লীগ সরকারের আশীর্বাদ পুষ্ট দুর্ণীতিবাজ প্রকল্প পরিচালকগন এখনও বহাল তবিয়তে
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সমাপ্ত ও চালু প্রকল্পে শত শত কোটি টাকা হরিলুট ॥ দেখার কেউ নেই
স্বৈরাচারী আওয়ামী সরকারের শেষ সময়ে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সমাপ্ত প্রকল্পের ও বর্তমান চালু প্রকল্পে চলছে হরিলুট। লীগ সরকারের আশীর্বাদ পুষ্ট দুর্ণীতিবাজ প্রকল্প পরিচালকগন সাবেক মন্ত্রী সচিবের সাথে যোগসাজসে কোটি কোটি টাকা তসরুপ করে থেকে গেছেন ধরা ছোয়ার বাইরে। বরাদ্ধকৃত টাকার সিংহবাগ আত্মসাত হওয়া প্রকল্পগুলি হচ্ছে সম্প্রতি সমাপ্ত ঘোষিত প্রকল্পের মধ্যে অন্যতম ন্যাশনাল এগ্রিকালচারাল টেকনোলজি প্রোগ্রাম, ফেজ-২ (এনএটিপি) প্রকল্প, কোয়ারেনটাইন প্রকল্প, জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় ভেটিরিনারী পাবলিক হেলথ সার্ভিস জোরদার করন প্রকল্প, হাওড় অঞ্চলে সমন্বিত প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন প্রকল্প, সমাপ্ত কৃত্রিম প্রজনন কার্য্যক্রম সম্প্রসারন ও ভ্রন স্থানান্তর প্রযুক্তি বাস্তবায়ন প্রকল্প, প্রাণিসম্পদ উপাদান উপকরন ও প্রাণিজাত খাদ্যেরমান নিয়ন্ত্রন গবেষনাগার স্থাপন প্রকল্পের, এবং সিলেট, লালমনিরহাট/ কুড়িগ্রাম ও বরিশাল ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজী স্থাপন প্রকল্প।
ন্যাশনাল এগ্রিকালচারাল টেকনোলজি প্রোগ্রাম, ফেজ-২(এনএটিপি) প্রকল্প: প্রকল্পটির মোট ব্যয় ধরা ছিল ৪৮২ কোটি ২৬ লক্ষ টাকা। খরচ করা হয়েছিল ৪৫৯ কোটি ৪৭ লক্ষ টাকা। কাগজে কলমে অগ্রগতি ৯৫.২৭% দেখানো হলেও বাস্তবে কোন অগ্রগতি পরিলক্ষিত হয়নি। যা সরেজমিনে তদন্ত করলে প্রমানিত হবে। এ প্রকল্পের প্রায় অর্ধেক টাকা খরচ করা হয়েছে প্রশিক্ষন ও বিভিন্ন উপকরন বিতরনে।
সুত্র মতে প্রশিক্ষনের ৭০% ছিল ভ’য়া মাষ্টার রোল এবং উপ করন বিতরন ছাড়াই বিল উঠাইয়া পিডি, সংশ্লিষ্ঠ ইউএলও ও ঠিকাদার ভাগাভাগি করে খেয়ে ফেলেছে। প্রকল্পটি সমাপ্তির পর ক্রয়কৃত ১৬৫টি ক্যামেরা, ১৭৮টি ডেক্সটপ কমপিউটার, ১৭৮টি ল্যাপটপ, ২৬৮১টি মোবাইল ট্যাবলেট, ১০০টি পিকো প্রজেক্টর, ১৬৪টি মাল্টিটমিডিয়া প্রজেক্টর, ২টি ফটো কপিয়ার, ৮টি এয়ারকুলার, আইপিএস-২, ৫৪৬টি রেফ্রিজারেটর এর কোন হদিস নেই। নিয়ম মোতাবেক প্রকল্প সমাপ্তির পর সকল ইকুইপমেন্ট ও যানবাহন ইনভেন্টরী লিষ্টের মাধ্যমে সরকারী পরিবহনপুল ও দপ্তরে জমা দেয়ার বিধান থাকলেও তা না করে সব ভাগাভাগি করে নিয়েছে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সাবেক পিডি ও তৎকালীন কর্মকর্তারা।
এছাড়া এ প্রকল্পের আওতায় কৃষকদের জন্য স্থাপিত ৯০১টি তথ্য ও উপদেশ কেন্দ্রের জন্য ২ কোটি ৭০ লক্ষ টাকার আসবাবপত্র কেনা হলেও বাস্তবে একটির ও অস্তিত্ব নেই। এ প্রকল্পের আওতায় মোট প্রায় ৫ কোটি টাকার আসবাবপত্র ক্রয় করে বিতরন দেখানো হলেও বাস্তবে খুজে পাওয়া যাবে না। একইভাবে প্রায় ২শত কোটি টাকার উপরে বিভিন্ন যন্ত্রপাতি (বিভিন্ন ল্যাবের জন্য) ক্রয় করা হলেও সেগুলির ও বর্তমানে কোন অস্তিতব নেই। যা সরোজমিনে তদন্ত করলে প্রমানিত হবে।
প্রানিসম্পদ অধিদপ্তরের অধীনে বাস্তবায়িত অপর আরেকটি প্রকল্প হল কোয়ারেনটাইন প্রকল্প: এ প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য ছিল দেশের ২২টি শুল্ক স্টেশনে পশুপাখি ও পশুখাদ্যসহ অন্যান্য আমদানীকৃত মালামাল পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেশের প্রবেশের অনুমতি প্রদান। সে জন্য প্রায় ২ শত েেকাটি টাকার ইকুইপমেন্ট ক্রয় সহ ২২টি দ্বিতল ভবন নিম্মান করা হয়েছিল। কিন্তু দূ:খজনক হলেও সত্য অদ্য পর্যন্ত ১ টি স্টেশনও চালু করা হয়নি বা মেশিনারীজগুলি বাক্স হতে খোলা হয়নি। তবে ল্যাবটপ, কমপিউটার, এসি গুলি যার মত বাসায় নিয়ে গেছে। ২২টি স্টেশনের জন্য ক্রয়কৃত যানবাহনগুলির ও কোন হদিস নেই। প্রায় ৪ শত কোটি টাকা ব্যয়ে এবং খরচকৃত প্রকল্পের কোন প্রকার কাজে আসেনি। অন্য দিকে স্টেশনগুলির কার্য্যক্রম চালু না হলেও জনবল নিয়োগ দিয়ে নিয়মিত বেতনভাতাদি পরিশোধ করা হচ্ছে। বিষয়টির সাথে যারা জড়িত তাদের আইনের আওতায় আনা জরুরী বলে সংশ্লিষ্ঠরা মনে করে।
জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় ভেটিরিনারী পাবলিক হেলথ সার্ভিস জোরদার করন প্রকল্প: প্রকল্পটি ৭৩ কোটি ২৬ লক্ষ টাকা ব্যয়ে বিগত জুলাই/২০১৯ এ শুরু হয়ে জুন-২০২৪ তারিখে সমাপ্ত হয়। প্রকল্পটির মূল্য উদ্দেশ্য ছিল (১) ভেটিরিনারী পাবলিক হেলথ ল্যাবের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা,(২) জুনেটিক রোগ নিয়ন্ত্রন করা, জুনেটিক রোগের বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা। প্রকল্পের আওতায় দৃস্যমান বলতে সাভারে একটি ৫ম তলা বিশিষ্ঠ ল্যব বিল্ডিং নিম্মান করা হয়েছে যা এখনও অসমাপ্ত। বিল্ডিং ও আনুসাংগিক খরচ বাবদ এ পর্যন্ত মোট ৩৫ কোটি টাকার মত খরচ দেখানো হলেও বাস্তবে খরচ করা হয়েছে ১৫ কোটি টাকা আর বাকী টাকা পিডি ও ঠিকাদার ভাগাভাগী করে নিয়েছে। ল্যব ভবনটি ৭,৫০০ স্কয়ার ফিটের হলেও বিল পরিশোধ করা হয়েছে ৮,০০০ স্কয়ার ফিটের, একইভাবে সিডিউল অনুযায়ী কাজ না করেও ঠিকাদার বিল উঠাইয়া নিয়েছে। যন্ত্রপাতি ক্রয়ের অনিয়ম ও অর্থ আত্নসাৎ এর বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি সুস্পষ্ঠ মতামত দিলেও মন্ত্রণালয়ের সচিব ও অন্যান্যরা সেটি বাস্তবায়ন করেনি। কসাই ও কৃষক প্রশিক্ষনের নামে ৮০% টাকা ভাগাভাগি করে খেয়েছে। যা দফাওয়ারী তদন্ত করলেই প্রমানিত হবে।
একইভাবে হাওড় অনঞ্চলে সমন্বিত প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন প্রকল্প এর ১০৪ কোটি ৯০ লক্ষ টাকা, উপকূলীয় চরাঞ্চলে সমন্বিত প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন প্রকল্পের ১৫৪ কোটি ৫৩ লক্ষ টাকা, মহিষ উন্নয়ন প্রকল্পের(২য় পর্য্যায়ের) ১৬২ কোটি ৯৩ লক্ষ টাকা খরচ করা হলেও উক্ত টাকা দেশের জনগনের কোন কাজে আসেনি। আলোচ্য প্রকল্প ৩টির ৭০% টাকা লুটপাট হয়েছে যাহা ডিপিপি অনুযায়ী তদন্ত করলে প্রমানিত হবে। উল্লেখ্য বিগত সরকারের গোটা সময়কাল ধরে প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তরে প্রতিটি প্রকল্পেই চলেছে এভাবে হরিলুট। প্রকল্প পরিচালকগন নিজেদেরকে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা বঙ্গবন্ধু কৃষিবিদ পরিষদের নেতা পরিচয়ে মন্ত্রী ও সচিব সহ আ’লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের কারো কারো সাথে সক্ষতা গড়ে প্রকল্প থেকে আত্মসাতকৃত টাকা সরবরাহ করে ড্যাম কেয়ার ভাব প্রদর্শন করে চলাফেরা করতেন। পর্যবেক্ষক মহলের মতে অবিলম্বে প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তরের অধীনে বিগত সরকার আমলে গৃহীত প্রকল্প সমূহ সরেজমিন অনুসন্ধান পূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন প্রয়োজন।