ঢাবির ‘শতবর্ষে শত গুণীজন’ সম্মাননা গ্রন্থে ভুল ছবি!
‘শতবর্ষে শত গুণীজন’ মরণোত্তর সম্মাননা গ্রন্থে ড. নীলিমা ইব্রাহিমের স্থলে ছেপেছে বেগম মুশতারী শফীর ছবি। গ্রন্থটি প্রকাশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের সংগঠন অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের প্রকাশনা।
এমন কাণ্ডে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। ‘নীলিমা ইব্রাহিমের কোন ছবি নেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে?’ এমন প্রশ্ন ছুঁড়েছেন, সাংবাদিক ও বাঙালিয়ানার সম্পাদক ও প্রকাশক সাগর লোহানী। ফেসবুকে লিখেছেন দীর্ঘ পোস্ট। যেভাবে তিনি লিখেছেন-
“ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য/প্রক্টর/শিক্ষকদের যোগ্যতা নিয়ে প্রচুর হাসি তামাশা হয়েছে, হচ্ছে। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের প্রকাশনা 'শতবর্ষে শত গুণীজন' প্রকাশনায় যখন নীলিমা ইব্রাহিমের নামে মুশতারী শফীর ছবি ছাপা হয়, তখন তাকে সেই অ্যাসোসিয়েশনের কর্মকর্তাদের অযোগ্যতা বলে ছাড় দেয়া যায় না, এটা কর্তাদের অপরাধ, অমার্জনীয় অপরাধ।
তিনি লেখেন, শহীদ জায়া মুশতারী শফী কোনো দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিই হননি। তাঁর ছবি কোথায় পেল অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের মহামহিম রামছাগলেরা? নাকি নীলিমা ইব্রাহিমের কোনো ছবি নেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে?”
শামীমা তন্দ্রা নামে একজন এ বিষয়ে মন্তব্য করে লেখেন, “মনে হয় গুগল থেকে নিতে গিয়ে এই ঝামেলা হয়েছে। গুগলে এই ছবি দেয়া আছে। কর্মকর্তাদের উচিৎ ছিল প্রুফ দেখে নেয়া।”
রুমানা শাফি নামে আরেকজন মন্তব্য করে লেখেন, “আসলেই এই লজ্জা কোথায় লুকাই! এতো ন্যক্কারজনক অপরাধ! তারা দুই জন গুণী মানুষকেই ছোট করলো! সদ্যপ্রয়াত মাকে নিয়ে এতো উপহাস করলো, সাথে করলো নীলিমা ইব্রাহিমকে! এর জবাব অ্যাসোসিয়েশনের কর্মকর্তাদের দেয়া উচিত এবং ক্ষমা চাওয়া উচিত বলে মনে করি।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব রঞ্জন কর্মকার দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, অল্প সময়ের মধ্যে আয়োজন করতে গিয়ে আমাদের অনেক ত্রুটি হয়েছে। নীলিমা ইব্রাহিমের নাম ঠিক আছে, তবে তাঁর স্থলে মুশতারী শফীর ছবি ছাপিয়ে দেয়া হয়েছে। ভুলটি অস্বীকার করার সুযোগ নেই। গ্রন্থটি আরও যত্নসহকারে পর্যালোচনা করা উচিত ছিল।
উল্লেখ্য, নীলিমা ইব্রাহীম বাংলাদেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিক ও সমাজকর্মী। যিনি ১৯৫৬ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ও সংস্কৃত বিভাগে যোগদান করেন এবং ১৯৭২ সালে প্রফেসর পদে উন্নীত হন। তিনি বাংলা বিভাগের প্রধান (১৯৭১-৭৫), বাংলা একাডেমীর অবৈতনিক মহাপরিচালক (১৯৭৪-৭৫) এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলের প্রাধ্যক্ষ (১৯৭১-৭৭)-এর দায়িত্বও পালন করেন। ১৯৭৪-৭৫ সালে তিনি বাংলা একাডেমির অবৈতনিক মহাপরিচালক ছিলেন এবং বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
এ দিকে বেগম মুশতারী শফী একজন বাংলাদেশি সাহিত্যক, উদ্যোক্তা, নারী নেত্রী, সমাজসংগঠক, একাত্তরের স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রের শব্দসৈনিক, বীর মুক্তিযোদ্ধা। যিনি ‘শহীদজায়া’ নামে বেশি পরিচিত। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অনন্য ভূমিকা পালনের জন্য তাকে বাংলা একাডেমি কর্তৃক ২০১৬ সালে ‘ফেলোশিপ’ প্রদান করা হয়। আমৃত্যু তিনি বর্তমানে চট্টগ্রাম উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।