সামসুল হক খান স্কুল অ্যান্ড কলেজে নবীন শিক্ষার্থীদের “হ্যাপি ওরিয়েন্টেশন ২০২৫” উদযাপন

স্টাফ রিপোর্টার
স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২৫ ১৯:২০:১৯

এসো হেসে হেসে পুষ্পিত রথে, এসো ভালোবেসে স্বপ্নের পথে— পঙক্তিদ্বয়ের  আমন্ত্রণ ধারণ করে  ২০২৫–২৬ শিক্ষাবর্ষের একাদশ শ্রেণির নবীন শিক্ষার্থীদের জন্য নিবেদিত  হলো “হ্যাপি ওরিয়েন্টেশন–২০২৫”। প্রাণবন্ত আয়োজন, অনুপ্রেরণামূলক বক্তব্য আর সাংস্কৃতিক আবহে নবীনদের বরণ করে নিল দ্বিতীয় বষের বড়ো আপুরা ও কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

অনুষ্ঠানের সূচনা হয় পবিত্র কুরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে। এরপর কলেজ ইনচার্জ ও গণিত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ মুস্তাফিজুর রহমান তুহিন স্যার নবীনদের উদ্দেশে উষ্ণ স্বাগত বক্তব্য দেন। তিনি বলেন “নতুন শিক্ষার্থীরা এই প্রতিষ্ঠানের প্রাণ। তোমাদের সাফল্যেই আমাদের গৌরব।”
সামসুল হক খান স্কুল এন্ড কলেজের দিবা শাখার সম্মানিত সহকারী প্রধান শিক্ষক মো. আলমগীর হোসেন স্যার বলেন, “আমাদের প্রতিটি শিক্ষার্থীই একটি আলোর দিশারি। তারা শুধু পরীক্ষার ফলাফলের জন্য নয়, জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনের জন্য প্রস্তুত হবে—এটাই সামসুল হক খান স্কুল অ্যান্ড কলেজের মূল লক্ষ্য।”

প্রধান অতিথি মোহাম্মদ আবদুল মাননান, অতিরিক্ত সচিব (অব.) ও চেয়ারম্যান, গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এবং সভাপতি, গভর্নিং বডি, সামসুল হক খান স্কুল অ্যান্ড কলেজ নবীন শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন “শিক্ষা কেবল বইয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং জীবনকে জানার, গড়ার এবং সমাজকে আলোকিত করার সর্বোত্তম মাধ্যম। তোমাদের প্রত্যেককে এই সুযোগ কাজে লাগাতে হবে।

মোবাইল জ্ঞানের আলো দিতে পারে, কিন্তু অযথা ব্যবহারে তা অন্ধকারের কারণ হয়। শিক্ষার সময় মোবাইল যতটা হাতের বাইরে থাকবে, মনোযোগ ততটাই বইয়ের ভেতরে থাকবে। সোশ্যাল মিডিয়ার মোহে আটকে গেলে মেধা হারায় তীক্ষ্ণতা, আর স্বপ্ন হারায় গতি। তাই মোবাইলকে নিয়ন্ত্রণ করতে হব মোবাইল যেন আমাদের নিয়ন্ত্রণ না করে। ডিজিটাল দুনিয়া যদি আসক্তির ফাঁদে ফেলে, তবে বই-কলমই হয়ে উঠবে মুক্তির রাস্তা।”

বিশেষ অতিথি মো. বাহালুল হক চৌধুরী, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নবীনদের বলেন “যে যত শৃঙ্খলাপরায়ণ হবে, সে তত দ্রুত সাফল্যের পথ খুঁজে পাবে। কলেজ জীবনের এই সময়কে তাই সঠিকভাবে কাজে লাগাতে হবে।”

সভাপতির বক্তব্যে ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা স্যার, প্রিন্সিপাল, সামসুল হক খান স্কুল অ্যান্ড কলেজ নবীন শিক্ষার্থীদের দায়িত্ব ও কর্তব্যের প্রতি গুরুত্বারোপ করে বলেন “এই কলেজ শুধু পড়াশোনার জায়গা নয়—এটি নৈতিকতা, নেতৃত্ব ও মানবিকতার স্কুল। আমরা চাই তোমরা একদিন দেশ-বিদেশে আলোকবর্তিকা হয়ে ওঠো। এখানে শুধু পাঠ্যবইয়ের জ্ঞান নয়, শেখানো হয় মানবিকতা, দায়িত্ববোধ, নেতৃত্ব আর দেশপ্রেম। এখানকার প্রতিটি শিক্ষক শিক্ষার্থীর অভিভাবকের মতো, আর প্রতিটি শিক্ষার্থী আমাদের আলোকবর্তিকা। অন্য প্রতিষ্ঠান যেখানে কেবল ফলাফলের দিকে দৃষ্টি দেয়, আমরা সেখানে গড়ে তুলি পূর্ণাঙ্গ মানুষ।”

আরও প্রেরণার কথা  তিনি যোগ করেন “আমাদের শিক্ষার্থীরা শুধু পরীক্ষায় ভালো করবে না, তারা জীবনের পরীক্ষায়ও  ভালো করবে। এখানকার শৃঙ্খলা, নিয়মকানুন, ক্লাব কার্যক্রম, সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতা—সবকিছু মিলিয়ে তোমাদের জীবনকে করে তুলবে বহুমাত্রিক ও সমৃদ্ধ। সামসুল হক খান স্কুল অ্যান্ড কলেজ ব্যতিক্রম কারণ আমরা শুধু ‘শিক্ষার্থী’ তৈরি করি না, আমরা তৈরি করি আগামী দিনের আলোকিত নাগরিক।”

ওরিয়েন্টেশনে নবীন শিক্ষার্থীদের কলেজের বিভিন্ন ক্লাব কার্যক্রম ও কো-কারিকুলার সুযোগ সম্পর্কে জানানো হয়। শিল্প-সাহিত্য বিষয়ক আর্ট এন্ড কালচারাল ক্লাব, ডিবেটিং ক্লাব, আইটি ক্লাব, স্পোর্টস ক্লাবসহ নানা ক্লাবে অংশগ্রহণের গুরুত্বও তুলে ধরা হয় “পড়াশোনার পাশাপাশি সৃজনশীল ও নেতৃত্বগুণ বিকাশে ক্লাব কার্যক্রম অপরিহার্য।”

অনুষ্ঠানের বিভিন্ন পর্বে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অতিথিদের মাঝে প্রাণবন্ত আলোচনা হয়। নবীনদের শুভেচ্ছা কার্ড ও ফুল দিয়ে বরণ করা হয়। পুরো প্রাঙ্গণ সাজানো ছিল বেলুন, পোস্টার ও ব্যানারে। নবীনদের মুখে উচ্ছ্বাস আর শিক্ষকদের মুখে গর্ব—দুটি মিলে তৈরি হয় এক অপূর্ব মিলনমেলা।

আজকের এই নবীনবরণ কেবল একটি অনুষ্ঠান নয়; বরং এক নতুন যাত্রা—যেখানে জ্ঞানের আলো, নৈতিকতার শুদ্ধতা আর স্বপ্নের নক্ষত্রপুঞ্জ মিলে গড়ে উঠবে আগামী দিনের বাংলাদেশ। তোমাদের স্বপ্ন যেন হয়ে ওঠে আমাদের গর্ব, আর আমাদের দিকনির্দেশনা যেন হয়ে ওঠে তোমাদের পথচলার দিশারি। এসো আমরা একসাথে প্রতিজ্ঞা করি শিক্ষার আলোয়, শৃঙ্খলার বন্ধনে, মানবতার পথে এগিয়ে চলব আমরা।