মেয়েকে উত্তক্ত্যের প্রতিবাদ করায় বখাটেরা মায়ের মাথাও ফাটাল, পাল্টা মামলাও দিলো

রাজধানীর ভাষানটেক থানার সাগরিকা বস্তিতে এক তরুণীকে (২০) উত্তক্ত্যের প্রতিবাদ করায় মাদকসেবীরা পিটিয়ে মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে তরুণীর মা শিল্পীর (৩৫)। এ বিষয়ে থানায় মামলা করতে গিয়ে পড়েছেন নতুন গোলযোগে। পুলিশ তিন দিন ঘুরিয়ে ভাষানটেক থানা মামলা নিলেও একই ঘটনায় হামলাকারীদের দায়ের করা একটি মামলাও গ্রহণ করেছে। যে মামলায় উত্তক্ত্যের শিকার তরুণীর স্বামীসহ পরিবারের সদস্যদের আসামী করা হয়েছে। ফিরোজখান নামে স্থানীয় এক রাজনৈতিক নেতার ইশারায়।
এছাড়া তরুণীকে উত্তক্ত্যের কোনো অভিযোগ মামলায় উল্লেখ নেই। পুলিশের কথামতোই তারা মামলা লিখেছেন- এ অভিযোগ মামলার (নম্বর৩৫৪(৬)/১) বাদি শিল্পীর। এদিকে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমডি) কমিশনার প্রাথমিক তদন্তের পর মামলা গ্রহণ করতে থানাগুলোকে কঠোর নির্দেশণা দিলেও ভাষানটেক থানা তা মানছে না। মামলার তদন্তকর্মকর্তা ভাষানটেক থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. সেলিম হোসেন শনিবার আজকের সংবাদকে বলেন, তিনি ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্ত করার সময় পাননি, রাতে (শনিবার) গিয়ে তদন্ত করবেন। ফুটেজ দেখবেন ও সাক্ষীদের সঙ্গে কথা বলবেন।
ঘটনাস্থল পরিদর্শনের আগে মামলা গ্রহণ এবং একই ঘটনায় পাল্টা মামলা কতটা আইনসিদ্ধ- এমন প্রশ্ন এড়িয়ে তদন্তকারী বলেন, ‘তদন্ত করে বলতে পারবো কারা দোষী।’ এদিকে প্রভাবশালীদের মামলা গ্রহণের পর গ্রেপ্তার অভিযান চালানো হচ্ছে। ভুক্তভোগী শিল্পী তার পরিবারসহ পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। দারোগার পরামর্শে জামিনের জন্য ঘুরছেন আইনজীবীর দরজায়। অন্যদিকে ভুক্তভোগী পরিবারের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলার বাদী সুমন নামের একজন।
শিল্পীর দাবি, তিনি বাদীকে চিনেন না। ভুক্তভোগী শিল্পীর মামলার প্রাথমিক তথ্য বিবরণী বলছে, গত ২১ জানুয়ারি সাগরিকা বস্তি এলাকায় ‘বেআইনি জনতাবদ্ধে হত্যার উদ্দেশ্যে মারপিট করিয়া সাধারণ ও গুরুতর জখমসহ ভয়ভীতি হুমকি প্রদানের অপরাধ।’ পুলিশ ঘটনার তিন দিন পর গত ২৪ জানুয়ারি একই বিষয়ে দুটি মামলা নেয়। একটির বাদী শিল্পী এবং অপরটির আসামী শিল্পীর পরিবারের সদস্যরা। আহত শিল্পী বলেন, বস্তির ভেতরে অনেকগুলো ঘর। তারা মেয়ে, মেয়ে জামাই, ও স্বামী সন্তান নিয়ে একটি ঘরে ভাড়া থাকেন।
২১ জানুয়ারি কয়েকটি ঘর পরের একটি ঘর থেকে মাদকসেবন করা অবস্থায় কয়েক যুবক বেরিয়ে শিল্পীর মেয়েকে উত্তক্ত্য করলে শিল্পীর ভাগ্নে প্রতিবাদ করে। একপর্যায়ে মেয়ের স্বামী ও শিল্পী ঘটনাস্থলে আসেন। এরপর মাদকসেবীদের আশ্রয়দাতা ঘরের লোকজন দলবলসহ এসে শিল্পীদের মারধর করে। এ সময় শিল্পীর মাথা ফেটে যায়। অন্যরাও আহত হন। এরপর শিল্পী কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। হাসপাতাল থেকে ‘পুলিশ কেইস স্লিপ’ গ্রহণ করেন শিল্পী। পরে থানায় অভিযোগ করলে পুলিশ ২৪ জানুয়ারি মামলা গ্রহণ করে এবং শিল্পী যাদের আসামী করেছে তাদের পক্ষ নিয়ে শিল্পীদের আসামী করে পাল্টা মামলা গ্রহণ করে পুলিশ।
যে মামলায় শিল্পী এখন ফেরারী। আর শিল্পীর মামলার আসামীরা ঘুড়ছেন প্রকাশ্যে। শিল্পী এখন আদালতের বিচারকের দিকে তাকিয়ে আছেন, দাঁড়াবেন জামিনের আশায় আদালতের কাঠগড়ায়। এ বিষয়ে ভাষানটেক থানার ওসি মো. ফয়সাল আজকের সংবাদকে বলেন, যদি কোনো ঘটনা মিস হয়ে যায় সেটি মামলায় অন্তর্ভূক্ত করা হবে।
বিষয়টি গুরুত্বসহকারে তদন্ত করা হবে, কেউ হয়রানির শিকার হবে না।’ শিল্পীর মামলার আসামীরা হচ্ছে- ফিরোজ খান, সজিব খান, রাজিব খান, নূর হোসেন খান, রাবেয়া খাতুন, গফুর খান, সেলিম খান, রহিম খান, রিফাত ও রকিব খান। তবে এ বিষয়ে ফিরোজ খান আজকের সংবাদকে বলেন, ‘আমি ঝগড়ায় যাইনি, মীমাংসা করতে গিয়েছিলাম।’ শিল্পীদের বিরুদ্ধে যে মামলা হয়েছে সেই মামলার বাদী সুমন তার আত্মীয় বলেও জানান তিনি।