কর অঞ্চল ৩/৪৮ সার্কেলের অতিরিক্ত সহকারী কর কমিশনার ও পেশকারের বিরুদ্ধে
কাজল এন্ড কোম্পানীর আয়কর ফাইলের বিপরীতে ৫২ লাখ ঘুষ গ্রহনের অভিযোগ

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এর অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারিদের ঘুষ গ্রহণ এবং প্রতারণার যে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করছে তা দেশ এবং জাতির জন্য এক ভয়াবহ অধ্যায়ের সৃষ্টি। ছাগল কাণ্ডের মতিউরের গল্প শেষ না হতেই বেরিয়ে আসলো অতিরিক্ত সহকারী কর কমিশনার এইচ এম আতাউর রহমান ও পেশকার মেহেদী হাসানের ঘুষ গ্রহণের বিশাল কর্মযজ্ঞ। অফিস খরচের নামে অবৈধ পন্থায় কামাচ্ছেন কোটি কোটি টাকা। ঘুষ বা নজরানা দিলে রাজস্ব কমিয়ে দেওয়ার অভিনব পন্থা বের করেন আতাউর ও পেশকার মেহেদী।
রাজস্ব আদায় যাদের কাজ তারা রাজস্ব কমিয়ে অভিনব পন্থায় লুটে নিচ্ছেন হাজার হাজার কোটি টাকা। বছরে রাজস্ব ঘাটতির এটি একটি বড় কারণ বলে ধারনা বিজ্ঞজনের। ছাগল কাণ্ডের মতিউরকে ছাড়িয়ে যাওয়ার প্রতিযোগিতায় নেমেছেন আতাউর ও পেশকার মেহেদী হাসান। তারা বিভিন্ন কোম্পানির ফাইল আটকে মিথ্যা প্রলোভন দিয়ে রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার পাঁয়তারা, অফিস খরচের নামে করছেন অবৈধ পন্থায় চাঁদাবাজি, কমিয়ে দিচ্ছেন রাজস্ব, টেম্পারিং হচ্ছে প্রয়োজনীয় কাগজ পত্রে, রাষ্ট্র হারাচ্ছে রাজস্ব, অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছেন আতাউর ও মেহেদী, বানিয়েছেন সম্পদের পাহাড়। ঘুষের টাকা দিয়ে করছেন বাড়ি গাড়ি সহ বিলাসী জীবনযাত্রায় যা প্রয়োজন। এরকম নানা অভিযোগ উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে।
অনুসন্ধানে উঠে আসে, পেশকার মেহেদী হাসান, কর অঞ্চল ৩/৪৮ সার্কেলের অতিরিক্ত সহকারী কর কমিশনার এইচ এম আতাউর রহমান এর ঘুষ গ্রহণের প্রধান মাধ্যম হিসেবে কাজ করছে বহুদিন যাবত। এতে পেশকার মেহেদী হাসান গড়ে তুলেছেন ঢাকার মত জায়গায় বিলাসবহুল বাড়ি, কামিয়ে নিচ্ছেন টাকা কারি কারি। কাজল এন্ড কোং প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী শাহাদাত হোসেন কাজল মোল্লার কাছে ইনকাম ট্যাক্স ফাইল কর আইনের পূর্ববর্তী ৭৪এবং বর্তমান ১৭৩ ধারা অনুসারে কর প্রদান করতে হয়না, মর্মে ভুক্তভোগীকে প্রলোভন দেখিয়ে এবং ফাইল লুকিয়ে (গোপন) রাখার কথা বলে ৫২ লক্ষ টাকা ঘুষ গ্রহণ করেন।
কাজল এন্ড কোং এর স্বত্বাধিকারী শাহাদাত হোসেন কাজল মোল্লা আজকের সংবাদ কে জানান, সহকারী অতিরিক্ত কর কমিশনার এইচ এম আতাউর রহমান অফিসের খরচের কথা বলে ভয়ভীতি দেখিয়ে আমার কাছে থেকে বিভিন্ন পর্যায়ে ৫২ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেন। ১৫ জানুয়ারী, ২০২৫ তারিখে, চার লক্ষ টাকার একটি চেক দেই, চেক নং- CD-B 0353577, ওয়ান ব্যাংক মুগদা শাখা, গ্রহণকারী মেহেদী হাসান, স্থান কাজল এন্ড কোং এর অফিস। আর বাকি টাকা মেহেদী হাসানের মাধ্যমে নগদ প্রদান করি। আতাউর রহমান মেহেদী হাসানের সামনেই আমাকে অফিস খরচ বাবদ বিশাল অংকের টাকা দাবি করেন। মেহেদী হাসান আমাকে বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখানোর কারণে আমি সর্বমোট ৫২ লক্ষ টাকা তাদেরকে দিতে বাধ্য হই। তারপরও পরিকল্পিতভাবে আমাকে ফাঁসানোর জন্য তারা নিজেরা আমার দাখিলকৃত কাগজপত্র টেম্পারিং করে কর গোয়েন্দা অফিসে পাঠিয়ে দেয়। তাদের এই অবৈধ কর্মকান্ডে আজ আমার বিশাল সম্মান ও অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে। আমি এর উপযুক্ত বিচার দাবি করছি।
এ বিষয়ে কাজল এন্ড কোং অফিসের অন্যান্য কর্মকর্তা কর্মচারীরা জানান, পেশকার মেহেদী হাসান একাধিকবার আমাদের অফিসে এসেছেন এবং বিভিন্ন সময় টাকা নিয়ে চলে গেছেন তা আমরা জানি এবং দেখেছি। মেহেদী হাসানের অবৈধ কর্মকাণ্ডের বিষয়ে সংবাদকর্মীরা জানতে চাইলে মেহেদী হাসান সাংবাদিকদের হোয়াটস্আ্যাপের মাধ্যমে বিভিন্ন আইনের ধারা এবং আয়কর গোয়েন্দা বিভাগে মামলার হুমকি দেখিয়ে নিউজ বন্ধ করার নতুন কৌশল হাতে নিয়েছেন। অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসা সকল তথ্য উপাত্ত আজকের সংবাদের কাছে সংরক্ষিত রয়েছে। এ বিষয়ে করাঞ্চল ৩/৪৮ সার্কেলের পেশকার মেহেদী হাসান বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগগুলা সব সত্য নয়। আমি কাজল এন্ড কোং এর অফিসে গিয়েছি তবে টাকা-পয়সার লেনদেন এই বিষয়গুলো সঠিক নয়। অতিরিক্ত সহকারি কর কমিশনার এইচ এম আতাউর রহমানের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে আজকের সংবাদ কে বলেন, টাকা পয়সা লেনদেনের বিষয়ে আমার কোন আইডিয়া নাই।