জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বাংলাদেশে অতিবৃষ্টি: বাড়ছে দুর্যোগের ঝুঁকি

মো হাবিবুর রহমান
মো হাবিবুর রহমান
প্রকাশিত: জুলাই ৩০, ২০২৫ ২০:২১:৩৩

জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব বাংলাদেশে দিন দিন প্রকট হয়ে উঠছে। বিশেষ করে অতিবৃষ্টির ঘটনা এখন ঘন ঘন ঘটছে, যা দেশের পরিবেশ ও জনজীবনে বিরূপ প্রভাব ফেলছে। চলতি বর্ষা মৌসুমে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি বৃষ্টি হয়েছে। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে বায়ুমণ্ডলে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেড়েছে, যার ফলে ভারি বর্ষণ এখন প্রায় নিয়মিত একটি ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, জুলাই মাসে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল, বিশেষ করে সিলেট, সুনামগঞ্জ ও মৌলভীবাজার জেলায় গড়ে ৪০ শতাংশের বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। সিলেট শহরে এক সপ্তাহে ৫৫০ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়, যা গত এক দশকে সর্বোচ্চ। এই অতিবৃষ্টির ফলে সিলেট ও পার্বত্য অঞ্চলের বেশ কিছু নিচু এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে, বহু পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়েছে।

অতিবৃষ্টির ফলে শুধু নগরজীবনে জলাবদ্ধতা নয়, গ্রামীণ এলাকায় কৃষি ও অবকাঠামোগত ক্ষতির ঘটনাও বেড়েছে। টানা বৃষ্টির কারণে আমন ধানের বীজতলা নষ্ট হয়ে গেছে অনেক জায়গায়। বৃষ্টির পানি জমে থাকায় চাষাবাদে বিঘ্ন ঘটছে, যা ভবিষ্যতে খাদ্য নিরাপত্তায় প্রভাব ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন কৃষি বিশেষজ্ঞরা।

ঢাকা শহরেও ভারি বৃষ্টির ফলে নানান সড়কে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। রাজধানীর মিরপুর, মোহাম্মদপুর, মালিবাগ, শনির আখড়া ও বাড্ডা এলাকার বাসিন্দারা জানান, একটানা কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতে রাস্তায় হাঁটুপানি জমে থাকে, যানজট ও জনদুর্ভোগ নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।

জলবায়ু বিশেষজ্ঞ ড. ফারজানা কবির বলেন, "জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশে মৌসুমি বৃষ্টিপাতের ধরন পরিবর্তিত হচ্ছে। বৃষ্টির সময় ও পরিমাণ অনিয়মিত হয়ে পড়েছে, ফলে পরিকল্পনা অনুযায়ী কৃষি ও নগর ব্যবস্থাপনা সম্ভব হচ্ছে না।"

বিশেষজ্ঞদের মতে, ভবিষ্যতে এ ধরনের বৃষ্টিপাত আরও বাড়তে পারে এবং তা থেকে বন্যা, ভূমিধস ও রোগবালাইয়ের ঝুঁকিও বহুগুণে বাড়বে। এ সংকট মোকাবিলায় শুধু সরকার নয়, নাগরিক সমাজ, স্থানীয় প্রশাসন এবং আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সম্মিলিত পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি। অন্যথায় ভবিষ্যতের দুর্যোগ আরও ভয়াবহ হতে পারে। তাই এখনই কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি। উন্নত জলনিষ্কাশন ব্যবস্থা, নদীর নাব্যতা রক্ষা, পরিবেশবান্ধব নগর পরিকল্পনা এবং জলবায়ু সহনশীল কৃষি প্রযুক্তির ব্যবহার সময়ের দাবি হয়ে উঠেছে।