গণপূর্ত অধিদপ্তরের সিবিএ নেতা পতিত স্বৈরাচারের দোসর রেজাউল করিম রেজা এখনো ধরা ছোয়ার বাইরে
গণপূর্ত অধিদপ্তর শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের (বি ২০০৫) তথাকথিত সভাপতি রেজাউল করিম রেজা বর্তমানেও গণপূর্ত অধিদপ্তরের একটি আতঙ্ক। প্রধান প্রকৌশলী শামীম আক্তার এবং নির্বাহী প্রকৌশলী শহিদুল আলমের অবৈধ কাজের অন্যতম হাতিয়ার ও সিন্ডিকেট প্রধান এই রেজাউল করিম রেজা।আওয়ামী লীগের ক্যাডার, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিপক্ষে মাঠে নেমে স্লোগান, মিছিল এবং পিকেটিংয়ে অংশগ্রহণকারী তিনি।
আওয়ামী লীগের একনিষ্ঠ কর্মী এবং আওয়ামী লীগ ক্ষমতাকালে সিন্ডিকেটের প্রধান হিসেবে কাজ করেছে সে।বর্তমানেও তার দাপট এবং ক্ষমতা আকাশচুম্বী।অধিদপ্তরের সকল কাজকর্ম নিয়ন্ত্রণ করার জন্য তৈরী হয়েছে রেজা সিন্ডিকেট। এ সিন্ডিকেট নানাবিধ কাজ করে, এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য, চেক জালিয়াতি, প্রতারণার মাধ্যমে চাকরি নেওয়া ও দেওয়া, ঘুষের মাধ্যমে পদোন্নতি, গণপূর্তের বাসা বরাদ্দ দেওয়ার নামে ঘুষ গ্রহণ, বরাদ্দকৃত বাসা বহিরাগতদের ভাড়া দিয়ে বানিজ্য, আর বদলি বাণিজ্যতো আছেই। তিনি সরকারি চাকরি করা সত্ত্বেও ঠিকাদারি লাইসেন্স করে ঠিকাদারি বাণিজ্য নির্বিঘ্নে চালিয়ে যাচ্ছেন।
প্রধান প্রকৌশলীর বিশ্বস্ত অনুচর এই রেজা। তিনি এতোটাই বেপোরোয়া যে কোন কর্মচারী তার কথা না শুনলে গায়ে হাত তোলা এমনকি ভাড়াটে গুন্ডা দিয়ে কুপিয়ে জখম করা যেন তার বা হাতের খেল। গণপূর্ত অধিদপ্তরে রেজার বিরুদ্ধে কথা বল্লে তাকে বদলি করা যেন সময়ের ব্যাপার হয়ে দাড়ায়। সম্প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশনে রেজার বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল হলে কমিশন গত ১১ জুলাই ২০২৪ ১৬৮৪ স্মারকে একটি চিঠি প্রেরণ করে গণপূর্ত অধিদপ্তর বরাবর। চিঠিতে উল্লেখ করা হয় মোহাম্মদ রেজাউল করিম বাংলাদেশ গণপূর্ত অধিদপ্তর শ্রমিক কর্চারী ইউনিয়ন, ঢাকা, এর বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের বিষয়ে সঠিক তদন্ত করে পত্র এবং প্রমাণাদি চায় দুর্নীতি দমন কমিশন । কিন্তু অদ্যবধি সেই চিঠির উত্তর দেয়নি গণপূর্ত অধিদপ্তর, এমনকি রেজাউল করিম রেজার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থাও গ্রহণ করেনি।
গণপূর্ত অধিদপ্তরে হিসাব সহকারী পদে কাজ করেন রেজাউল করিম রেজা। আওয়ামী লীগ সরকার আমলে গত ২৪ আগষ্ঠ ২০২৩ ইং তারিখ দৈনিক ভিত্তিক কর্মচারীদের আবেদনে জানা যায়, রেজা তাদের কাছ থেকে কয়েক লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। তৎসঙ্গে গণপূর্ত শ্রমিক ইউনিয়নের অফিসে ২০থেকে ৩০জন প্রতিদিন খাবার খেত, সেই বাজারের খরচ দৈনিক ভিত্তিক কর্মচারীদের কাছ থেকে নিতেন রেজা। গণপূর্ত বিভাগ- ৪ এ কর্মরত থাকাকালীন চেক জালিয়াতি করে সরকারি টাকা আত্মসাৎ করেন । ঐ সময় নির্বাহী প্রকৌশলী শংকর কুমার মালু তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করেন এবং সত্যতা প্রমাণিত হওয়ায় তাকে তিন মাস সাসপেন্ডসহ বদলি করা হয়। কিন্তু রেজার ক্ষমতার কাছে গণপূর্ত যেন অসহায়। তাই দাপটের সহিত রেজা গণপূর্ত অধিদপ্তরকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে রাজত্ব করে যাচ্ছেন।
এছাড়া বদলির ভয় দেখিয়ে ঘুষ গ্রহণ, কর্মচারীদের বিভিন্ন দাবি- দাওয়া আদায় করার প্রলোভন দেখিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ রেজার নিত্যনৈমত্বিক ঘটনা। গণপূর্ত অধিদপ্তরের ১০৭৭ জন কার্যভিত্তিক কর্মচারীদের নিয়মিত করণের বিষয়ে রেজাউল করিম রেজা (সভাপতি গণপূর্ত শ্রমিক ইউনিয়ন বি- ২০০৫ ) ১,৬৮,০০,০০০ (১ কোটি ৬৮ লক্ষ্য) টাকা ঘুষ হিসেবে গ্রহণ করেন মর্মে তার সহযোগী ক্যাশ সরকার আনোয়ার হোসেন গণপূর্ত বিভাগ-৩ বিভিন্ন দপ্তরে রেজার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করে। এদিকে কার্যভিত্তিক কর্মচারীদের মধ্যে ১৭৯ জনকে নিয়মিত প্রতিষ্ঠানে আনয়ন করার জন্য আদালত রায় দেয়। রেজা এই কর্মচারীদেরকে হুমকি-ধমকি দিয়ে প্রতি জনে ২০.০০০টাকা করে মোট ৩৫,৮০,০০০টাকা আদায়ের পর তা আত্মসাৎ করেন বলে জানা যায় । সুষ্ঠু তদন্ত করলে তা বেরিয়ে আসবে বলে জানায় গণপূর্ত অধিদফতরের একাধিক কর্মচারি।
তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের বিভিন্ন দপ্তরের বদলির হুমকি দেয় এবং বদলি করে প্রত্যেকের নিকট থেকে লক্ষ টাকা আদায় করেনছেন তিনি। রেজাউল করিম রেজা গণপূর্ত অধিদপ্তরের শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি হওয়ার পূর্বে ২৬ ডিসেম্বর ২০১৬ মোখলেসুর রহমান ও মোরশেদুল আলম সোহাগকে হত্যার উদ্দেশ্যে এলিফ্যান্ট রোডে বর্বরোচিত হামলা করে রেজা ও তার বাহিনী। তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সরাসরি হস্তক্ষেপে শাহবাগ থানায় ২৭শে ডিসেম্বর ২০১৬ইং তারিখ মামলা হয়। মামলা নং -১৩/১৯৬ তাতে একনম্বর আসামী করা হয় রেজাউল করিম রেজাকে। তৎকালীন সময়ে গণপূর্ত অধিদপ্তর কর্মচারী শ্রমিক ইউনিয়নের লোকজন বিভিন্ন ব্যানার পোস্টার বানিয়ে তার বিচার দাবি করেছেন। বিভিন্ন পত্রিকায় খবরটি প্রচারিত হলেও রেজাউল করিম রেজার অদৃশ্য ক্ষমতার ইশারায় সে মামলা আর আলোর মুখ দেখেনি।
গত ০৬ মার্চ ২০২৪ ইং তারিখ বাংলাদেশ গণপূর্ত অধিদপ্তর শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন (রেজিস্ট্রেশন বি ২০০৫)এক জরুরী সভায় কার্যকরী সভাপতি মোঃ আনোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে এক বিশেষ জরুরী সভার আয়োজন করা হয়। উক্ত সভায় সকল নেতৃবৃন্দের মতামতের ভিত্তিতে সভাপতি রেজাউল করিম রেজা কে সভাপতির পদ থেকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়। উক্ত বরখাস্তের চিঠিতে স্বাক্ষর করেন মোঃআনোয়ার হোসেন ভারপ্রাপ্ত সভাপতি কেন্দ্রীয় পরিষদ এবং এইচএম মতিউর রহমান মহাসচিব কেন্দ্রীয় পরিষদ বাংলাদেশ গণপূর্ত অধিদপ্তর শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন বি- ২০০৫। এর ফলে বরখাস্ত হওয়া সভাপতি রেজাউল করিম রেজা খুবই ক্ষুব্ধ হন এবং অপমানিত হয়ে প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য গত ১১মার্চ ২০২৪ ইং তারিখ আনুমানিক বিকাল ৩.০০ ঘটিকায় কিছু সংখ্যক কর্মচারী ও বহিরাগত মাস্তান নিয়ে মিছিল করে গণপূর্ত অধিদপ্তর কার্যালয়ে ভাঙচুরসহ অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করে।
এরপরও প্রধান প্রকৌশলী তার বিরুদ্ধে কোন ব্যাবস্থা গ্রহন করেননি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গণপূর্ত শ্রমিক ইউনিয়নের কয়েকজন সদস্য বলেন, রেজা অনেক অন্যায় করেছে অনেক অপরাধ করেছে কিন্তু কোন বিচার হয়নি। এবারও হবে না কারণ গণপূর্ত অধিদপ্তর তার ব্যাপারে চোখ বন্ধ করে রাখে। প্রধান প্রকৌশলী এবং আওয়ামী লীগের দোসর হয়ে এখনো কিভাবে বহাল তবিয়তে আছে তা বোধগম্য নয় অধিদপ্তরের কর্মকর্তা কর্মচারীদের কাছে।