সিকদার গ্রুপের সকল অপকর্মের সহযোগী
সিডনীতে পালিয়ে গেলেন ন্যাশনাল ব্যাংকের সাবেক এমডি শফিকুর রহমান
সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর অত্যন্ত গোপনে দেশ ছাড়লেন ন্যাশনাল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) একেএম শফিকুর রহমান। ন্যাশনাল ব্যাংকে দেউলিয়া করার নেপথ্য নায়ক এই এমডি শফিকুর রহমান কয়েক হাজার কোটি টাকা অনিয়মিত ঋণ দিয়ে নিজেই ১০ শতাংশ ঘুষ নিয়ে গড়ে তুলেছিলেন বিশাল বিত্ত বৈভরের। দুদকে মামলা হলেও অবৈধ অর্থের জোরে ধামাচাপা দিয়ে রেখেছেন তিনি। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে লোকসানী ব্যাংক সমূহের বিষয়ে সাম্প্রতিক বিশেষ তৎপরতা শুরু হলেই শফিকুর রহমান পালিয়ে অস্ট্রেলিয়ার সিডনীতে চলে যান। বর্তমানে স্ত্রী পরিজন সহ সেখানেই বসবাস করছেন। সিডনিতেও রয়েছে তার বিলাশ বহুল এপার্টমেন্ট। যেখানে তার মেয়ে জামাই স্থায়ীভাবে বসবাস করে আসছেন।
জানা যায় ১৯৮৩ সালে ন্যাশনাল ব্যাংকের পথচলা শুরু হবার পর একেএম শফিকুর রহমান ১৯৮৮ সালে এই ব্যাংকে যোগদান করেন। এর আগে তিনি কৃষি ব্যাংকের বিভিন্ন বিভাগ ও শাখায় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ২০১৪ সালের ৯ মার্চ ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে দায়িত্ব পালনকালীন সময়ে ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে নিয়োগ পান। এরপর থেকে তিনি বেপরোয়া হয়ে দু’হাতে অবৈধ উপার্জন শুরু করেন। ঐ সময়ে সিকদার গ্রুপের কাছে ব্যাংকটির কর্তৃত্ব থাকায় এবং তিনি তাদের দেশী লোক ও নিকটাত্মীয় হবার সুবাদে তাকে আর পেছনে তাকাতে হয়নি।
শিকদার গ্রুপের সকল অনৈতিক কর্মকান্ডে সক্রিয় সহযোগিতার পাশাপাশি নিজের আখের গোছাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। নিয়মবহির্ভূতভাবে শীর্ষ ঋণ খেলাপি ৪টি গ্রুপকে তিনি প্রায় কয়েক হাজার কোটি টাকা ঋণ মঞ্জুর করেন। যা অদ্যাবধি পরিশোধ হয়নি। সুদাশলে বেড়েছে কয়েকগুণ। একই সময়ে ন্যাশনাল ব্যাংকের দুটি শাখায় বড় ধরনের ঋণ অনিয়ম উদঘাটন করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এসব ঋণ অন্যের নামে দেয়া হলেও সিকদার পরিবারই এর প্রকৃত সুবিধাভোগী তা চিহ্নিত করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ কারণেই ব্যাংকটির এমডি এ কে এম শফিকুর রহমানকে দায়ী করে চাপ প্রয়োগ ও অপদস্ত করা হয়। পরবর্তী ২০১৪ সালের ১ অক্টোবর তিনি পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। তিনি এমডি’র দায়িত্ব পালনকালীন মি: ১০ পার্সেন্ট হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। এই টেন পার্সেন্ট নিয়েই তিনি ঐ সময়ে প্রায় শত কোটি টাকার মালিক বনে যান। দেশ-বিদেশ গড়ে তোলেন বিশাল বিত্ত-বৈভব।
অস্ট্রেলিয়া সিডনীতে বাড়ী, নিজ গ্রাম নড়িয়া শরীয়তপুরে ৫ কোটি টাকা ব্যায়ে বিলাসবহুল বাড়ী রাজধানীর ৪১, নয়াপল্টনস্থ গাজী ভবনে ফ্ল্যাট, আফতাব নগরে ফ্ল্যাট, বনানীর ২৩ নং রোডের ব্লক-এ তে ৮৬ নং বাড়িতে ফ্ল্যাট, যেখানে তিনি নিজে বসবাস করতেন, ঝিলমিল প্রকল্পে ৫ কাঠার প্লট, পূর্বাচলে ১০ কাঠার প্লট সহ নামে বেনামীতে স্ত্রী কন্যার নামে বিভিন্ন ব্যাংকে কোটি কোটি টাকার এফডিআর করেছেন। সাম্প্রতিক সময়ে সরকার পরিবর্তনের সাথে সাথে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে রদবদলসহ তার আমলে দেয়া প্রতিটি ঋনই খেলাপী হওয়ায় কয়েক হাজার কোটি টাকা অনাদায়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রেক্ষিতে তড়িঘড়ি করে শফিকুর রহমান মামলা মোকদ্দমার হাত এড়াতে দেশত্যাগ করেন বলে তার এক আত্মীয় জানান। জানাযায় দুদক ও তার বিরুদ্ধে কিছু আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ তদন্তাধীন আছে। যা এতদিন তিনি সংশ্লিষ্ট তদন্তকারী কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে ধামাচাপা দিয়ে রেখেছিলেন।
উল্লেখ্য গত জুলাই মাসেও তিনি বিশ্বের সবচেয়ে দামি ব্র্যান্ডের Ferrari SF90 XX Spider 2025 মডেলের গাড়ী কেনেন। যার মূল্য ১১ কোটি ৬৮ লক্ষ টাকা যা তার বনানীস্থ বাসার গ্যারেজে রক্ষিত আছে। বনানী বাসার কেয়ারটেকার জানান স্যার অস্ট্রোলিযা চলে গেছেন। ফিরবেন কিনা জানি না। তবে গাড়ীটি দেখতে মাঝে মধ্যে উৎসুক কিছু লোক নিচ তলার পার্কিংয়ে আসা যাওয়া করে থাকেন।