কর্তৃপক্ষ নীরব কেনো, ম্যাজিক কোথায়!
দিনদিন আরো বেপরোয়া ভোক্তা অধিকারের ‘নারীলিপ্সু’ কর্মকর্তা অপূর্ব অধিকারী

বরিশালে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক অপূর্ব অধিকারীর অনিয়ম, দুর্নীতির রাম রাজত্ব চলছে বলে রয়েছে আলোচলা সমালোচনা। দুর্নীতিবাজ বলে নিজ দপ্তরে সুপরিচিত এই কর্মকর্তা যেখানেই দায়িত্ব পালন করতে গিয়েছেন সেখানেই দুর্নীতির পাশপাশি জড়িয়েছেন নারী কেলেঙ্কারিতে এমন আলোচনাও এখন তার দপ্তরের সবার জানা। তার বিরুদ্ধে অভিযোগের যেন শেষ নেই। সর্বশেষ তার প্রথম স্ত্রী তার বিরুদ্ধে যে যৌতুক নিরোধ আইনের ৩ ধারায় অভিযোগ দায়ের করেছেন সেটির অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হলেও তার বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষ নিচ্ছে না কোনো ধরনের ব্যবস্থাই। অভিযোগ আছে, উল্টো মামলা চলমান রয়েছে দাবি করে দিনের পর দিন আরো বেপরোয়া হয়ে উঠছেন নারীলিপ্সু বলে সর্বজন পরিচিত এই কর্মকর্তা। আর ঊর্ধতন কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করেই তিনি ভবিষ্যতে আরো প্রভাবশালী হয়ে উঠবেন বলেও তার একাধিক সহকর্মীর কাছে দাবি কওে থাকেন বলেও রয়েছে আলোচনা।
জানা গেছে, অপূর্ব অধিকারী বেশ কয়েক বছর ধরেই বরিশাল অঞ্চলে দায়িদ্ব পালন করে আসছেন। তার আগে দীর্ঘ সময় ঝিলেন রাজশাহীতে। দায়িত্ব পালনের শুরু থেকেই তার বিরুদ্ধে অনিয়ম. দুর্নীতির অভিযোগ উঠতে থাকে। আগে যেই সমস্ত দপ্তরে দায়িত্ব পালন করেছেন সেখানেও অনিয়ম, দুর্নীতির অভিযোগের পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে নারী কেলেঙ্কারির অভিযোগও উঠতে থাকে। যেখানেই তিনি দায়িত্ব পালন করতে গিয়েছেন সেখানেই কোনো না কোনো নারীকে তার সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কে জড়ানোর প্রলোভন দেখিয়ে নিজের অসৎ উদ্দেশ্য হাসিলের চেষ্টা করেছেন বলে আলোচনা রয়েছে। সর্বশেষ বরিশালের কর্মস্থলে এক নারী সঙ্গে ‘সু-সম্পর্ক’ নিয়ে খোদ তার সহকর্মীরাও বিব্রত এবং অস্বস্তিতে রয়েছেন। পাশপাশি অনিয়ম, দুর্নীতির অভিযোগ তো আছেই। তার স্ত্রীর কাছে বিয়ের দীর্ঘ সময় পর ৩০ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেছেন বলেও রয়েছেন সুনির্দিষ্ট অভিযোগ, যার সত্যতা এরই মধ্যে প্রমাণিতও হয়েছে। এরই মধ্যে মামলা তুলে নিতে তার স্ত্রীকে একাধিকবার হুমকিও দিয়েছেন যা এখন তার কর্মস্থল ও পরিবারের সবাই জানেন। এই নিয়ে ওই নারী নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলেও একাধিক স্বজন স্বীকার করেছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, অপূর্ব অধিকারীর বিরুদ্ধে তার স্ত্রীর কাছে ৩০ লাখ টাকা যৌতুক দাবির অভিযোগের সতত্য প্রমাণিত হয়েছে। তবে মামলাটি এখনো চলমান রয়েছে এবং সাক্ষ্য গ্রহণ চলছে। তবে তার স্ত্রী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, সামাজিক সম্মানের কথা বিবেচনা করে অনেক কিছুই বলতে পারছি না। কারন অপূর্ব সাহেব নানাভাবে আমাকে হয়রানি করার চেষ্টা করছেন। এটি এখন পর্যন্ত সবাই কমবেশি জানে। তবে অভিযোগ যেহেতু প্রমাণিত হয়েছে আমি এই ধরনের মানুষের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ি যথাযথ বিচার চাই। তার সঙ্গে আপোষের কোনো ধরনের প্রশ্নই আসে না। আর তার এত লোভ মেটানোও আমার ও আমার পরিবারের পক্ষে সম্ভব না।
দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র জানায়, অপূর্ব অধিকারীর আচরনে খোদ তার দপ্তরের কর্মকর্তারাই অতিষ্ট। তার বিরুদ্ধে দিনের পর দিন জমছে অভিযোগের পাহাড়। এই ধরনের নারীলিপ্সু কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ি ব্যবস্থা না নেওয়া গেলে প্রাতষ্ঠানটির ভাবমূর্তি দিনদিন ক্ষুন্ন হবে। তিনি যেই সমস্ত দপ্তরে দায়িত্ব পালন করতে যাবেন সেখানে কাজ করতে নিরাপদবোধ করবেন না তার নারী সহকর্মীরা। তাই সার্বিক দিক বিবেচনায় এই বিতর্কিত কর্মকর্তার অপসারণ চান বলে জানান নাম প্রকাশ না করা একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা। তবে তাদের প্রশ্ন এই ধরনের কর্মকর্তার প্রভাব খুটির জোর কোথায়! কোন ম্যাজিকে এই কর্মকর্তারা এখনো রয়েছেন বহাল তবিয়তে।
অভিযোগ তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করা কর্মকর্তা রাজশাহীর বোয়ালিয়া মডেল থানার এসআই ইফতেখার মোহাম্মদ আল আমিন তার প্রতিবেদনে বাদীকে একজন সম্ভ্রান্ত পরিবারের কন্যা দাবি করে বলেন, ২০১৩ সালের ৫ জুলাই সনাতন হিন্দু ধর্মের বিধান মতে তাদের বিয়ে হয়। বিয়ের সময় বাদীর পিতা অপূর্ব অধিকারীকে নগদ অর্থসহ ৩০ লাখ টাকা মূল্যমানের জিনিসপত্র প্রদান করেন। বিয়ের পর তিনি যৌতুকের দাবিতে বাদীর উপর মানসিক নির্যাতন করে আসছেন। এই নিয়ে একাধিক সালিশ বেঠকও অনুষ্ঠিত হয়েছে। ২০২৪ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি দুপুর ১২টায় বোয়ালিয়া মডেল থানা এলাকায় বাদীনির বাবার বাড়িতে বাদীনির বাবা অপূর্ব অধিকারীকে তার কন্যার সঙ্গে সংসার করার জন্য অনুরোধ জানালে অপূর্ব অধিকারী জানান বিয়ের পণ হিসেবে তাকে ৩০ লাখ টাকা যৌতুক দিলে তিনি সংসার করবেন, তা না হলে সংসার করবেন না। ওই সময় উপস্থিত লোকজন তাকে সংসার করার জন্য বারবার অনুরোধ জানালেও তিনি রাজি হননি। তার ৩০ লাখ টাকা চাই ই চাই।
মামলার সার্বিক তদন্তে, ঘটনার পারিশাশ্বিকতায় ও সাক্ষ্য প্রমাণ পর্যালোচনায় জানা গেছে, অপূর্ব অধিকারী অন্যায়ভাবে লাভবান হওয়ার জন্য অসৎ উদ্দেশ্যে বাদিনীকে বিবাহ করে বাদিনীর কাছে যৌতুক দাবি করায় তার বিরুদ্ধে ২০১৮ সালের যৌতুক নিরোধ আইনের ৩ ধারায় অপরাধ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়। সাক্ষীগণ বিজ্ঞ আদালতে হাজির হয়ে সাক্ষ্য প্রদান করে মামলার ঘটনা প্রমাণ করবেন। বাদিনীকে বিধি মোতাবেক তদন্তের ফলাফল জানানো হয়েছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন পুলিশ কর্মকর্তা ইফতেখার মোহাম্মদ আল আমিন।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগের উপ-পরিচালক অপূর্ব অধিকারীর কাছে তার অনিয়ম, দুর্নীতি, নারী কেলেঙ্কারি ও স্ত্রীর করা যৌতুকের মামলার বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি একাধিকবার মোবাইল ফোন রিসিভ করে বারবার জানতে চান কে তার বিরুদ্ধে থাকা অভিযোগগুলো এই সাংবাদিককে জানিয়েছেন। এরপর কোনো ধরনের মন্তব্য না করেই তিনি বারবারই মোবাইলের লাইন কেটে দেন। আর তার বিরুদ্ধে থাকা অভিযোগের বিষয়ে তিনি কোনো ধরনের বক্তব্য প্রদান করেননি। তবে তার মোবাইল থেকেই সহকর্মী পরিচয় দিয়ে এক পর্যায়ে এক কর্মকর্তা নিজের কোন পরিচয় না দিয়েই জানান, চলমান মামলার বিষয়ে জনাব অপূর্ব অধিকারী কোনো ধরনের বক্তব্য করবেন না।