মেডিসিনের পরিবর্তে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা

দীর্ঘমেয়াদি বাত- ব্যথা, আর্থ্রাইটিজ ও প্যারালাইসিসে আক্রান্ত রোগীদের সুনির্দিষ্ট কোনো পরিসংখ্যান আমাদের বাংলাদেশে নেই। তবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় বা পি জি হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, জাতীয় অর্থোপেডিক পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান (নিটোর) বা পঙ্গু হাসপাতাল, সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল এ ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা নিতে হাজার হাজার মানুষ ভিড় করছে দিনকে দিন।
ওষুধের ব্যবহার কমিয়ে বাত-ব্যথা, আর্থ্রাইটিজ, প্যারালাইসিস, জম্মগত প্রতিবন্ধি ও বিকলাঙ্গ শিশু এবং পঙ্গুত্বসহ বিভিন্ন অসংক্রামক ব্যাধিতে আক্রান্তদের পুনর্বাসনে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা পদ্ধতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বিশ্বজুড়ে এ চিকিৎসা পদ্ধতির চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। বাংলাদেশেও এ চিকিৎসা পদ্ধতি দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতে, বাত – ব্যথা, আর্থ্রাইটিজ ও প্যারালাইসিসের চিকিৎসায় কিছু ভিটামিন ছাড়া হাড়, জোড়া ও মাংশপেশীর ব্যথানাশক যেসব ওষুধ ব্যবহার করা হয়, সেগুলোর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় পেপটিক আলসারসহ কিডনি, লিভার, হার্ট, ব্রেইন পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
এ কারণে এসব ওষুধ দীর্ঘদিন সেবন করলে স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ে। তাই বাত-ব্যথা, আর্থ্রাইটিজ ও প্যারালাইসিস চিকিৎসায় ফিজিওথেরাপিই বর্তমানে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন একমাত্র উন্নত ও সমুন্নত চিকিৎসা পদ্ধতি হয়ে উঠেছে। ব্যথায় আক্রান্ত ৫০ থেকে ৮০ শতাংশ মানুষ সঠিক চিকিৎসা পাচ্ছেন না বলে মনে করেন সংশ্নিষ্টরা। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক গবেষণায় দেখা গেছে, বয়স্ক জনগোষ্ঠীর প্রতি পাঁচজনে একজন মানুষ দীর্ঘমেয়াদি ব্যথায় ভুগছে। ব্যথায় আক্রান্ত ৫০ শতাংশ মানুষকে জোরপূর্বক কাজে অংশ নিতে হচ্ছে।
আক্রান্তদের একটি বড় অংশ আংশিক অথবা পুরোপুরি প্রতিবন্ধিতায় ভুগছে। এ বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে হবে। প্রফেসর ডাঃ মোঃ আবু সালেহ আলমগীর বি পি টি, এম ডি, এম পি এইচ, এম ডি এম আর, পি এইচ ডি। কনসালটেন্ট ও বিভাগীয় প্রধান ফিজিওথেরাপি এন্ড রি-হ্যাবিলিটেশন বিভাগ ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল, মতিঝিল , ঢাকা। বলেন মানুষের নতুন, পুরাতন ও দীর্ঘমেয়াদী বাত-ব্যথা,আর্থ্রাইটিজ ও প্যারালাইসিসের চিকিৎসায় দিন দিন ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
ওষুধের পরিবর্তে অনেকেই এখন ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা গ্রহণে আগ্রহ প্রকাশ করছেন। বাত-ব্যথা, আর্থ্রাইটিজ, প্যারালাইসিসের মত অসংক্রামক রোগের পাশাপাশি প্রতিদিন সড়ক দুর্ঘটনা, প্রাকৃতিক ও মনুষ্য সৃষ্ট দুর্যোগ দিন দিন বেড়ে চলছে। এতে করে দিন দিন আক্রান্ত ডিজএ্যাবল জনিত রোগীদের দীর্ঘস্থায়ী পুর্নবাসন চিকিৎসায় ফিজিওথেরাপি ক্রমেই জনপ্রিয় হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক গবেষণায় বলা হয়েছে, শুধু শারীরিক কার্যক্রম বাড়িয়ে ৩৫-৪০ শতাংশ মৃত্যু প্রতিরোধ করা সম্ভব। কিন্তু মানুষ শারীরিক পরিশ্রম ও ব্যায়াম করে না। এ কারণে নানা রোগ ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার প্রসার জরুরি।
প্রফেসর ডাঃ মোঃ আবু সালেহ আলমগীর বলেন, দিন দিন ইউরোপ-আমেরিকা সহ বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা পদ্ধতি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। কারণ, মেডিসিন বা ওষুধের ব্যবহার কমিয়ে বিভিন্ন আধুনিক মেশীনারীজ ও শারীরিক কার্যক্রম এবং রোগ ভিত্তিক ব্যায়ামের মাধ্যমে সুস্থ ও সচল জীবনযাপন করা সম্ভব। বাত- ব্যথা, আর্থ্রাইটিজ ও প্যারালাইসিস, ব্যাক-পেইন বা ঘাড়, পিঠ ও কোমর, পক্ষাঘাত গ্রস্থ ও মস্তিস্কে রক্তক্ষরণ জনিত সমস্যায় আক্রান্ত রোগীদের ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা নেওয়া প্রয়োজন।
এসব সমস্যায় আক্রান্তরাই ফিজিওথেরাপির জন্য ভিড় করছে। এই ভিড় সামলাতে সংশ্নিষ্টদের হিমশিম খেতে হচ্ছে ১৯১৩ সালে নিউজিল্যান্ডের একদল স্বাস্থ্যকর্মী চিকিৎসা সেবায় প্রথমবারের মতো ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা পদ্ধতির ব্যবহার শুরু করেন। এরপর বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি উন্নত বিশ্বে পঙ্গুত্ব ও প্যারালাইসিস চিকিৎসায় ফিজিওথেরাপি স্থান করে নেয়। এরপর ধাপে ধাপে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসায় হাইড্রোথেরাপি, ক্রায়োথেরাপি ও কাইনেশিওলজি এবং থেরাপিউটিক এক্সারসাইজ যুক্ত হয়। ১৯৮০ সালের দিকে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসায় ইলেকট্রোথেরাপি যুক্ত হয়। এভাবেই বাতের ব্যথা, প্যারালাইসিস, স্পোর্টস ইনজুরিসহ পঙ্গু ব্যক্তিদের পুনর্বাসনে চিকিৎসা বিজ্ঞানের অন্যতম শাখা হিসেবে স্থান করে নেয় ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা। ১৯৬০ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে অধ্যাপক ডাঃ আবুল হোসেনের হাত ধরে বাংলাদেশে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা আত্মপ্রকাশ করে।
ওই বছরই রাজধানীর সেগুন বাগিচায় প্রথম প্রতিবন্ধী শিশুদের পুনর্বাসনের জন্য ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু হয়। মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের লক্ষ্যে পঙ্গু হাসপাতালে ফিজিওথেরাপি বিভাগ এর সঙ্গে ফিজিওথেরাপি বিষয়ে ব্যাচেলর কোর্স চালু করা হয়। এই পেশার চিকিৎসকরা বাত-ব্যথা, আর্থ্রাইটিজ, প্যারালাইসিস, স্পোর্টস ইনজুরি, অটিজমসহ অন্যান্য নিউরো ডেভেলপমেন্টাল ডিজঅর্ডার, স্ট্রোক, অসংক্রামক ব্যাধি, অর্থোপেডিকস কন্ডিশন, নিউরোলজিক্যাল কন্ডিশন, স্পোর্টস ইনজুরি কন্ডিশন ও প্রতিবন্ধিতার পুর্নবাসনে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা প্রদান করে আসছে।
বর্তমানে সরকারি ও বেসরকারিভাবে দেশে দশটি প্রতিষ্ঠানে ফিজিওথেরাপি বিষয়ে বি পি টি বা ব্যাচেলর অব ফিজিওথেরাপি কোর্স চালু আছে। এসব প্রতিষ্ঠানে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী ও প্রায় পাচ হাজার পেশাদার ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক রয়েছেন। আশির দশকে অধ্যাপক ডা. কামরুল ইসলাম বিএসএমএমইউতে ফিজিক্যাল মেডিসিনে এফসিপিএস কোর্স চালু করেন। এর পর থেকেই ফিজিক্যাল মেডিসিন চিকিৎসক ও ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকদের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। যারা ফিজিক্যাল মেডিসিন এন্ড রি-হ্যাবিলিটেশন চিকিৎসক তাদের ব্যাসিক হচ্ছে এম বি বি এস । কিন্তু ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকদের ব্যাসিক হচ্ছে ফিজিওথেরাপির উপর ব্যাচেলর কোর্স।
যারা ফিজিক্যাল মেডিসিন ও রিহ্যাবিলিটেশন চিকিৎসক তাদের রেজিস্ট্রেশন নিতে হচ্ছে বি এম ডি সি হতে। কিন্তু ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকদের রেজিস্ট্রেশনের জন্য রয়েছে বাংলাদেশ রিহ্যাবিলিটেশন কাউন্সিল বা বি আর সি। একজন ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক ফিজিওথেরাপি উপর ব্যাচেলর কোর্স সম্পন্ন করার পর এর উপর পোস্ট গ্রাজুয়েশন, মাস্টার্স ও পি এইচ ডি ডিগ্রি করছেন। অন্যদিকে ফিজিক্যাল মেডিসিন ও রিহ্যাবিলিটেশন চিকিৎসার উপর কোন ব্যাচেলর কোর্স নেই। এর ব্যাসিক হচ্ছে এম বি বি এস। এর পর করছেন এফ সি পি এস । এর পর এর উপর আর কোন কোর্স বা পড়াশোনা তারা করতে পারছেন না। অভিজ্ঞতা ও যোগ্যতা হল দুই হতে তিন বছরের এপ সি পি এস কোসই। অন্য দিকে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক পাচ বছর মেয়াদি ব্যাচেলর কোর্স সম্পন্ন করে এর উপর দুই বছর মেয়াদি মাস্টার্স কোর্স করে তিন হতে পাচ বছর মেয়াদি পি এইচ ডি কোর্স করে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা প্রদান করে যাচ্ছে। এবার আপনার বলুন তো ফিজিওথেরাপি পেশাটি আসলে কার এবং যোগ্যতা আসলে কাদের বেশী এবং ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার নামে আসলে কারা অপচিকিৎিসা দিয়ে যাচ্ছে। রোগী সাধারনের অবগতির জন্য জানাচ্ছি ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক ও ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক সম্পর্কে সচেতন হউন। ফিজিওথেরাপি কনসালটেন্টের কাছ হতে লিখিত প্রেসক্রিপশনের মাধ্যমে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকের কাছ হতে গ্রহন করে সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবন যাপন করুন। ফিজিওথেরাপি ও রিহ্যাবিলিটেশন জনিত চিকিৎসার প্রেসক্রিপশন ও চিকিৎসা ফিজিক্যাল মেডসিন ও রিহ্যাবিলিটেশন চিকিৎসকের কাছ হতে গ্রহন করে ভুল ও অপচিকিৎসার শিকার হয়ে প্রতারিত হবেন না। কেননা ভুর চিকিৎসা আপনার রোগের জটিলতা আরও বাড়িয়ে দিয়ে আপনার জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলতে পারে।
ডেন্টাল বা দাতের চিকিৎসকের চিকিৎসা ও প্রেসক্রিপশন কেবলমাএ ডেন্টাল চিকিৎসক ও ডেন্টাল কনসালটেন্ট গনই করে থাকেন। তেমনি ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা করার জন্য বাংলাদেশে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক ও ফিজিওথেরাপি কনসালটেন্ট রয়েছে। এরাই ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা প্রদান করবেন। যদি ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা ও ফিজিওথেরাপি কনসালটেন্সি করার জন্য বাংলাদেশে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক ও ফিজিওথেরাপি কনসালটেন্ট না থাকত , তাহলে একটা কথা ছিল।
ফিজিক্যাল মেডিসিন ও রিহ্যাবিলিটেশন চিকিৎসকরা ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা করতে পারলে , রোগীদের ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার জন্য প্রেসক্রিপশন করার পর ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা নিতে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকদের দারস্ত হতে হয় কেন। দিন দিন মানুষ মেডিসিন বা ঔষধের পার্ম্ব-প্রতিক্রিয়ার কারনে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাওয়ার কারনে একটি স্বার্থানেস্বী মহলের চিকিৎসক ফিজিওথেরাপি ও রিহ্যাবিলিটেশন চিকিৎসা সম্পর্কে মানুষের মনে বিরুপ প্রতিক্রিয়া তৈরি করে এ পেশার চিকিৎসক ও চিকিৎসার উপর মানুষের অনাস্থা তৈরি করে যাচ্ছে অত্যান্ত সু কৈাশলে। সকলকে এ ব্যাপারে সজাগ থাকার জন্য এবং সচেস্ট হওয়ার আহবান জানাচ্ছি। প্রফেসর ডাঃ মোঃ আবু সালেহ আলমগীর কনসালটেন্ট ও বিভাগীয় প্রধান ফিজিওথেরাপি এন্ড রিহ্যাবিলিটেশন বিভাগ ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল,মতিঝিল, ঢাকা মোবাইলঃ০১৬৪১৫৭৬৭৮৭, ০১৭৩৮৩৯৪৩০৯