শেখ সেলিমের আত্নীয় বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদ নেতা
শেখ মুজাক্কা জাহের এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী হতে মরিয়া
বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদ এলজিইডি শাখার যুগ্ন সম্পাদক প্রকৌশলী শেখ মুজাক্কা জাহের প্রধান প্রকৌশলী হতে মরিয়া হইয়ে উঠেছেন। দুদক সহ ২টি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে বিগত লীগ সরকার আমলে কয়েকশো কোটি টাকা ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ থাকলেও তিনি সদ্য সাবেক উপদেষ্টা বরাবরে নানান তদবির অব্যাহত রাখেন। তিনি এই পদোন্নতিতে প্রায় ২০ কোটি টাকা নিয়ে মাঠে নেমেছেন বলেও সংশ্লিষ্ট সূত্রে অভিযোগ রয়েছে। তিনি নিজেকে শেখ পরিবারের সদস্য হিসেবে বিগত স্বৈরাচার সরকার আমলে নিজেকে জাহির করে দেদারসে চালিয়েছেন লুটপাট।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী শেখ মুজাক্কা জাহেরের বিরুদ্ধে প্রকল্পভেদে ৩০ লক্ষ থেকে ১ কোটি টাকা ঘুষ নিয়ে পিডি নিয়োগের পাঁয়তারা করার অভিযোগ উঠেছে। জানা গেছে, নতুন প্রকল্পগুলোতে পিডি নিয়োগ দিয়ে মোটা অংকের ফান্ড সংগ্রহ করে এলজিইডির মেধাক্রম তালিকা ভেঙ্গে প্রধান প্রকৌশলী হওয়ার জন্য দালালদের পিছনে ছুঁটতে শুরু করেছেন তিনি। শুধু তাই নয়, এক সময় হাসিনা পরিবারের শেখ সেলিমের আত্মীয় পরিচয় দিয়ে প্রভাব খাটানোর অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। হাসিনার পতনের পর রাতারাতি তিনি বোল পাল্টে বিএনপি সেজে সিনিয়রদের টপকে প্রদান প্রকৌশলী হওয়ার স্বপ্নে বিভোর।
জানা যায়, গত ২৭ আগস্ট স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের পরিকল্পনা-১ শাখার উপসচিব মো. নুরে আলম স্বাক্ষরিত একটি পত্রে এলজিইডির বিভিন্ন নতুন উন্নয়ন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করার জন্য এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলীকে অনুরোধ জানান। এই চিঠি আসার পর শুরু হয় এই সিন্ডিকেটের দৌঁড়ঝাপ।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলজিইডির কয়েকজন প্রকৌশলী বলেন, পতিত স্বৈরাচার সরকার আমলের সচিব আবহেনা মোস্তফা জামানের আমলে এলজিইডি'র নিয়োগ, বদলী, চলমান ১১৭ টি প্রকল্পে পিডি নিয়োগে গড়ে উঠেছিল ৪ সদস্যের সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেটের অন্যতম সদস্য ছিলেন তদন্তাধীন প্রধান প্রকৌশলী আলী আকতার, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশল শেখ মুজাক্কা জাহের ও তত্ত্বাবধায় প্রকৌশলী (চ:দা:) ও প্রকল্প পরিচালক মঞ্জুর আলী। সচিবসহ এই ৩ প্রকৌশলীর সমন্বয়ে গঠিত সিন্ডিকেটই ঐ সময়ে ১১৭ টি প্রকল্পে পিডি নিয়োগ করতে প্রকল্পের বরাদ্দ বিবেচনায় ৩ কোটি থেকে ৫ কোটি টাকা প্রতিযোগিতামূলক ঘুষ আদায় করতেন। মুজাক্কা জাহের ও মঞ্জুর আলী এই ঘুষ সংগ্রহের পর প্রধান প্রকৌশলীকে গ্রিন সিগনাল দিলেই তিনি প্রস্তাব দিতেন এবং এ্যাপ্রƒভ করতেন সচিব মোস্তফা জামান। অনুরূপ ৬৪ জেলায় নির্বাহী প্রকৌশলী নিয়োগেও জেলার গুরুত্বানুযায়ী ৫০ লাখ থেকে ২ কোটি পর্যন্ত ঘুষ আদায় করা হতো। পিডি বাণিজ্যের কারণে ইতোপূর্বে সৎ এবং মেধাবী প্রকৌশলী প্রকল্প পরিচালক হতে পারতো না। প্রকৌশলীগন আরো বলেন আমাদের ধারণা ছিল এবার বৈষম্যবিরোধী অন্তবর্তীকালীন সরকার থাকার কারণে বোধহয় এ অবস্থা দূর হবে। কিন্তু মুজাক্কা জাহের যা শুরু করেছে তাতে এবারও সৎ এবং মেধাবী প্রকৌশলীদের প্রকল্প পরিচালক হওয়ার স্বপ্ন স্বপ্নই রয়ে যাবে।
অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী শেখ মুজাক্কা জাহের আওয়ামী লীগের লোক হওয়া সত্ত্বেও সরকার পতনের পরপর বোল পাল্টিয়ে বিএনপিপন্থী হয়েছেন। তিনি ২০০৯ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত সাবেক কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ লোক হিসেবে মহা প্রতাপের সাথে শেরপুর জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী ছিলেন। মতিয়া চৌধুরীর ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে মাঠ পর্যায়ের জুনিয়র কর্মকর্তা হয়েও বিশ্বব্যংকের অর্থায়নের ২৭০০ কোটি টাকা ব্যয়ের মিউনিসিপ্যাল গভার্ননেন্স এন্ড সার্ভিসেস প্রকল্পের পিডি নিয়োগ পান। শেখ পরিবারের প্রভাবশালী নেতা শেখ সেলিমের আত্মীয় বলেও প্রভাব খাটাতেন তিনি।
অভিযোগ রয়েছে, পৌরসভা এবং সিটি কর্পোরেশনের অবকাঠামো উন্নয়ন কাজে প্রাক্কলন অনুমোদন, দরপত্র অনুমোদন এবং অর্থ ছাড়ের মাধ্যমে মোট শতকরা ৩-৪ ভাগ টাকা নিতেন বলে জানা গেছে। এছাড়া কনসালটেন্ট ফার্ম নিয়োগের মাধ্যমেও কোটি কোটি টাকা ঘুষ গ্রহণ করেছেন। অভিযোগ রয়েছে, এসব অনিয়ম দুর্নীতি করে তিনি ইতোমধ্যে শতকোটি টাকার অবৈধ সম্পদের মালিক হয়েছেন। তার এই অবৈধ শতকোটি টাকা হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে অবস্থানরত স্ত্রী এবং দুই সন্তানের কাছে পাচার করেছেন। তদন্ত করলে এই মহা দুর্নীতিবাজ প্রকৌশলীর সব দুর্নীতির তথ্য বের হয়ে আসবে।
সূত্র আরও জানিয়েছে, গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর বিএনপিপন্থী প্রকৌশলীদের পদোন্নতি ও বদলি ঠেকাতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন মুজাক্কা জাহের। আওয়ামীপন্থী এলজিআরডি সচিবকে ব্যবহার করে এই কাজ করেছেন তিনি। সচিবকে ম্যানেজ করে গত দেড়মাসে কমপক্ষে দুই শতাধিক সহকারী প্রকৌশলী, সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী, উপজেলা প্রকৌশলী এবং উপ-সহকারী প্রকৌশলীদের বিভিন্ন জেলায় বদলি বাণিজ্য করে। এই বদলি বাণিজ্য করে কোটি কোটি টাকা আয় করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে মুজাক্কা জাহেরের বিরুদ্ধে। প্রতিটি বদলিতে ৫ থেকে ১০ লাখ টাকা করে নেয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। এলজিইডিতে জনশ্রুতি রয়েছে যে, এসব বদলি এবং নিয়োগ বানিজ্য করে সিরিয়াল ভেঙ্গে প্রধান প্রকৌশলী হওয়ার জন্য ফান্ড সংগ্রহ করছেন মুজাক্কা জাহের এবং তার সিন্ডিকেট। সরকার পতনের পরের দিনই স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর জন্য বরাদ্ধকৃত টয়োটা ল্যান্ড ক্রুজার প্রাডো ভি-৮, গাড়ী নং: ঢাকা মেট্রো ঘ-১৩-৬৩১০ দখল করে নেন।
এখন তিনি কয়েকজন সিনিয়রকে টপকে নিজে প্রধান প্রকৌশলী হওয়ার জন্য জোর তদবির অব্যাহত রেখেছেন। এ কাজে তিনি সাবেক মন্ত্রী তাজুল ইসলামের পিএস উপসচিব নাসির চৌধুরী সহ বিএনপি'র কয়েকজন সিনিয়র নেতাকে দিয়ে সদ্য সাবেক উপদেষ্টা কে তদবির অব্যাহত রেখেছিলেন। জানাযায় মন্ত্রণালয় থেকে দুদকের কোন অনাপত্তি পত্র চাওয়া হতে পারে বিধায় তিনি গত ১০ নভেম্বর বিকেলে প্রায় ২ ঘন্টা দুদক কার্যালয়ের অদূরে অবস্থান নিয়ে দুদকের একজন পরিচালকের কাছে তার এক তদবির কারককে পাঠিয়ে অনাপত্তি পত্র নিতে মোটা অংকের টাকা চুক্তি করেন। এতদ্বসংক্রান্তে প্রকৌশলী মোজাক্কা জাহেরের সাথে এ প্রতিবেদকের আলাপকালে তিনি তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগগুলো মিথ্যা বলে দাবি করেন। প্রধান প্রকৌশলী পদে তিনি যথা নিয়মেই পদোন্নতি পাবেন কেউ ঠেকাতে পারবে না বলেও তিনি দম্বোক্তি করেন। তবে গত সরকারের আমলে অবহেলিত প্রকৌশলীদের মতে এলজিইডিতে স্বচ্চতা ফিরিয়ে আনতে এহেন দুর্ণীতিবাজ প্রকৌশলীকে পদোন্নতির পরিবর্তে অবিলম্বে অপসারন করা প্রয়োজন।