অরক্ষিত সদর রেকর্ডরুম
তেজগাঁও রেজিস্ট্রেশন কমপ্লেক্সে অনিয়ম-দুর্নীতির মহোৎসব
রবিবার সকাল ১০.৩০। তেজগাঁও রেজিস্ট্রেশন কমপ্লেক্সের ২ নং গেট সংলগ্ন চায়ের দোকানে রহিম (ছদ্মনাম) নামে একজনের সাথে কথা হয় বাড্ডা থেকে আসা সুজনের। সুজন এসেছে সাড়ে পাঁচ শতাংশ জমির রেজিস্ট্রি করাতে। জমি সংক্রান্ত যেকোনো কাজ এমনকি কাগজপত্রের সমস্যা থাকা কাজও সমাধান করার কথা জানান নিজেকে সাব-রেজিস্ট্রার এর কাছের লোক পরিচয় দানকারী রহিম। নিজে নিজে করতে চাইলে সেই কাজ একমাসে হবে না বলেও জানান তিনি।
একজন দুজন নয়, রহিমের মত এরকম প্রায় অর্ধশত দালাল রয়েছে পুরো রেজিস্ট্রেশন কমপ্লেক্স জুড়ে। তবে এক্ষেত্রে তাদের সহযোগী হিসাবে বিশেষ ভূমিকা রাখে এক শ্রেণির দলিল লেখক, ওমেদার ও নকলনবিশ। এজলাস রুমের ছোটকর্তা- মেঝোকর্তাদের সাথে আতাত করে কাজ করা এ সমস্ত দালালদের চোখ ফাকি দেয়া সাধারন মানুষের পক্ষে অসম্ভব।
পরিচয় গোপন করে এই প্রতিবেদক সোহেল নামে এক দালালের কাছে দেড় কোটি টাকা সমমূল্যের জমির সাব-কবলা রেজিস্ট্রির খরচ স¤পর্কে জানতে চাইলে সরকারী ট্রেজারি চালান বাদে আরও অতিরিক্ত ২ শতাংশ টাকার কথা জানান তিনি। অতিরিক্ত এ টাকা ছাড়া সাব রেজিস্ট্রার দলিলে সই করবেন না বলেও জানান তিনি। রেজিস্ট্রি অফিসের নিজস্ব জনবল ছাড়া বাইরে থাকা এসব লোকজন এখানে দিনভর দালালি করে।
সদর রেকর্ড রুমসহ তেজগাঁও রেজিস্ট্রেশন কমপ্লেক্সের এগারোটি সাব রেজিস্ট্রি অফিসে একই চিত্র। এর মধ্যে সদর রেকর্ড রুমের অবস্থা বেশ ভয়াবহ। রেকর্ড রুমে ভলিউম যাচাই বা নকল তুলতে সরকারি ফি যৎসামান্য হলেও ঘুষের রেট অনেক বেশি। সর্বনিম্ন ৫ হাজার থেকে ক্ষেত্র বিশেষে ৫০ হাজার, ১ লাখ টাকাও ঘুষ নেয়া হয়। যত পুরাতন ফাইল রেট তত বেশি। এর মধ্যে ২৭০ টাকা আদায় করা হয় সেরেস্তা ফি হিসাবে যা পুরোটাই ঘুস। যার ভাগ চলে যায় সাব রেজিস্ট্রারসহ নকলনবিশ ও তল্লাশিকারকদের পকেটে। রেকর্ড রুমেই সংরক্ষিত থাকে রাষ্টীয় গুরুত্বপূর্ণ বালাম বই। ঢাকা জেলার অন্তর্গত সব সাব রেজিস্ট্রি অফিসের স্থায়ী দলিল বালাম বইয়ে থাকে। অথচ পুরোপুরি অরক্ষিত এই রেকর্ড রুম।
অফিসের নিজস্ব জনবলের বাইরে অন্তত ৩০ থেকে ৪০ জন এ অফিসে বালাম বা ভলিউম তল্লাশির কাজ করে যাদের কোনও নিয়োগপত্র নেই। এমনকি সাব রেজিস্ট্রারের পিওন পরিচয় দেয়া মোহর আলীরও নেই কোন নিয়োগপত্র। একেক জন তল্লাশিকারকের সাথে ৩ থেকে ৪ জন এরকম সহকারী থাকে। এছাড়া মনির হোসেন, ইরফান, মিলন, বেল্লাল, শান্ত, ফাহিম, রিয়াদসহ এরকম বেশ কয়েকজন আছেন যাদের বৈধ কোন কাগজপত্র নেই।
জনসাধারণের প্রবেশ নিষিদ্ধ রেকর্ড রুমে যততত্র বালাম তল্লাশির কাজ করে নিয়োগপত্র বিহীন দালাল শ্রেনীর এ সমস্ত লোকজন। বালাম বই গায়েবসহ বালাম বই এর পাতা পরিবর্তন, পাতা কেটে নতুন পাতা সংযোজন ও পাতায় লেখার মত গুরুতর অপরাধ্মূলক কাজের সাথে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই নিয়োগ বিহীন এই লোকজন জড়িত থাকে। এ বিষয়ে সদর রেকর্ড রুমের দায়িত্বে থাকা সাব রেজিস্ট্রার মাহবুবুর রহমানের সাথে কথা বলতে তার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে নাম্বারটি বন্ধ পাওয়া যায়।