লন্ডনে চিকিৎসার পর
শারীরিক ও মানসিকভাবে অনেকটা সুস্থ' খালেদা জিয়া : ডাঃ জাহিদ

লন্ডনে চিকিৎসার পর ‘শারীরিক ও মানসিকভাবে অনেকটুকু সুস্থ’ আছেন খালেদা জিয়া। মঙ্গলবার দুপুরে গুলশানে ‘ফিরোজা’র সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন একথা জানান।
তিনি বলেন, ‘‘উনি অনেকটা শারীরিক মানসিকভাবে সুস্থ হয়ে লন্ডন থেকে ফেরত এসেছেন। চিকিৎসা পরবর্তিতে উনার(খালেদা জিয়া) শারীরিক অবস্থা আলহামদুলিল্লাহ… অনেকটুকু সুস্থ আছেন। মানসিকভাবেও উনি স্টাবেল (স্থিতিশীল) আছেন।”
‘‘তবে ১৪ ঘন্টার জার্নি এবং রাস্তার এই জার্নির কারণে উনি শারীরিকভাবে একটু অবসন্ন। তারপরও মানসিক ভাবে উনার অবস্থা অত্যন্ত স্থিতিশীল আছে।” খালেদা জিয়ার এই সুস্থতা যাতে অব্যাহত থাকে সেজন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চান অধ্যাপক ডাঃ জাহিদ।
চার মাস লন্ডনে উন্নত চিকিসা শেষে মঙ্গলবার সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে কাতারের আমিরের দেয়া বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকায় হয়রত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে পৌঁছান। সেখানে থেকে গাড়িতে করে তার গুলশানের বাসা ফিরোজায় আসতে দুই ঘন্টারও বেশি সময় লাগে। বিমান বন্দর থেকে গুলশানের বাসায় পর্যন্ত সড়ক পথে দলীয় নেতা-কর্মী-সমর্থকরা প্রচন্ড বিএনপি চেয়ারপারসনের গাড়িবহর ধীর গতিতে এগুতে হয়। এক পর্যায়ে নির্ধারিত রুট পরিবর্তন করে নিরাপত্তা বাহিনী তাকে ফিরোজায় পৌঁছায় বেলা দেড়টায়।
বিএনপির চেয়ারপারসনের জন্য কাতারের ‘রাজকীয় বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্স’ ‘বিনাভাড়ায়’ দেয়ার জন্য কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি এবং কাতার কতৃপক্ষের প্রতি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কতৃজ্ঞতার কথাও জানান তিনি।
অধ্যাপক জাহিদ জানান, বিএনপি চেয়ারপারসন লন্ডনে এক দিন কম চার মাস ছিলেন। সেখানে লন্ডন ক্লিনিকে তার চিকিৎসা হয়েছে। সেখানে লন্ডন ক্লিনিকের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক প্যাট্রিক কেনেডি ও অধ্যাপক জেনিফার ক্রসের নেতৃত্বে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধায়নে চিকিৎসাধীন ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন। টানা ১৭ দিন ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন থাকার পর তিনি ২৫ জানুয়ারি থেকে ছেলে তারেক রহমানের বাসায় ছিলেন।
৭৯ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দীর্ঘ দিন থেকে লিভার সিরোসিস, কিডনি, হার্ট, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিসসহ নানা শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছেন। তিনি উন্নত চিকিৎসার জন্য কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির পাঠানো রাজকীয় বহরের বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্স করে গত ৭ জানুয়ারি লন্ডনে যান।
লন্ডনে উন্নত চিকিৎসার বিষয়ে অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা এবং তার সরকার, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, সশ্বন্ত্র বাহিনী বিভাগ, বিমান কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তাদের প্রতি খালেদা জিয়ার কৃতজ্ঞতা প্রকাশের কথাও জানান জাহিদ।
বিএনপি চেয়ারপারসনকে বিমান বন্দর থেকে গুলশানের বাসায় নিয়ে আসতে বাংলাদেশ সেনা বাহিনী, বিজেবি, পুলিশ, র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, গণমাধ্যমের সংবাদ কর্মীরা যে দায়িত্ব পালন করেছেন সেজন্য তাদের প্রতি দলের চেয়ারপারসন এবং দলের পক্ষ থেকে কতৃজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি।
অধ্যাপক জাহিদ বলেন, ‘‘ ম্যাডামের চিকিৎসাধীন সময়ে লন্ডনে উনার জ্যেষ্ঠপুত্র বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমান ৭ জানুয়ারি উনাকে রিসিভ করা থেকে শুরু করে গতকালকে ৫ মে পর্যন্ত উনি লন্ডন ক্লিনিকের চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় এবং উনার বাসায় উনার পরিবারের সকল সদস্যদের তত্ত্বাবধায়নে বিশেষ করে উনার তিন নাতনির কথা বলতেই হয়… ব্যারিস্টার জায়মা রহমান, জাফিয়া রহমান, জাহিয়া রহমান তারা সব সময় তাদের দাদু আমাদের দেশনেত্রীর বেগম খালেদা জিয়াকে মানসিকভাবে প্রশান্তি আনার জন্য যে দায়িত্ব পালন করেছেন সেজন্য আমরা বিএনপির পক্ষ থেকে তারেক রহমানসহ তাদের কাছে কৃতজ্ঞতা জানাই।”
‘‘একই সঙ্গে ইউকে বিএনপির এমএ মালেক, কয়ছর এম আহমেদসহ সকল প্রবাসী বিএনপির নেতা-কর্মী ছাড়াও অন্যান্য নেতৃবৃন্দ এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশের দলের প্রবাসী নেতা-কর্মীরা বিএনপি চেয়ারপারসেনের চিকিৎসার জন্য যে সহযোগিতা করেছেন এবং দেশবাসী সুস্থতার জন্য দোয়া করেছেন সেজন্য দেশনেত্রী সবার কাছে তার কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। আল্লাহর কাছে আমরা শুকরিয়া জানাই তার রহমতে দেশনেত্রী অনেকটা সুস্থ হয়ে দেশে ফিরে আসতে পেরেছেন।”
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন,অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদার, অধ্যাপক এফএম সিদ্দিক, অধ্যাপক নুর উদ্দিন আহমেদ, ডা. জাফর ইকবাল, ডা. আবদুল্লাহ আল মামুন, বিএনপির আহমেদ আজম খান, আসাদুজ্জামান রিপন, আমান উল্লাহ আমান, লুৎফুজ্জামান বাবর, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, শাম্মী আখতার, নিলোফার চৌধুরী মনি, সাইফ আলী খান, আতিকুর রহমান রুমন, শায়রুল কবির খান, শামসুদ্দিন দিদার, মেহেদী হাসান, বেলায়েত হোসেন, ডাঃ আমান,জাহিদুল ইসলাম রনি, আবদুল মোনায়েম মুন্না, এসএম জিলানী, ,লন্ডন বিএনপির সভাপতি এম এ মালেক, সাধারণ সম্পাদক কয়ছর এম আহমেদসহ কেন্দ্রীয় ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।