সরকার হারাচ্ছে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব
মোহাম্মদপুর সাব-রেজিষ্ট্রার শাহিন আলম ও পিয়ন জাহাঙ্গীর এর ঘুষ বাণিজ্যর কারণে অতিষ্ট দাতা ও গ্রহিতারা

তেজগাঁও রেজিষ্ট্রি কমপ্লেক্সের লীগ সরকারের আমলে নিয়োগপ্রাপ্ত সাব-রেজিষ্ট্রার শাহিন আলম এর বেপরোয়া ঘুষ, দুর্নীতির অভিযোগ সহ অবৈধ ক্ষমতার দাপট দেখালেও রয়েগেছেন সকল ধরা ছোয়ার বাহিরে। তার অফিসে গড়ে তুলেছেন পিয়ন জাহাঙ্গীরের নেতৃত্বে বিশাল এক সিন্ডিকেট বাহিনী।
সিন্ডিকেটের বাহিরে সহজেই সেবা পাওয়া খুবই কষ্টের ব্যাপার বলে সেখানে নিতে আসা দাতা-গ্রহিতারা আজকের সংবাদ কে জানান। খোজ নিয়ে জানা যায়, সাব-রেজিষ্ট্রার শাহিন আলম এর দেশের বাড়ী ফরিদপুর হওয়াতে লীগ সরকারের আমলে পতিত সরকারের বড় বড় মন্ত্রীদের দোহাই দিয়ে দাপিয়ে বেড়িয়েছিলেন।
স্বৈরাচার সরকার পতন হলেও তার দোসর সাব-রেজিষ্ট্রার শাহিন আলম রয়েগেছেন বহাল তরিয়াতে। মোহাম্মপুর সাব-রেজিষ্ট্রার অফিসে যোগদানের আগে নারায়ণগঞ্জ ফতুল্লা সাব-রেজিষ্ট্রার অফিসে কর্মরত থাকাকালীন ঘুষ, দুর্নীতির স্বর্গরাজ্যে পরিণত করেছিলেন তিনি। ডেভেলপার কোম্পানী ও ভূমি ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব ফাকি দেওয়ার অভিযোগ থাকলে লীগ সরকারের দলীয় মন্ত্রীদের দাপটে সেই সকল অভিযোগ অন্ধকারে ধামাচাপা পড়ে যায়। যা আজও পর্যন্ত আলোর মুখ দেখেনি। সর্বসাকুল্যে ষাট হাজার টাকা বেতন পাওয়া সাব-রেজিষ্ট্রার শাহিন আলম কোটি কোটি টাকার সম্পদেরপাহাড় গড়ে তুলেছেন মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে।
ফরিদপুর আলফাডাঙ্গা উপজেলা ৩নং ওয়ার্ডের র্বাকাইল এলাকায় একটি এক তলা বাড়ী নির্মাণ করেছেন দুই বিঘা জায়গা নিয়ে, যার বাজার মূল্য দুই কোটি টাকার উর্দ্ধে। এছাড়াও বাকাইল এলাকার পাশে বিশ শতাংশ একটি প্লট ক্রয় করেছেন কোটি টাকা দিয়ে। গোপালগঞ্জের কাসিয়ানী উপজেলার ফিংগলিয়া মৌজায় প্রায় দুই একর আতয়তনের জায়গা ক্রয় করে সেখানে মৎস্যচাষ করছেন তার শ্বশুর বাড়ীর এলাকায়। রাজধানী কামরাঙ্গীর চরে চর কামরাঙ্গী মৌজায় তার ভাইয়ের নামে চারশত পছিশ অযুতাংশ জমি ক্রয় করেছেন কোটি টাকা দিয়ে সেখানে ৬ষ্ঠ তলা একটি বিলাশ বহুল বাড়ী নির্মাণ করেছেন।
সরকারের গোয়েন্দা সংস্থা ও দুদকের চোখ ফাকি দেওয়ার জন্য তারই ভাইয়ের নাবালক ছেলে-মেয়ের নামে হেবা দলিল করে দেন, যার দলিল নং-৫৯৮২, রেজিষ্ট্রি খরচ হিসেবে নাম মাত্র খরচ দেখানো হয়েছে। এভাবেই অবৈধ পন্থায় কোটি কোটি টাকার সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন সাব-রেজিষ্ট্রার শাহিন আলম। অপর দিকে তার সিন্ডিকেটের মূল হোতা দীর্ঘদিন একই জায়গায় কর্মরত পিয়ন জাহাঙ্গীর শতকোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। সূত্রে জানা যায়, মোহাম্মদপুর সাব-রেজিষ্ট্রার অফিসের পিয়ন জাহাঙ্গীর এর ঘুষ বাণিজ্যর কারণে অতিষ্ট দাতা ও গ্রহিতারা বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সূত্রে জানা যায়, সাব-রেজিষ্ট্রার শাহিন আলম, পিয়ন জাহাঙ্গীর মোহাম্মদপুর সাব-রেজিষ্ট্রার অফিসকে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দৈনিক লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন রাষ্ট্রীয় রাজস্ব লুট করছেন তারা। পতিত আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে দাপিয়ে বেড়ানো মোহাম্মদপুর সাব-রেজিষ্ট্রার অফিসের পিয়ন জাহাঙ্গীর রয়ে গেছেন সকল ধরা ছোয়ার বাহিরে। দেদারচ্ছে অনিয়ম, দুর্নীতি করে যাচ্ছেন তারা। পিয়ন জাহাঙ্গীর রাজধানী পশ্চিম যাত্রাবাড়ী ৩টি ফ্ল্যাট ক্রয় করেছেন যার বাজার মূল্য কয়েক কোটি টাকা, কাজলা ৫ কাঠা জাগায়গা ক্রয় করেছেন কোটি টাকা দিয়ে। ডেমরা ডগাই ৫ কাঠা প্লট ক্রয় করেছেন যার বাজার মূল্য আনুমানিক ২ কোটি টাকার উর্দ্ধে। তার গ্রামের বাড়ী চাঁদপুর মতলব দক্ষিণ এ ৮০ শতক জায়গার উপরে ১ তলা বাড়ী নির্মাণ করেছেন কয়েক কোটি টাকা খরচ করে। ২২ বছর চাকুরী জীবনে পিয়ন জাহাঙ্গীর এত সম্পদ বানালেন কোন পথে।
এছাড়াও নামে-বেনামে কোটি কোটি টাকার সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন তিনি যার কোন বৈধ ইনকাম দেখাতে পারবেন না, সাব-রেজিষ্ট্রার শাহিন আলম ও পিয়ন জাহাঙ্গীর। একজন সামান্য ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারী হয়ে পাহাড় সমান সম্পদ এর মালিক হলে তিনি, তার কাছে নাকি আলাউদ্দিনের চেরাগ আছে বলে মুখে মুখে শুনা যায় অত্র অফিসের কর্মরত একাধিক ব্যক্তিদের নিকট। যাত্রাবাড়ী এলাকাবাসী জানেন পিয়ন জাহাঙ্গীর সাব-রেজিষ্ট্রার অফিসের মস্ত বড় অফিসার, তার এত সম্পদ দেখে এলাকার মানুষ হতভঙ্গ। পিয়ন জাহাঙ্গীর মোহাম্মদপুরে সাব-রেজিষ্ট্রার অফিসে যোগদানের পর হইতে তাকে আর পিছে ফিরে তাকাতে হয়নি।
পিয়ন জাহাঙ্গীর এর বিরুদ্ধে ভরি ভরি অভিযোগ থাকলেও সাবেক জেলা রেজিষ্ট্রার অহিদুল কে ম্যানেজ করে মোটা অংকের ঘুষের বিনিময়ে সেই সকল অভিযোগ ধামাপাচা পড়ে যায়। বর্তমানে পিয়ন জাহাঙ্গীর দলিল সম্পাদনের কমিশন দলিল করে থাকেন। কমিশনকৃত দলিল দাতা গ্রহিতাদের জিম্মি করে মোটা অংকের টাকা না দিলে বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে দলিল সম্পাদনে বাধাগ্রস্থ করে থাকেন সাব-রেজিষ্ট্রার এর যোগসাজসে। মোহাম্মদপুর সাব-রেজিষ্ট্রার অফিসে সেবা নিতে আসা দাতা-গ্রহিতারা জিম্মি হয়ে পড়েছেন সাব-রেজিষ্ট্রার শাহিন আলম ও ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারীর নিকট। দলিল দাতা ও গ্রহিতাদের কাছ থেকে কাগজপত্র সঠিক নেই সহ বিভিন্ন অজুহাতে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেন তারা।
নাম না প্রকাশের শর্তে ও অফিসে কর্মরত একাধিক নকল, নবিশ এই প্রতিবেদ কে জানান পিয়ন জাহাঙ্গীর, তার কর্মকান্ডে মনে হয় তারা এই অফিসের মস্তবড় অফিসার। অবৈধ টাকার প্রভাবে পিয়ন জাহাঙ্গীর আচারণ এখন প্রশ্নবৃদ্ধ?। নামজারীর ফটোকপি, খাজনার ফটোকপি দিয়ে প্রতিদিন রেজিষ্ট্রি হচ্ছে একাধিক দলিল। বিভিন্ন অজুহাতে অবৈধভাবে হাতিয়ে নিচ্ছে প্রতিনিয়ত লাখ লাখ টাকা। ফলে বৎসরে কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। জানা গেছে, ঢাকা, মোহাম্মদপুর সাব-রেজিষ্ট্রারের অধীনে একই জমি একাধিক বার বিক্রি করে একই অফিস থেকে দালালের মাধ্যমে ভূয়া দলিল সম্পাদন করেছেন বিগত সময় পিয়ন জাহাঙ্গীর।
পিয়ন জাহাঙ্গীর এর নেতৃত্বে কমিশন দলিলের ক্ষেত্রে ঘুষ ছাড়া কোন দলিল হয় না এমনকি নড়েনা ফাইলও। চাহিদা মত ঘুষের টাকা পেলে খাজনা খারিজ ছাড়াই যে কোন জমির দলিল সম্ভব তাদের কাছে। যে কারণে, একই জমি একাধিক বার বিক্রির অভিযোগেরও শেষ নাই। জমি আছে দলিল নেই, আর দলিল আছে জমি নেই এমন অভিযোগও অহরহ পিয়ন জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে। এভাবে অবৈধ পন্থায় শত কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন পিয়ন জাহাঙ্গীর। সাব-রেজিষ্ট্রার শাহিন আলম গংদের অবৈধ সম্পদের বিষয়ে দুদক খোজ-খবর নিলে থলের বিড়াল বেড়িয়ে আসবে বলে মনে করেন মোহাম্মদপুর সাব-রেজিষ্ট্রার অফিসের শতাধিক নকল নবিশ।
উক্ত অভিযোগের সত্যতা জানার জন্য সাব-রেজিষ্ট্রারের মোবাইলে ফোন দিলে ফোন রিসিভ না করায় তার কোন মতামত পাওয়া যায়নি। পিয়ন জাহাঙ্গীরের মোবাইলে ফোন দিয়ে তার বক্তব্য এবং অবৈধ পন্থায় এত সম্পদের মালিক হলেন কোন পথে। তিনি আজের সংবাদকে জানান আপনার আমার বিষয়ে যা পারেন লিখেন আমার কিছুই হবে না, বলে লাইনটি কেটে দেন, যার কলরেকর্ড আজকের সংবাদের হাতে আছে।