হাজার কোটি টাকা শুল্ক রেয়াতসহ ড. তাজুলের উচ্চপর্যায়ের তদবির করতেন এইচ টি ইমাম

আওয়ামী লীগ সরকারের আস্থাভাজন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টা এইচ টি ইমামকে হাত করেছিলেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) শুল্ক, রেয়াত ও প্রত্যর্পণ পরিদপ্তরের (ডেডো) অতিরিক্ত মহাপরিচালক ড. মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। আমলা হয়েও ক্ষমতার বলয় চূড়ান্ত করতে তিনি এইচ টি ইমামকে দিয়ে গণভবন, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে বিভিন্ন তদবির করাতেন। এভাবেই রাতারাতি আওয়ামী লীগ আমলে টাকার কুমির হওয়া শিল্পপতি এবং আমলাদের অবলম্বন হয়ে ওঠেন তাজুল।
এই শুল্ক গোয়েন্দা কর্মকর্তার যত বদলি-পদোন্নতি, শিল্পপতিদের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নিয়ে শত শত কোটি টাকা শুল্ক রেয়াতসহ নানামুখী তদবির করে দিতেন এই প্রভাবশালী উপদেষ্টা। যিনি এখন প্রয়াত। এখনো ইমাম পরিবারের সঙ্গে তাজুলের সখ্যতা রয়েছে, প্রয়োজনে তিনি অর্থও সরবরাহ করেন আগের মতৈই। যা তৎকালীন বিশেষ সংস্থাগুলোর গোপন রিপোর্টেও উল্লেখ আছে বলে বিশেষ সূত্রে তথ্য পাওয়া গেছে।
আওয়ামী লীগ প্রভাবশালীদের দুর্নীতি তদন্তের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষ এবং সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ইতোমধ্যে প্রয়াত এইচ টি ইমাম ও তাজুলের ঘনিষ্ঠতার আলামত পেয়েছেন। মিলছে একের পর এক অবৈধ কর্মকাণ্ডের প্রমাণ। এ নিয়ে জুলাই বিপ্লবে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার কাজ করছে বলে জানা গেছে।
গোপন সূত্রে পাওয়া বিভিন্ন সরকারি প্রতিবেদন ও তথ্য-উপাত্ত অনুযায়ী, উপদেষ্টা ইমাম এতো প্রভাবশালী ছিলেন যে, সরকারের ভেতরের-বাইরের অনেকেই— এমনকি মন্ত্রীরাও আড়ালে বলতেন, দেশ চালাচ্ছেন এইচ টি ইমাম। তার ছত্রছায়ায় এনবিআরকেই নয়, বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে তাজুলের প্রভাব ছিল তুমুল, গড়ে তোলেন নিজস্ব বলয়। আমলাদের যে চক্রটি জুলাই বিপ্লবীদের ওপর হত্যাযজ্ঞ চালানোর অর্থায়নসহ বিভিন্ন চক্রান্তের ছক কষতো, তাজুল তাদের অন্যতম বলে উঠে আসছে গোয়েন্দাদের তদন্তে।
প্রভাবশালী মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদও ইমামঘনিষ্ঠতার কারণে তাজুলকে তোষামোদ করতেন। ইমাম যাতে হাছান মাহমুদের বিষয়ে শেখ হাসিনার কাছে সুনাম বলেন, তা নিশ্চিত করতে তাজুলের চাহিদা অনুযায়ী বেশ কয়েকটি বেআইনি কাজ করে দিয়েছেন হাছান মাহমুদ।
তৎকালীন সময়ে তাজুলের বিরুদ্ধে গণমাধ্যমে রিপোর্ট প্রকাশ হলে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ সংশ্লিষ্ট পত্রিকা, অনলাইন পোর্টাল বা টেলিভিশনকে ফোন করে রিপোর্ট বন্ধের অবৈধ নির্দেশ দিতেন। চলছে এসবের তদন্তও।
তাজুলের অপকর্ম নিয়ে রিপোর্ট করায় গোপন নির্দেশে ডিক্লারেশন বাতিল করা হয় দৈনিক ঢাকা প্রতিদিন পত্রিকার। মামলা, হুমকি, হামলা ও পদে পদে হয়রানি করা হয় পত্রিকাটির সম্পাদক ও প্রকাশক এবং সংবাদকর্মীদের।
তাজুলের ক্ষমতা এত পোক্ত ছিল যে, গোটা সাংবাদিক সমাজ মানববন্ধনসহ বিভিন্ন প্রতিবাদ কর্মসূচি করেও তাকে থামাতে পারেনি, বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করাতে পারেনি।
নতুন বাংলাদেশেও তাজুলের ক্ষমতা বহাল থাকায় নানা প্রশ্ন উঠেছে। ভীতির সঞ্চার হয়েছে আওয়ামী লীগের দাপটে দীর্ঘদিন কোনঠাসা থাকা এনবিআর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে।
তারা নামে-বেনামে শত কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের মালিক, সরকারি চাকরির বিধি লঙ্ঘন করে সরাসরি রাজনীতিতে হস্তক্ষেপকারী দুর্নীতিবাজ এই শুল্ক কর্মকর্তার শাস্তি দাবি করেছেন।
এদিকে তাজুলের বিপুল সম্পদ এবং গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিলেছে আজকের সংবাদের অনুসন্ধানে। এছাড়া তার বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন তদন্ত শুরু করেও কেন থেমে যায়, সেই রহস্যের গোপন তথ্যও রয়েছে আজকের সংবাদের কাছে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে কোনো মন্তব্য করছেন না তাজুল। তিনি এখনও বহাল আছেন আগের চেয়ারে। ইতোমধ্যে তাজুল দুর্নীতি অনিয়মের অনেক সরকারি নথি নষ্ট করলেও তার দপ্তরে আওয়ামী লীগ আমলে কর্মরতরা এসব অপকর্মের সাক্ষী। তারা বলছেন, সরকার চাইলে তারা মুখ খুলবেন তাজুলের অপকর্মের বিষয়ে। আজকের সংবাদকে বঞ্চিত কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা বলেন, তারা চান তাজুলমুক্ত, আওয়ামী লীগের দালালমুক্ত, স্বচ্ছ এনবিআর। চলবে