টাঙ্গাইল বন বিভাগের জাতীয় উদ্যান রেঞ্জে চলছে হরিলুট ॥ দেখার কেউ নেই
টাঙ্গাইল বন বিভাগের জাতীয় উদ্যান রেঞ্জে চলছে হরিলুট। রেঞ্জের রসুলপুর চানপুর মৌজা থেকে প্রতিদিন দেদারছে গজারি গাছ কেটে মুক্তাগাছা এলাকার ৮-১০ টি ইটভাটায় পোড়ানো হচ্ছে। ফলে এই মৌজায় এক প্রকার বৃক্ষশূন্য হতে চলছে। রেঞ্জের দায়িত্বে নিয়োজিত ফরেস্টার মোশাররফ হোসেনের সাথে বিশেষ আর্থিক চুক্তিতে ইটভাটা মালিকেরা রাতের আঁধারে প্রায় ২০ জন লেবার লাগিয়ে গজারি গাছ কেটে ইটভাটার জ্বালানি সংগ্রহ করছে।
প্রতিরাতেই কয়েক লক্ষ টাকার মূল্যের গজারী গাছ কেটে ইটভাটায় নিয়ে গেলেও সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ নীরব ভূমিকা পালন করছেন। গত প্রায় দেড় মাস ধরে এই বৃক্ষ নিধন চলছে বলছে স্থানীয় সূত্রে অভিযোগ রয়েছে। জানা যায়, ইতোপূর্বে মো: রফিকুল ইসলাম নামের একজন রেঞ্জার এখানের দায়িত্বে থাকলেও সাবেক ডিএফও সাজ্জাদুজ্জামান তাকে সরিয়ে বন মামলা পরিচালক হিসেবে দায়িত্বে দিয়ে দুর্নীতিতে রেকর্ড সৃষ্টিকারী ফরেস্টার মোশারফকে ১০ লাখ টাকার বিনিময়ে এই রেঞ্জে নিয়োগ দেন। অপেক্ষাকৃত জুনিয়র ফরেস্টার মোশাররফকে এই গুরুত্বপূর্ণ রেঞ্জের দায়িত্বে দেবার পর তিনি অবৈধ উপার্জনে মরিয়া হয়ে ওঠেন।
রেঞ্জের কৈয়াপুকুর মৌজার ৫ ফুট বেড়ের ২টি গর্জন গাছ বিক্রি করে দেন ৫ লাখ টাকায়। বনবীথি রেস্ট হাউজের বাউন্ডারীর ভেতরে থাকা ৫ফুট বেড়ের ১৯ টি সেগুন গাছ বিক্রি করেন ১০ লাখ টাকা, চাঁনপুর মৌজা থেকে ইট ভাটা মালিকদের গজারী গাছ কেটে নেয়ার সুযোগ দিয়ে প্রতিরাতেই হাতিয়ে নেন ৫০ হাজার টাকা। এভাবে বৃক্ষ নিধন চলছে গত দেড় মাস ধরে।
ফরেস্টার মোশারফের দুর্নীতি এখানেই শেষ নয়, চলতি আর্থিক সনে সুফল বাগান রক্ষণাবেক্ষণের জন্য এই রেঞ্জে বরাদ্দ দেয়া হয় ৫০ লাখ টাকা। কোন রকম রক্ষণাবেক্ষণ না করেই পুরা টাকা এই ফরেস্টার আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। সুত্রমতে সুফল বাগান পরিদর্শন করলে এর সত্যতা পাওয়া যাবে।
দায়িত্বপ্রাপ্ত এসিএফ আশিকুর রহমানের উদাসীনতায় এই ফরেস্টার দেদারছে চালাচ্ছেন লুটপাট। মাত্র ১০ বছর চাকুরী জীবনে ফরেস্টার মোশারফ বন উজাড়ের মাধ্যমে নিজ জেলা পাবনা শহরে বিলাসবহুল বাড়ী, রাজধানীর উত্তরায় ২টি ফ্ল্যাট, বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে স্ত্রীর নামে মোটা অঙ্কের ডিপোজিট সহ কয়েক কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের মালিক হয়েছেন। প্রতিটি কর্মস্থলেই রেখেছেন লুটপাটের মহোৎসব। যা তার সার্ভিস রেকর্ড পার্যালোচনায় প্রমানিত হবে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বন কর্মকর্তা জানান জাতীয় উদ্যান রেঞ্জের বাকি বনাঞ্চল রক্ষার্থে অবিলম্বে এই দুর্নীতি বাজ ফরেস্টারের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ সরেজমিন তদন্ত করা প্রয়োজন বলে মনে করেন পর্যবেক্ষক মহল।
এ প্রতিবেদকের সাথে আলাপ কালে ফরেস্টার মোশারফ বলেন তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ ঠিক না বলে জানান এবং এক পর্যায়ে উত্তেজিত হয়ে বলেন পোস্টিং নিতে ব্যয় করেছি ১০ লাখ, সুফল বাগান রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বরাদ্দকৃত টাকার অর্ধেকই ডিএফও সাজ্জাদ সাহেব নিয়ে গেছেন। বাকি টাকা দিয়ে যতটুকু পেরেছি রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করেছি। নিয়োগ বাবদ ডিএফওকে দেয়া টাকা এখনো রিকোভারী করতে পারিনি। আমরা ছোট চাকুরী করি বলে সকল অভিযোগ আমাদের বিরুদ্ধে।