বিমানবন্দরে টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প
প্রধান প্রকৌশলী হাবিবুরের নেতৃত্বে ৯০০০ কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ দুদকে

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ৩য় টার্মিনাল নির্মাণসহ বিভিন্ন বিমানবন্দরসংশ্লিষ্ট প্রকল্পে বর্তমান প্রধান প্রকৌশলী হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বে ৯০০০ কোটি টাকা লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে। বিভিন্ন অজুহাতে প্রকল্পের ব্যয় ৯০০০ কোটি টাকা বৃদ্ধি করে সংশ্লিষ্ট সিন্ডিকেট এই টাকা হাতিয়ে নেয়। এমন লিখিত অভিযোগ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে দুদকের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা আজকের সংবাদকে জানিয়েছেন।
অভিযোগে বলা হয়, ৩য় টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পে জাপানি পরামর্শক NIPPON KOEI প্রণিত কাজের ব্যয় ধরা হয় প্রায় ১৩০০০ কোটি টাকা। কিন্তু কাজের ব্যয় প্রায় ৫৫ শতাংশ বাড়িয়ে ২২,০০০ কোটি টাকায় কোরিয়ার ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান স্যামসাংয়ের সঙ্গে চুক্তি করা হয়। বরাদ্দের অতিরিক্ত প্রায় ৯০০০ কোটি টাকা ঠিকাদারের সঙ্গে যোগসাজশে বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের একজন উচ্চতর কর্মকর্তা, তৎকালীন প্রধান প্রকৌশলী এবং প্রকল্প পরিচালক হাবিবুর রহমান ভাগবাটোয়ারা করেন।
এছাড়া ২,০০০ কোটি টাকা ব্যয়বিশিষ্ট সিলেট ওসমানী ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টের নতুন টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পের টেন্ডারে নন রেসপনসিভ দরপত্র চীনের ‘BUCG’ নামক প্রতিষ্ঠানকে রেসপনসিভ হিসেবে দেখিয়ে কাজ দেন।
প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় দুই বছর হলেও ২০২০ সাল থেকে ২০২৪ সালের শেষ পর্যন্ত- অর্থাৎ প্রায় ৫ বছরে কাজের বাস্তবায়ন অগ্রগতি হয়েছে মাত্র ২২ শতাংশ। এই কাজের লোকাল এজেন্ট হচ্ছেন এরোনেস ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের মালিক মাহবুব আনাম ও লুৎফুল্লাহিল মাজেদ। যারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক সামরিক উপদেষ্টা তারেক সিদ্দিকির ঘনিষ্ঠ বলে তথ্য রয়েছে।
এ প্রকল্পের ঠিকাদারের চেক ইস্যু করেন সিভিল এভিয়েশনের তৎকালীন প্রকল্প পরিচালক ও তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী এবং বর্তমানে প্রধান প্রকৌশলী হাবিবুর রহমান। কক্সবাজার বিমানবন্দরের রানওয়ে সম্প্রসারণ সংক্রান্ত ২টি প্রকল্প এবং নতুন টার্মিনাল সংক্রান্ত একটি প্রকল্পে- অর্থাৎ তিনটি প্রকল্পের দরপত্র এবং কাজে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে প্রকল্পব্যয় দফায় দফায় বাড়িয়ে ঠিকাদারের সাথে যোগসাজশে এই সিন্ডিকেট দুই হাজার কোটি টাকা লোপাট করে বলে অভিযোগ রয়েছে।
৫০০ কোটি টাকা ব্যয়বিশিষ্ট চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়ে প্রকল্প, ৫০০ কোটি টাকার সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর রানওয়ে প্রকল্প, ১০০ কোটি টাকা ব্যয়বিশিষ্ট রাজশাহী শাহমখদুম বিমানবন্দরের টার্মিনাল সম্প্রসারণ প্রকল্প, ৫০০ কোটি টাকা ব্যয়বিশিষ্ট সৈয়দপুর, যশোর ও রাজশাহী এই ৩টি বিমানবন্দরের রানওয়েতে অ্যাস্পাল্ট ওভারলে প্রকল্পসহ নানা প্রকল্প থেকে ৩,০০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে এই তিনজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ৭০০ কোটি টাকা ব্যয়বিশিষ্ট নতুন রাডার রিইনস্টলেশন প্রকল্পে টেন্ডার ছাড়াই ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়। এছাড়াও বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ক্রয়সহ নানা খাতে হরিলুটের অভিযোগ রয়েছে এই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে। এসব অভিযোগের বিষয়ে প্রকল্পের পরিচালক, বর্তমানে প্রধান প্রকৌশলী হাবিবুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি কোনো সদুত্তর দেননি।