নৌ পরিবহন অধিদপ্তরের
আওয়ামী লীগপন্থি দুর্নীতিবাজ প্রকৌশলী আবুল বাশারের খুটির জোর কোথায়

একজন প্রথম শ্রেণীর সরকারী ঊর্ধতন কর্মকর্তা প্রায় প্রতিদিন কোন বার, ফাইভ স্টার হোটেল অথবা থ্রি স্টার হোটেলে গিয়ে নিজের পরিচয় দিয়ে প্রভাবঘাটিয়ে মাদক সেবন করতে পারেন? অথবা অবৈধ স্পা সেন্টারে গিয়ে প্রভাব ঘাটিয়ে নাম মাত্র টাকায় সেবা নিতে পারেন দেহপসারিনীদের?
সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের জন্য তৈরি শৃঙ্খলা বিধি মোতাবেক এমনটি পারার কথা নয়। আর যদি কারো বিরুদ্ধে এমন কাজে যুক্ত রয়েছেন বলে অভিযোগ প্রমানিত হয় তাহলে তিনি অবশ্যই সরকারী চাকুরী শৃঙ্খলা বিধি ভাঙার অভিযোগে অভিযুক্ত হবেন এবং প্রয়োজনীয় দন্ডে দন্ডিত হবেন। কিন্তু আইনের কোনো ধরনের তোয়াক্কা না করেই নৌ-পরিবহন অধিদপ্তরের ইঞ্জিনিয়ার এন্ড শিপ সার্ভেয়ার এন্ড এক্সামিনার মো: আবুল বাশার প্রতিনিয়ত অনিয়ম, দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার করেই যাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এক সময় আওয়ামী লীগপন্থি কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে প্রকাশ্যেই দুর্নীতি, অনিয়ম করলেও দল চলে যাওয়ার পর তার দাপট যেন এখনো একবিন্দুও কমেনি। নিজেকে বিএনপি পন্থি কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে এখনো দুর্নীতি করে যাচ্ছেন। তার অত্যাচার, নির্যাতনের শিকার সহকর্মীরাও তার বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট কর্তপক্ষকে অভিযোগ করবেন বলে জানিয়েছেন। তবে তারা ভয়ে আছেন তাদের পরিচয় প্রকাশ পেয়ে গেলে এই দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার হাত থেকে তারা কোনোভাবেই রেহাই পাবেন না।
বারবার প্রশ্ন উঠছে নৌ পরিবহন অধিদপ্তরের আওয়ামী লীগপন্থি দুর্নীতিবাজ প্রকৌশলী আবুল বাশারের খুটির জোর কোথায়? সংশ্লিষ্টরা জানায়, গত ৫ বছর ধরে মো.আবুল বাশারের বেপরোয়া জীবন যাপন ও অনিয়ম, দুর্নীতি অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। কিন্তু আওয়ামী ঘরানার কর্মকর্তা বলে নিজেকে পরিচয় দেওয়ায় তিনি সব সময়ই থেকে গিয়েছেন ধরাছোয়ার বাইরে। তার যেন অপকর্ম নৌ-পরিবহন অধিদপ্তরে ওপেন সিক্রেট। তারপরও তার বিরুদ্ধে কোনো ধরনের ব্যবস্থা না নেওয়ার মনে করা হচ্ছে তার সঙ্গে আরো কোনো ঊর্ধতন কর্মকর্তার সম্পর্কের জোরেই তিনি এতটা বেপরোয়া।
এই চক্রের সদস্যদের আইনের আওতায় আনা গেলে নৌ পরিবহন অধিদপ্তর কলঙ্কমুক্ত হবে বলেও তার একাধিক সহকর্মী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন। নৌ-পরিবহন অধিদপ্তরের ইঞ্জিনিয়ার এন্ড শিপ সার্ভেয়ার এন্ড এক্সামিনার পদে দীর্ঘদিন ধরেই কর্মরত আছেন মো.আবুল বাশার। তার বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার সহ নিয়মিত মাদক সেবনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। তারপরও তিনি কিভাবে ধরাছোয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছেন এই প্রশ্ন এখন অধিদপ্তরের সর্বমহলে আলোচনা হচ্ছে। জানা গেছে, ২০১৯ সালে আওয়ামী লীগের একজন শীর্ষ নেতার সুপারিশে নৌ-পরিবহন অধিদপ্তরে ইঞ্জিনিয়ার এন্ড শিপ সার্ভেয়ার এন্ড এক্সামিনার পদে চাকুরী পান তিনি। তার গ্রামের বাড়ী ময়মনসিংহ জেলায়।
তার বাবা একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ছিলেন বলে অনেকেই দাবি করেন। আওয়ামী লীগ আমলে নিয়োগ পাওয়া সত্ত্বেও ও অনিয়ম, দুর্নীতিতে জড়িয়ে প্রভাব খাটানো এই কর্মকর্তা এখন ভোল পাল্টে নিজেকে বিএনপি পরিবারের সদস্য ও সেই ঘরানার কর্মকর্তাদের পৃষ্ঠপোষক বলে দাবি করেন বলেও রয়েছে আলোচনা সমালোচনা। অভিযোগ অনুসন্ধানে জানা যায়, বাংলাদেশ মেরিন একাডেমি চট্টগ্রামে (৩৮ তম ব্যাচ) প্রশিক্ষণকালীন সময়ে তার বিরুদ্ধে প্রায় সবারই নেতিবাচক মনোভাব ছিল। তার সময়ে উশৃঙ্খলতার দায়ে বাংলাদেশ এবং মেরিন একাডেমির ইতিহাসে পুরোব্যাচ বহিষ্কৃত হয় বলে তার সহকর্মীরা অভিযোগ করেন। যার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন এই মো: আবুল বাশার। পুরো ব্যাচের সেই বহিষ্কারের ঘটনায় অধিকাংশ নিরীহ ক্যাডেট অবর্ণনীয় কষ্টের সম্মুখীন হন।
যার রেশ এখনো বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছেন অনেক ক্যাডেট। সুত্রগুলো আরো জানায়, স্কুল জীবন থেকেই উশৃঙ্খল ও মাদক সেবনে অভ্যস্ত ছিলেন মো: আবুল বাশার এখনো মাসে কমপক্ষে ২০ দিন হোটেল সোনারগাঁও/ ইন্টার কন্টিনেন্টাল/ পূর্বাণী/ ঈশা খাঁ/ওয়েস্টিন হোটেলের বার ও ডিস্কোর নিয়মিত কাস্টমার। এছাড়াও ঢাকা শহরের অনেক স্পা, মেসেজ পার্লার ও রেড লাইট এরিয়াতে তার নিয়মিত বিচরণ রয়েছে। তার এই জীবনযাত্রা উপভোগের আর্থিক যোগানদাতারা হচ্ছেন মার্চেন্ট ও ইনল্যান্ড পরীক্ষার সমালোচিত নাম আবু সাইদ, রাশেদি, সাগরসহ আরো অনেকে। মার্চেন্টের ক্লাস-১ থেকে ক্লাস-২, ক্লাস-৩ এর মৌখিক পরীক্ষায় তার ঘুষের রেট হচ্ছে যথাক্রমে: ৭ লাখ, ৫, লাখ ও ৩ লাখ টাকা। ইনল্যান্ড তৃতীয়, দ্বিতীয় ও প্রথম শ্রেণীতে ঘুষের রেট যথাক্রমে ৭০ হাজার, ১ লাখ ও ১.৫ লাখ টাকা বলে অভিযোগ আছে। তাছাড়াও আর এক মহা দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন গিয়াস উদ্দিনের সাথে মিলে তিনি পানামা সিডিসি ও স্পেশাল ব্যাচের নাম দিয়ে এ পর্যন্ত প্রায় ৩০০ জনকে অবৈধভাবে সিডিসি প্রদান করে প্রায় ১৮ কোটি টাকা ঘুষ হিসাবে উপার্জন করেছেন। আর সে টাকায় তিনি অনৈতিক জীবন যাপন করেন বলে আলোচনা সমালোচনা রয়েছে। পানামা ও স্পেশাল সিডিসি প্রদান সংক্রান্ত মামলাটি এখন হাইকোর্টের আপিল বিভাগে বিচারাধীন। যেখানে হাইকোর্ট বিষয়টি আমলে নিয়ে তিন মাসের মধ্যে দুর্নীতি দমন কমিশনকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ প্রদান করেছেন বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে। ২০১০ সালে বাংলাদেশের পতাকাবাহী প্রথম জাহাজ এম ভি জাহান মনি (যেটি সোমালিয়ান জলদস্যু দ্বারা অপহৃত হয়েছিলো) জাহাজের দ্বিতীয় প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত থাকাকালীন তিনি সমুদ্রের পানি দিয়ে ইঞ্জিন কুলিং এর ব্যবস্থা করে ইচ্ছেকৃতভাবে ইঞ্জিন নষ্ট করেন। যে কারণে জাহাজ মালিক শাহজাহান তার শিপিং কোম্পানীতে (এস আর শিপিং এ) চিরদিনের জন্য নিষিদ্ধ করেন এই আবুল বাশারকে। তবে এই রকম ঘটনা তার জীবনে প্রথম নয়। একাধিক সূত্র বলছে, সে ক্যাডেট লাইফ থেকেই কোনো কোম্পানিতেই এক বারের পর দ্বিতীয়বার চাকরি করতে পারেননি তার অপেশাদার কর্মকান্ডের জন্য। এই ধরনের একজন বিতর্কিত প্রকৌশলী সরকারি চাকরিতে যোগদান করে অনিয়ম, দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে নৌ পরিবহন অধিদপ্তরে গড়ে তুলেছেন এক অনিয়মের স্বর্গরাজ্যে যার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদ দাতা বর্তমান সিএনএস ক্যাপ্টেন মোঃ গিয়াস উদ্দিন আহমদ বলেও কর্মকর্তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান।
সরকারি চাকরিতে যোগদানের পর থেকেই তিনি জ্ঞাত আয় বহির্ভূত অবৈধ সম্পদ সম্পত্তি এবং টাকার মালিক হয়েছেন। ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থানে নামে বেনামে রয়েছে তার ফ্ল্যাট ও প্লট। বিভিন্ন ব্যাংকে রয়েছে তার এফডিআর এবং নামে বেনামে প্রচুর টাকা যার উৎস এই সরকারি চাকরি থেকে অবৈধভাবে আয়করা বলেও রয়েছে একাধিক অভিযোগ। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মদদপুষ্ট কোন কর্মকর্তা স্বপদে বহাল থেকে এখনো বেপরোয়া ভাবে অনিয়ম, দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার করবে তা বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকারের পক্ষের কোনো কর্মকর্তা মেনে নিচ্ছে না। তার এ ধরনের কর্মকান্ডের ফলে বর্তমান সরকারের ভারমূতি দারুন ভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। তাই প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে তার অপসারণও হওয়া দরকার বলেও মনে করেন তারা।
এই বিষয়ে জানতে নৌ পরিবহন অধিদপ্তরের ইঞ্জিনিয়ার এন্ড শিপ সার্ভেয়ার এন্ড এক্সামিনার মো: আবুল বাশারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তার সাড়া মেলেনি। তবে অন্তবর্তীকালীন সরকার সমর্থক কর্মকর্তাদের দাবী নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করলেই উল্লেখিত আবুল বাশারের বিরুদ্ধে থাকা সব অভিযোগের সত্যতা মিলবে। এ ক্ষেত্রে তারা নৌ-মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা, সচিব ও নৌ-পরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের হস্তক্ষেপ কামনা করে তার সকল অপকর্মের তদন্ত করে দাবী করছেন।