বাংলাদেশের খনিজ সম্পদের অপার সম্ভাবনা
বাংলাদেশ খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ একটি দেশ, তবে এর অনেক সম্ভাবনা এখনো অনাবিষ্কৃত আছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অনুসন্ধান এবং উত্তোলনে আরও উদ্যোগ নিলে এই সম্পদ বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস হতে পারে। একই সঙ্গে, চলমান জ্বালানি সংকট নিরসন এবং জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
দেশে ১৬টি জেলায় ১৬ ধরনের খনিজ সম্পদ রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে কয়লা, পিট, কঠিন শিলা, সাধারণ পাথর বা বালু মিশ্রিত পাথর, সিলিকা বালু, সাদামাটি, খনিজ বালু, চুনাপাথর, ধাতব খনিজ এবং লোহার আকরিক।
বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তরের (জিএসবি) তথ্য অনুযায়ী, দেশের প্রাকৃতিক খনিজ সম্পদের মজুদের মূল্য ২.২৬ ট্রিলিয়ন ডলারের বেশি, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ২৪১.৯৭ ট্রিলিয়ন টাকা।
গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ ও মজুদ
খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরোর (বিএমডি) উপ-পরিচালক মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান জানান, আবিষ্কৃত উল্লেখযোগ্য খনিজ সম্পদের মধ্যে কয়লা, কঠিন শিলা, সাধারণ পাথর, বালু মিশ্রিত পাথর, সিলিকা বালু এবং সাদামাটির উত্তোলন চলছে। উপকূলীয় এবং নদী অঞ্চলে, যেমন কক্সবাজার, যমুনা এবং ব্রহ্মপুত্র নদে খনিজ বালু পাওয়া যায়। বড় নদীগুলোতেও মূল্যবান খনিজ বালু রয়েছে, তবে সেগুলো উত্তোলনের উদ্যোগ এখনও সীমিত। স্থানীয়ভাবে কিছু সাদামাটি এবং সিলিকা বালু উত্তোলন করা হচ্ছে।
অনাবিষ্কৃত সম্ভাবনা
জিএসবি কর্মকর্তারা জানান, আবিষ্কৃত খনিজ সম্পদের আর্থিক মূল্য একটি প্রাথমিক অনুমান মাত্র। সম্ভাব্যতা সমীক্ষা সম্পন্ন হলে মজুদের পরিমাণ এবং প্রকৃত আর্থিক মূল্য সম্পর্কে আরও নির্ভুল ধারণা পাওয়া সম্ভব।
জিএসবি পরিচালক মো. আলী আকবর খনিজ সম্পদ অনুসন্ধান এবং গবেষণায় বিনিয়োগ বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি জানান, বার্ষিক বাজেট পাঁচ কোটি টাকারও কম। অথচ এই খাতে প্রতি বছর অন্তত ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রয়োজন। এছাড়া, আধুনিক যন্ত্রপাতি এবং পরিবহন সরঞ্জামের অভাবের কথাও তিনি তুলে ধরেন।
বিস্তারিত মজুদের পরিসংখ্যান
কয়লা: দেশে ৭,৮০৩ মিলিয়ন টন কয়লা মজুদ রয়েছে, যার মধ্যে শুধু বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি থেকে উত্তোলন চলছে। এখানে উৎপাদিত কয়লা দিয়ে ৫২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে।
পিট কয়লা: সম্ভাব্য মজুদ প্রায় ৬০ কোটি টন।
চুনাপাথর: ২,৫২৭ মিলিয়ন টন মজুদ, যার মূল্য ৭৫.৮১ বিলিয়ন ডলার।
কঠিন শিলা: ২০১ মিলিয়ন টন মজুদ, আর্থিক মূল্য ৫৪২ মিলিয়ন ডলার।
সাদামাটি: ২৩০ মিলিয়ন টন মজুদ, আর্থিক মূল্য ২.৯৯ বিলিয়ন ডলার।
কাচবালি: ৫,১১৭ মিলিয়ন টন মজুদ, আর্থিক মূল্য ৬.১৪ বিলিয়ন ডলার।
নুড়িপাথর: ২.২ বিলিয়ন টন মজুদ, আর্থিক মূল্য ৩৩ বিলিয়ন ডলার।
লোহা আকরিক: ৬২.৫ মিলিয়ন টন মজুদ, আর্থিক মূল্য ৬.৮৮ বিলিয়ন ডলার।
খনিজ সমৃদ্ধ জেলা
বাংলাদেশের খনিজ সমৃদ্ধ জেলাগুলোর মধ্যে রয়েছে সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, পঞ্চগড়, লালমনিরহাট, দিনাজপুর, রংপুর, জয়পুরহাট, নেত্রকোনা, ময়মনসিংহ, শেরপুর, কক্সবাজার, কুমিল্লা, বান্দরবান এবং খাগড়াছড়ি।
উল্লেখযোগ্য আবিষ্কার
বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি (দিনাজপুর): ১৯৮৫ সালে আবিষ্কৃত, মজুদ ৩৯০ মিলিয়ন টন।
দিঘীপাড়া কয়লাখনি (দিনাজপুর): ১৯৯৫ সালে আবিষ্কৃত, মজুদ ৭০৬ মিলিয়ন টন।
খালাশপীর কয়লাখনি (রংপুর): ১৯৮৯ সালে আবিষ্কৃত, মজুদ ৬৮৫ মিলিয়ন টন।
ফুলবাড়ী কয়লাখনি (দিনাজপুর): ১৯৯৭ সালে আবিষ্কৃত, মজুদ ৫৭২ মিলিয়ন টন।
জামালগঞ্জ কয়লাখনি (জয়পুরহাট): ১৯৫৯ সালে আবিষ্কৃত, মজুদ ৫,৪৫০ মিলিয়ন টন।
উত্তোলনের চাহিদা ও প্রয়োজনীয়তা
মাহফুজুর রহমান জানান, পার্বত্য অঞ্চলে আরও খনিজ সম্পদ থাকার সম্ভাবনা রয়েছে, তবে তা নির্ধারণে আরও গবেষণা প্রয়োজন। বাংলাদেশে কয়লা উত্তোলনের হার কম এবং তা বাড়ানো হলে জ্বালানি চাহিদা মেটানো সম্ভব।
সাধারণ বালি থেকে প্রতি বছর কয়েক হাজার কোটি টাকা আয় হয়। চুনাপাথরের মজুদ সবচেয়ে বেশি পাওয়া গেছে নওগাঁয়। অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সম্পদগুলোর মধ্যে রয়েছে সিলিকা বালি, সাদামাটি এবং নুড়িপাথর।