শিক্ষকের মৃত্যু : কুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকসহ ৯ ছাত্র বহিষ্কার
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালইয়ের (কুয়েট) ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. মো. সেলিম হোসেনের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদমান নাহিয়ান সেজানসহ ৯ জন ছাত্রকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। ছাত্র শৃঙ্খলা ও আচরণবিধি ভঙ্গ করার অভিযোগে তাদের সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। এদিকে গঠিত ৫ সদস্যের নতুন তদন্ত কমিটি শিগগিরই কাজ শুরু করবে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য।
শনিবার (৪ নভেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাঠানো এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানা গেছে।
কুয়েট কর্তৃপক্ষ প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, কুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. সেলিম হোসেনের অস্বাভাবিক মৃত্যুর বিষয়টি গত ২ ও ৩ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভায় উত্থাপন করা হয়। ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার ফুটেজ ও অন্যান্য তথ্য পর্যালোচনা করে বিষয়টির প্রাথমিক সত্যতা প্রতীয়মান হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রশৃঙ্খলা ও আচরণবিধির আলোকে অসদাচরণের আওতায় সিন্ডিকেট ৯ শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
যাদেরকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে তারা হলেন- সাদমান নাহিয়ান সেজান, সিএসই বিভাগ, রোল-১৩০৭০২৪, তাহামিদুল হক ইশরাক, সিই বিভাগ, রোল-১৫০১০৯০, সাদমান সাকিব, এলই বিভাগ, রোল-১৫১৯০৩৩, আ. স. ম. রাগিব আহসান মুন্না, এলই বিভাগ, রোল-১৫১৯০৪৮, মাহমুদুল হাসান, সিই বিভাগ, রোল-১৬০১০২৯, মোহাম্মাদ কামরুজ্জামান, এমই বিভাগ, রোল-১৬০৫০৩৯, রিয়াজ খান নিলয়, সিএসই বিভাগ, রোল-১৬০৭০৭৫, ফয়সাল আহমেদ রিফাত, এমই বিভাগ, রোল-১৬০৫০৯৩, নাইমুর রহমান অন্তু, এমএসই বিভাগ, রোল-১৬২৭০১০।
মঙ্গলবার (৩০ নভেম্বর) বিকেল ৩টায় মারা যান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রফেসর ড. মো. সেলিম হোসেন (৩৮)। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, তারা আনুমানিক আধা ঘণ্টা ওই শিক্ষকের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন। পরে শিক্ষক ড. সেলিম হোসেন দুপুরে খাবারের জন্য ক্যাম্পাসের কাছে বাসায় যাওয়ার পর ২টায় তার স্ত্রী লক্ষ্য করেন তিনি বাথরুম থেকে বের হচ্ছেন না। পরে দরজা ভেঙে তাকে উদ্ধার করে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
কুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদমান নাহিয়ান সেজানের নেতৃত্বে কিছু সাধারণ ছাত্রের জেরা, অপমান, অবরুদ্ধ করে রাখা ও মানসিক নির্যাতনে তার মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে।
মৃত্যুর ঘটনায় সাধারণ ছাত্ররা বিক্ষুব্ধ হয়ে অপমৃত্যুর অভিযোগ এনে ড. মো. সেলিমের কফিনসহ অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে ভাইস-চ্যান্সেলরের কাছে বিচার চান এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে মামলার জোর দাবি জানান।
শিক্ষক সেলিমের মৃত্যুর ঘটনার প্রতিবাদে দোষীদের চিহ্নিত করে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের দাবিসহ ৫ দফা দাবিতে বৃহস্পতিবার (২ ডিসেম্বর) দুপুরে একাডেমিক কার্যক্রম বর্জন করে শিক্ষক সমিতি। প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে কুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি জানান শিক্ষকরা।
এদিকে শিক্ষকের মৃত্যুর ঘটনা তদন্তে শুক্রবার ৫ সদস্যের নতুন কমিটি গঠন করে কুয়েট কর্তৃপক্ষ। নতুন কমিটিতে ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মহিউদ্দিন আহমেদকে সভাপতি এবং গণিত বিভাগের অধ্যাপক ড. আলহাজ উদ্দিনকে সদস্য সচিব করা হয়। এছাড়া সদস্য করা হয় কুয়েটের অধ্যাপক ড. খন্দকার মাহবুব, খুলনা জেলা প্রশাসকের একজন প্রতিনিধি ও খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারের একজন প্রতিনিধিকে। তদন্ত কমিটিকে ১০ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
কুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক ড. কাজী সাজ্জাদ হোসেন জানান, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ কমিশনারকে শনিবার চিঠি দেওয়া হয়েছে। তারা প্রতিনিধি দিলে শিগগিরই তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করবে।