শত কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের মালিক
পতিত স্বৈরাচার সরকারের অন্যতম দোসর পিআরএল ভোগকারী যুগ্ম সচিব মাহফুজুল হক রয়ে গেছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে
এ যেন মগের মুল্লুক, দেখার কেউ নেই, যে যেমন পেরেছে সে তেমন করে দুর্নীতির সাজ সেজেছে। দেশে এমন একটি খাত পাওয়া যাবেনা যেখানে ইচ্ছমতো স্বৈরাচারী আমলে স্বৈরাচারী কায়দায় দুর্নীতি, লুটপাট, অনিয়ম হয়নি। যে কারনে বিশ্বের দুর্নীতিবাজ দেশের তালিকায় বাংলাদেশের নাম উপরের দিকেই পাওয়া গেছে। এই মুহূর্তে দেশে দুর্নীতি বাজের নতুন তালিকা করলে মাহফুজুলের নাম সবার উপরে থাকবে বলে অনেকেই মনে করেন।
তিনি ১৯৯৩ সালে প্রশাসন ক্যাডারের নিয়োগ পাবার পর ভোলায় ও সিলেটের সহকারী কমিশনার, গৌরনদী, কেশবপুরের ইউএনও, সাতক্ষীরা ও মুন্সিগঞ্জের এডিসি, নীলফামারীর জেলা প্রশাসক, আইসিটি বিভাগের পরিচালক, তথ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ও যুগ্ন সচিব, নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ও সর্বশেষ পাট অধিদপ্তরের পরিচালক পদে চাকরি করছেন। প্রতিটি কর্মস্থলেই তিনি সীমাহীন দুর্নীতিও লুটপাট চালিয়ে শত কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের মালিক হয়েছেন। যা ঐসকল কর্মস্থলে তার কার্যক্রমের উপর অনুসন্ধান চালালে প্রমানিত হবে বলে কয়েকজন যুগ্ন সচিব জানিয়েছেন।
সাবেক স্বৈরশাসকের অন্যতম দোসর শেখ হাসিনা প্রশাসন ব্যাবহার করে অনৈতিক সুবিধা দিয়ে বারবার ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখার অন্যতম কারিগরদের একজন হলেন এস এম মাহফুজুল হক। তারই সুফল হিসেবে দেশের অন্যতম দুর্নীতি গ্রস্ত প্রতিষ্ঠান বলে চিহ্নিত পাট অধিদপ্তর বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব নিযুক্ত হন তিনি। এছাড়াও আগারগাঁও স্থল বন্দরসহ সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে তিনি চাকরি করেন। সুত্র জানায় এক সময়ের সোনালী আশ খ্যাত প্রতিষ্ঠানটি মাহফুজুল হকের মতো কিছু অসাধু কর্মকর্তার কারণে আলোর মুখ দেখতে পারেনি। সেখানে গত আওয়ামী সরকারের আমলে শত শত কোটি টাকা দুর্নীতি করে ইচ্ছে মতো নিজ আখের গুছিয়েছে তারা। রুগ্ন হয়েছে সরকারি কোষাগার আর আংগুল ফুলে কলাগাছ বনে গেছে মাহফুজুলরা।
প্রজাতন্ত্রের সামান্য একজন কর্মচারী সেটাও ভুলে গিয়েছিলো দলবাজি করতে গিয়ে। এরই মধ্যে নাম প্রকাশ না করার শর্তে মুখ খুলতে শুরু করেছে দপ্তরটির কর্মকর্তা কর্মচারীরা। তারা জানায় দপ্তরের টেন্ডার বানিজ্য থেকে শুরু করে দাপ্তরিক কেনাকাটাসহ সকল কার্যক্রম চলতো তার একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণে। চোখের সামনে কোটি কোটি টাকা লোপাট হচ্ছে জেনেও কারো কিছু করার ছিলোনা। সে নাকি সরাসরি শেখ হাসিনার লোক। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক হিসেবে নিজেকে জাহির করতে বঙ্গবন্ধুর ছবির সাথে নিজের ছবি তুলে ফেসবুকে স্ট্যাটাসও দিতেন।
ইতিমধ্যে প্রতিবেদকের নিকট ছবিসহ বেশ কিছু তথ্য প্রমান এসেছে। সুত্র জানায় এই লীগ কার্ড খেলেই শত কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন মাহফুজুল হক। তার পরিবারের সদস্যদের নামে সম্পদের যে বিবরণ আসছে তাতে প্রশ্ন উঠেছে, সরকারি একজন কর্মকর্তা কী করে এতো বিপুল সম্পদের মালিক হলেন? বিঘার পর বিঘা জমি, নানা জায়গায় ফ্ল্যাট, বিভিন্ন ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান, দেশে-বিদেশে সম্পদ কী নেই তাদের? এই যে শত শত দলিলে বা সরকারি নথিতে নিজের বা পরিবারের সদস্যদের নামে বেনামে তারা এসব সম্পদ গড়লো রাষ্ট্রীয় কোন প্রতিষ্ঠানের নজরে এলোনা কেন? সাভাবিকভাবেই জনমনে প্রশ্ন জাগে তাহলে এই প্রতিষ্ঠানগুলোর কাজ কি বা এত এত অর্থ খরচ করার দরকার কি? অথচ সরকারি চাকরিবিধি অনুযায়ী, বাংলাদেশের সরকারি চাকরিজীবীদের প্রতি পাঁচ বছর পর পর সম্পদের বিবরণ জমা দেয়ার কথা। আবার সরকারি কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া তাদের ব্যবসা করারও কোনো সুযোগ নেই। কোন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী দুর্নীতি করলে দুর্নীতি দমন কমিশনের সেগুলো দেখার কথা। কিন্তু এত সব নিয়ম কানুন যেন কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ! ইতিমধ্যে তার অঢেল সম্পদের কিছু তথ্য এই প্রতিবেদকের হাতে এসেছে।
এস এম মাহফুজুল হক, পদবী- সাবেক পরিচালক (অর্থ ও প্রশাসন) পদ মর্যাদা যুগ্ম-সচিব পাট অধিদপ্তর বস্ত্র ও পাট মন্ত্রনালয়। পিতা- শেখ দবির উদ্দিন আহমেদ, মাতা-জোবেদা খাতুন, তার স্থায়ী ঠিকানা : পুরাতন বাজার মেইন রোড, ওয়ার্ড নং-৫, বাগেরহাট পৌরসভা, থানা ও জেলা: বাগেরহাট। তথ্য প্রমান ঘেটে দেখা যায় মাহফুজুল বর্তমানে পিআরএলে আছেন। ১৯৯৩ সালের ১ এপ্রিল মাহফুজুল যখন চাকরিতে যোগদান করে তখন তার গ্রেড ছিলো ৯ম বেতন ছিলো ২৮৫০ টাকা। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি গ্রেড অতিক্রম করে ২০২৩ সালের ১ নভেম্বর যখন অবসরে যায় তখন তার গ্রেড-৩, বেতন পায় সাকুল্যে ৫৬,৫০০/৭৪,৪০০ টাকা। সে হিসেবে মাহফুজুল হক মোট ৩০ বছর সরকারি চাকরি করেছেন। সেই সুযোগে তার ভাগ্যের চাকাও ঘুরিয়েছেন রকেট গতিতে। কি নেই তার গাড়ী, বাড়ী, ফ্লাট, প্লটসহ কত কি! এখন পর্যন্ত তার ৯ ব্যাংকে একাউন্ট আছে বলে জানা যায় (১) অগ্রনী ব্যাংক জাতীয় প্রেসক্লাব শাখা (২) সোনালী ব্যাংক সচিবালয় শাখা (৩) জনতা ব্যাংক পল্টন শাখা (৪) ন্যাশনাল ব্যাংক বিজয়নগর শাখা (৫) প্রাইম ব্যাংক আসাদগেট শাখা (৬) উত্তরা ব্যাংক আসাদগেট শাখা (৭) ইসলামী ব্যাংক আসাদগেট শাখা (৮) রুপালী ব্যাংক শাখা শ্যামলি হলের পেছনে এছাড়া (৯) উত্তরা ব্যাংক শাখা, একাউন্ট নং-S/AC-১০২৪/১১১/০১১-১৫৭৭৪ আওলাদ হোসেন মার্কেট, মোহাম্মদপুর- ঢাকা। এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে তার বেশ কিছু ফ্লাটের ছবিসহ তথ্য এসেছে (১) বাসা নং-৯/২০, দি টিআরা হাউজ, ফ্লাট নং-৩/৪, ইকবাল রোড, ব্লক-এ, ৪র্থ তলা মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭ এখানে একটি ফ্লাট আছে। যার বর্তমান বাজার মূল্য আনুমানিক প্রায় আড়াই থেকে তিন কোটি টাকা (২) ৯/২৩ ইকবাল রোড, মোহাম্মদপুর, ঢাকা। যার বর্তমান বাজার মূল্য আনুমানিক প্রায় আড়াই থেকে তিন কোটি টাকা (৩) ক্লাসিক হোমস ১০৫/২,তেজকুনি পাড়া, তেজগাঁও, ঢাকা-১২১৫ এখানে তার একটি ফ্লাট যার বর্তমান বাজার মূল্য আনুমানিক প্রায় দুই থেকে আড়াই কোটি টাকা। (৪) আগারগাঁও ২৪/৮, ৪র্থ তলায় ১টি ফ্লাট যার বর্তমান বাজার মূল্য আনুমানিক প্রায় দুই থেকে আড়াই কোটি টাকা। এছাড়াও বিজয় স্বরনি -২ বাড্ডা-১ বনানী-১ মিরপুর-১ গাবতলী টেকনিক্যাল-১ মুন্সিগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক থাকাকালীন একটি ৩লা বাড়ী ও ৩ বিঘা জমি ক্রয়, যশোর ডাক বাংলোর মোড়ে মেইন রোডের সাথে দোকানসহ ১টি ৫তলা বাড়ী ক্রয় করেছেন বলে জানা গেছে। বাগের হাটে নিজ গ্রামে বানিয়েছেন ৪তলা বাড়ী।
এভাবেই প্রশাসনকে অবৈধভাবে ব্যাবহার করে দেশের আনাচে কানাচে নামে বেনামে গড়েছে অন্তত শত কোটি টাকা মূল্যের সম্পদের পাহাড়। এখানেই থেমে যাননি মাহফুজুল, কিনেছেন দামী গাড়িও নম্বর ঢাকা মেট্রো-গ, ৩৪-৬০০৭, যার মূল্য ৪৪,৬৫,৮০০ টাকা। এসকল বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি প্রতিবেদককে বলেন আমার অনেক সম্পদ বিভিন্ন ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে করা যা ইনকাম ট্যাক্স ফাইলে উল্লেখ করা আছে বাকিটা উদ্দেশ্য প্রনোদিত।