সাজানো ছকে রেলে আন্দোলন, পেছনে ‘আওয়ামী লীগ’
অন্তর্বর্তী সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে কলকাঠি নাড়েন ছাত্রলীগের রাব্বানীর শ্বশুড়

হঠাৎ কেন আন্দোলন, কারা এর পেছনে- তা খুঁজতে গিয়ে সরকারের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো আন্দোলনের পেছনে আওয়ামী লীগের চক্রান্তের তথ্য পেয়েছে। তারা বলছেন, অন্তর্বর্তী সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে আওয়ামী লীগের ছকেই এ আন্দোলন। আর এ আন্দোলনকে পেছন থেকে উস্কে দিচ্ছেন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি গোলাম রাব্বানীর শ্বশুড়। ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে রেলে যে আন্দোলন হয়েছিল, সেখানেও তাকে নেতৃত্ব দিতে দেখা গেছে। এসব তথ্য পাওয়া গেছে উল্লেখ করে গোপন প্রতিবেদন সরকারকে দিয়েছে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। সূত্র বলছে, এসব তথ্য নিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাজ করছে। চক্রান্তকারীদের চিহ্নিত করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ রেলওয়ের একজন সাবেক মহাপরিচালকও এ আন্দোলনের আড়ালে একটি রাজনৈতিক পক্ষের সম্পৃক্ততা আছে বলে মনে করছেন। তিনি বলেন, ৩৫ বছর রেলওয়েতে চাকরি করেছেন তিনি। চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন বছর কয়েক আগে। এরকম ঘটনা এর আগে কখনও ঘটতে দেখেননি।
নামপ্রকাশ করতে চাননি সাবেক ওই মহাপরিচালক। তবে বিভিন্ন সময়ে রেলকর্মীদের দাবি-দাওয়া ও কর্মসূচির অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন সময় দাবিদাওয়া নিয়ে কর্মবিরতি যেগুলো হয়েছে, সেগুরো বিচ্ছিন্নভাবে, কয়েক ঘণ্টার জন্য হয়েছে। পুরো একদিনের কর্মসূচি এবারই মনে হয় প্রথম। রেল একটা জরুরি সেবা। এটা মানুষের বিপদের বাহন।’
ওই কর্মকর্তা বলেন, বর্তমান পরিস্থিতির জন্য কর্মকর্তাদের দায় বেশি, কিছুটা দায় আন্দোলনকারী কর্মচারীদেরও আছে। তবে পেছন থেকে যারা এ আন্দোলনের ছক কষেছেন, তাদের শনাক্ত করে শাস্তির মুৃখোমুখি করা জরুরি। রাজনৈতিক ফায়দা হাছিলের উদ্দেশ্যে যে রাজনৈতিক দল বা যারা এ আন্দোলনের ফাঁদে ফেলে হাজার হাজার মানুষকে ঘোগান্তিতে ফেলেছেন, তাদের শাস্তি হওয়া উচিত।
নজিরবিহীন দুর্ভোগের একদিন
দেশজুড়ে মঙ্গলবার দিনভর ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকার নজিরবিহীন একদিন দেখল বাংলাদেশ; ভোগান্তি হল হাজার হাজার মানুষের। আন্দোলনকারীদের সঙ্গে দিনভর বৈঠক শেষে গভীর রাতের বৈঠকে দাবি পূরণের আশ্বাস দেন রেল উপদেষ্টা। এরপর কর্মবিরতি কর্মসূচি তুলে নেওয়ার ঘোষণা আসে।
এ কর্মসূচির কারণে দেশজুড়ে টানা ২৪ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকার ঘটনা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ঘটেনি আর। রাজনৈতিক বা অন্য কোনো কর্মসূচি বা কোভিড মহামারীর মত দুর্যোগে রেল বন্ধ থাকলেও রেলের কর্মীদের কর্মসূচিতে দেশজুড়ে এতটা সময় ট্রেন বন্ধ থাকেনি।
এদিকে সসোমবার মধ্যরাত থেকে শুরু হওয়া কর্মবিরতি প্রত্যাহারের জন্য সরকারের তরফ থেকে বারবার রেলকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানানো হলেও সাড়া পাওয়া না যাওয়ায় তথ্য তালাশ করতে থাকে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। পরে তারা আওয়ামী লীগের সংশ্লিষ্টতার তথ্য-উপাত্ত মিলে।
রেলের কর্মচারীরা বিভিন্ন দাবির কথা তুলে তিনদিন কর্মবিরতির ডাক দেয়। একদিন বন্ধ থাকে রেল চলাচল, বুধবার থেকে ফের শুরু হয়। এতে সারাদেশে নজীরবিহীন ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা।কমলাপুর রেলস্টেশন কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, ট্রেন বন্ধে শুধু কমলাপুরেই আর্থিক ক্ষতি হয় সোয়া কোটি টাকা।
রেলওয়ে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রেলকর্মীদের কর্মবিরতির কারণে দিনভর ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকার ঘটনা বাংলাদেশে নজিরবিহীন।