিবছর ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, খরা, অতিবৃষ্টি কিংবা নদীভাঙনের মতো দুর্যোগ জনজীবন বিপর্যস্ত করে তোলে। উপকূলীয় অঞ্চলে লবণাক্ততা বৃদ্ধি, স্বাভাবিক কৃষিকাজে বাধা সৃষ্টি, বিশুদ্ধ পানির সংকট, এবং হাজার হাজার মানুষের বাস্তুচ্যুতি-সবই জলবায়ুর বিরূপ পরিবর্তনের কারণেই হচ্ছে।
বৈশ্বিক উদ্যোগ ও বাংলাদেশের অংশগ্রহণ
বিশ্বের অনেক দেশ একযোগে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জলবায়ু পরিবর্তনের গতিরোধে। পূর্ব নির্ধারিত কার্বন নিঃসরণ কমানো, পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির ব্যবহার এবং ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর সহায়তা নিশ্চিত করার মাধ্যমে একটি সুস্থ পৃথিবী গড়ে তোলার প্রচেষ্টা চলছে।
বাংলাদেশ, যে খুব কম কার্বন নিঃসরণ করে, তবুও জলবায়ু দুর্যোগে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। তাই এই দেশটি আন্তর্জাতিক আলোচনায় কেবল ভুক্তভোগী নয়, বরং সমস্যা সমাধানে কার্যকর ভূমিকাও পালন করছে।
বাংলাদেশের উদ্যোগ
বাংলাদেশ সরকার একাধিক দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য:
জলবায়ু সহনশীলতা বৃদ্ধির জন্য পরিকল্পিত কর্মপন্থা
নতুন প্রযুক্তি ও জ্ঞান কাজে লাগিয়ে দুর্যোগ মোকাবিলা সক্ষমতা বাড়ানো
স্থানীয় জনগণকে অভিযোজনে সহায়তা করা
প্রকৃতিনির্ভর সমাধানে গুরুত্বারোপ
'মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা' এমন একটি উদ্যোগ, যা শুধু দুর্যোগ মোকাবিলায় নয়, একই সঙ্গে টেকসই উন্নয়নের পথও তৈরি করে।
বৈশ্বিক সংস্থার সহায়তা
বাংলাদেশের এই প্রচেষ্টায় আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সহযোগিতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বৈজ্ঞানিক গবেষণা, প্রযুক্তি হস্তান্তর এবং দক্ষতা উন্নয়নের ক্ষেত্রে নানা সংস্থা নানাভাবে সাহায্য করছে। সম্প্রতি পাহাড়ি ও হিমালয় অঞ্চলের জন্য প্রণীত একটি প্রকল্প এই সহযোগিতারই অংশ, যেখানে তথ্যভিত্তিক পরিকল্পনার মাধ্যমে পানির সংকট, বরফ গলা এবং জলবায়ুজনিত দুর্যোগের মোকাবিলার পথ দেখানো হয়েছে।
চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যৎ করণীয়
বাংলাদেশের সামনে এখনও অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে:
উপকূলীয় এলাকায় কৃষির ক্ষতি
স্বাস্থ্যঝুঁকি বৃদ্ধি
বিশুদ্ধ পানির সংকট
অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতি
এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় করণীয় কিছু দিক:
স্থানীয়ভাবে উপযোগী অভিযোজন কৌশল তৈরি
পরিবেশবান্ধব জ্বালানিতে বিনিয়োগ
জলবায়ু শিক্ষার প্রসার
নগর পরিকল্পনায় পরিবেশের গুরুত্ব নিশ্চিত
উন্নত দেশগুলোর প্রতিশ্রুত অর্থ সহায়তা যথাযথভাবে অর্জন করা
জলবায়ু পরিবর্তন আর ভবিষ্যতের নয়, এটি এখনই আমাদের বাস্তবতা। তাই প্রতিটি দেশকে একযোগে ও আন্তরিকভাবে এই সংকট মোকাবিলায় এগিয়ে আসতে হবে। বাংলাদেশ, তার সীমিত সম্পদের মধ্যেও যে নেতৃত্ব দেখাচ্ছে, তা বিশ্ব দরবারে এক সাহসী উদাহরণ।
এখনই সময়, সকলে মিলে-সরকার, নাগরিক, গবেষক ও উন্নয়ন সহযোগীরা-একসঙ্গে একটি সবুজ, সহনশীল ও নিরাপদ ভবিষ্যতের পথ তৈরি করার।
'জলবায়ুর সঙ্গে যুদ্ধ নয়, সহাবস্থানই ভবিষ্যৎ। এখনই উদ্যোগ নিতে হবে-কাল অপেক্ষা করে না।'
