হাতে ছাত্র-জনতার রক্ত, অথচ বহাল তবিয়তে
ডিবি হারুনের শিষ্য পুলিশ কর্মকর্তা লেনিন
কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিখোঁজ হন মাশরুর হাসান নামের একজন ছাত্র। বিষয়টি নিয়ে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করেন ওই ছাত্রের বাবা আবদুল হাসেম ও ভাই মেহেদী হাসান। কিন্তু সবার সামনে দুপুর দুইটার দিকে ডিবির তৎকালীন এডিসি খন্দকার রবিউল আরাফাত লেনিনের নেতৃত্বে ডিবির একটি দল ০৪০২১৫ নম্বর ইঞ্জিনের একটি সাদা মাইক্রোবাসে করে তাদের তুলে নিয়ে যায়। তারপর দেশ স্বাধীন হলেও হাসিনার দোসর এই পুলিশ কর্মকর্তা লেনিন আছেন বহাল তবিয়তে।
ডিবি হারুনের ঘনিষ্ট এই লেনিন বর্তমানে র্যাবে কর্মরত আছেন। মাশরুর হাসানের বাবা ও ভাইকে ডিআরইউ থেকে তুলে নিয়ে যাওয়ার সময় তাদের হাতে একটি লিখিত বিবৃতি ছিল। সেই বিবৃতিতে ভুক্তোভোগীরা বলেন, ২৫ জুলাই মাশরুরকে কয়েকজন সাদা পোশাকের লোক তুলে নিয়েছিল যারা নিজেদেরকে পুলিশের গোয়েন্দা শাখার অফিসার বলে পরিচয় দেয়। এরপর থেকে বিভিন্ন থানা ও চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে খোঁজাখুঁজি করেও তার কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। পরে ডেমরা থানা থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মাশরুর মামা ও দুই চাচাতো ভাইকে তাদের পরিবারে আশ্রয় দেওয়ার জন্য তুলে নিয়ে যায়। পরে সিএমএম আদালত আটকদের কারাগারে পাঠায়। বিবৃতিতে তারা মাশরুর ও তার স্বজনদের মুক্তি দাবি করেন। ডিআরইউ থেকে আটক করার পর পুলিশ কর্মকর্তা রবিউল আরাফাত লেনিন মাশরুর ও তার বাবা-ভাইকে জামায়াতকর্মী হিসেবে অভিহিত করেন। যেন জামায়াতকর্মীদের গুম করা জায়েজ।
ডিবি হারুনের ঘনিষ্ট খন্দকার রবিউল আরাফাত লেনিন:
হাসিনার গুম-খুনের অন্যতম মাস্টারমাইন্ড ডিবি হারুন ছিলেন রবিউল আরাফাত লেনিনের গডফাদার। ডিবি হারুনের আস্কারায় রবিউল আরাফাত লেনিন গুম-চাঁদাবাজি থেকে শুরু করে হেন কাজ নেই যা করেননি। কিন্তু ডিবি হারুন আত্মগোপনে গেলেও লেনিন কীভাবে যেন নিজেকে আড়াল করে ঠিকই বহাল তবিয়তে বর্তমান সরকারের মিশে গেছেন। লেনিনের বিরুদ্ধে বিএনপি নেতা মজনুকে নির্যাতন, যুবদল নেতা রবিউল ইসলাম নয়নের গর্ভবতী স্ত্রীকে এনে নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে। ডিবিতে এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এবং তার ডেমরা টিমের সদস্য কনস্টেবল জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসার অভিযোগও রয়েছে। পুলিশের একটি সুত্র বলছে, এই মাদক ব্যবসার টাকা নিয়মিত ডিবি হারুনের কাছে যেত। ডিবি হারুনের অদৃশ্য হাতের ছোঁয়ায় লেনিন বর্তমানে র্যাবের কর্মরত। যদিও তার বিরুদ্ধে গণহত্যার একাধিক মামলা রয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাধারণ জনগণ কিংবা পুলিশ সদস্য তার বিষয়ে কথা বললে তাদের বিরুদ্ধো নামে- বেনামে অভিযোগ দিতেন পুলিশের বিভিন্ন দপ্তরে। সুন্দরী অভিনেত্রীদের সঙ্গে ডিবি হারুনের যোগাযোগ করিয়ে দিতেন লেনিন। শুরুতে এ কাজের মাধ্যমেই হারুনের কাছাকাছি যান লেলিন। পর্যায়ক্রমে তাদের ঘনিষ্ঠতার মাত্রা নানা অঙ্গনে ডালপালা মেলে। সম্প্রতি ডিবি অফিসের রিমান্ড নিয়ে মাওলানা রফিকুল ইসলাম মাদানির বর্ণনায়ও লেলিনের প্রসঙ্গ উঠে আসে। তদন্ত কমিটির সদস্য হয়েও লেনিন মাওলানা মাদানির গায়ে হাত তোলেন।
লেনিনের অপকর্মের ইতিহাস বেশ পুরনো
২০১৭ সালে দেশের শীর্ষস্থানীয় পত্রিকা প্রথম আলোতে একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়। ‘ডিবির অপহরণ ও চাঁদাবাজি: অভিযোগ করে আরও বিপাকে ব্যবসায়ীরা’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদনের একাংশে বলা হয়, মগবাজার রেলগেট এলাকায় ডিবির 'সোর্স' দাতা) হিসেবে কাজ করেন সোহেল ও মিয়া মো. আমিন। মিয়া মো. আমিন সহকারী কমিশনার (এসি) রবিউল আরাফাত লেনিনের খালাতো ভাই। কোন কোন দোকান থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশা বেশি বিক্রি হয়েছে এই তথ্য সোহেল ডিবিকে জানায়। তখন ডিবির দল ওই ব্যবসায়ীদের তুলে নিয়ে যায়। তাদের টাকা দিয়ে ছাড়িয়ে নিতে মধ্যস্থতা করেন 'সোর্স' মিয়া মো. আমিন।
রবিউল আরাফাতের খালাতো ভাই ও ডিবির সোর্স মিয়া মো. আমিন দাবি করেন, তার ভাই পুলিশে আছেন বলে ব্যবসায়ীরা বিপদে পড়লে তিনি সাহায্য করেন। এসব বিষয় নিয়ে লেনিনের সাথে কথা হলে তিনি জানান, ‘এসব কথা সত্য নয়’।