বিআইডব্লিউটিএ’তে শ্রমিকদলের নাম ভাঙিয়ে শ্রমিকলীগ নেতার ইউনিয়ন দখল

আওয়ামী লীগ সরকারের সময় দোর্দান্ড প্রতাপশালী শ্রমিকলীগ নেতা এখন শ্রমিকদল নেতা!গড়ে তুলেছেন শক্তিশালী সিন্ডিকেট। ঘটনাটি ঘটেছে রাজধানীর মতিঝিলের বিআইডব্লিউটিএ’তে। জানা গেছে, বিআইডব্লিউটিএ শ্রমিক লীগের সহ-সভাপতি মাজহারুল ইসলাম সরকার বদলের পর রাতারাতি ভোলপাল্টে শ্রমিক দলের পরিচয় দিয়ে বিআইডব্লিউটিএ সিবিএ ও কর্মচারি ইউনিয়ন দখল করে সভাপতি বনে গেছেন।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) এর কালেক্টিভ বার্গেনিং এজেন্ট (সিবিএ) কার্যালয় দখল করেছেন বিআইডব্লিউটিএ’র অফিস সহকারি পদে কর্মরত মাজহারুল ইসলাম। তিনি আগের সরকারের সময় ছিলেন শ্রমিকলীগের সহ-সভাপতি ও উর্ধ্বতন সহ-সভাপতি। তার নেতৃত্বে শ্রমিকদলের অন্যান্যদের নিয়ে তিনি ইউনিয়ন কার্যালয় দখল করেছেন।
বিআইডব্লিউটিএর প্রবিধানমালা অনুযায়ী কোনো কর্মচারী সরকারি কোনো রাজনৈতিক দল করতে পারেন না। কিন্তু মাজহারুল ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে এতোবছর শ্রমিক লীগের কমিটিতে ছিলেন। রাতারাতি ভোলপাল্টে জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের নেতা হয়ে সিবিএ কার্যালয় দখলে নেতৃত্ব দিয়েছেন বলে অভিযোগ সংস্থাটির কর্মচারিদের।
সংস্থাটির কর্মকর্তা কর্মচারীদের অভিযোগ, বিআইডব্লিউটিএ এমপ্লয়ীজ ইউনিয়ন (রেজিঃ নং: বি- ১৪৪০) নির্দলীয় ট্রেড ইউনিয়ন থাকা অবস্থায় শ্রমিকলীগ নেতা মাজহারুল ইসলামসহ তার সহযোগিরা ২০১৫ সালে সিবিএ নির্বাচনের ঠিক আগের দিন মামলা করে নির্বাচন বন্ধ করে দেন এবং নির্বাচনের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করান।
পরে তারা নির্দলীয় ট্রেড ইউনিয়ন এর পরিবর্তে বিআইডব্লিউটিএ এর অনুকুলে জাতীয় শ্রমিকলীগের ৩৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি অনুমোদন করিয়ে ইউনিয়ন দখল করেন। জাতীয় শ্রমিকলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারন সম্পাদক মো. সিরাজুল ইসলাম স্বাক্ষরিত কমিটির মাধ্যমে দলীয় প্রভাব বিস্তার করেন বিআইডব্লিউটিএ তে।
সে সময়ে শ্রমিকলীগের কমিটিতে মাজহারুল ইসলাম ১ নম্বর সহ সভাপতি এবং তার আপন ছোট ভাই সাবেক ছাত্রলীগ নেতা জাহিদুল ইসলামকে অর্থসম্পাদক করা হয়। ২০১৫ সালে মাজহারুল ইসলাম চাঁদপুর অফিসের নেতা ছিলেন। শ্রমিক লীগের দাপট দেখিয়ে তিনি ও তার ভাই এতো দিন নেতৃত্ব দিয়েছেন।
গত ৫ আগস্টের পরে পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে জাতীয় শ্রমিক লীগের অন্তর্ভূক্ত বি-১৪৪০ ইউনিয়নের নম্বরটি নিয়ে এবং শ্রমিক দলের কিছু বহিরাগত লোক নিয়ে বিআইডব্লিউটিএ বি-২১৭৬ (সিবিএ) কার্যালয়টি তালা ভেঙে দখল করে নিয়ে বিভিন্ন শাখা কমিটি গঠনের নামে বাণিজ্য শুরু করেন। অভিযোগের বিষয়ে জানতে মাজহারুল ইসলাম এর মোবাইল ফোনে কয়েক দফাযোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিব না করায় তার মতামত নেয়া সম্ভব হয়নি।
কর্মচারীদের অভিযোগ, গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী পদ ছেড়ে পালানোর পরপরই বিএনপি সমর্থিত কর্মচারীরা মতিঝিলের বিআইডব্লিউটিএ ভবনে হামলা চালান। পরে কর্মচারী ইউনিয়নের শীর্ষদের ঢাকার বাইরে বদলি করা হয়।
শ্রম আইন এবং শ্রম অধিদফতর কর্তৃক কোন বৈধ কাগজপত্র না নিয়ে গত ৫ আগস্ট জাতীয় শ্রমিকলীগের অন্তর্ভূক্ত একমাত্র সংগঠন বিআইডব্লিউটিএ এমপ্লয়ীজ ইউনিয়ন (রেজিঃ নং: বি-১৪৪০) এর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি দাবি করে মাজহারুল ইসলাম বহিরাগত লোকজনকে নিয়ে কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই তালা ভেঙ্গে বিআইডব্লিউটিএ শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন (রেজিঃ নং- ২১৭৬) সিবিএ কার্যালয় দখল করেন।
অথচ বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের (আপিল বিভাগের) রায় অনুযায়ী সিবিএ দখলে নেওয়া বিআইডব্লিউটিএ এমপ্লয়ীজ ইউনিয়ন (রেজিঃ নং: বি-১৪৪০) এর বৈধ কোন নেতৃত্ব নেই। বর্তমানে সংগঠনটির ওপর আদালত স্থিতিবস্থা বজায় রাখার নির্দেশ থাকলেও তা অমান্য করে কার্যক্রম চালাচ্ছে মাজহারুল ইসলাম। এ ব্যাপারে বিআইডব্লিউটিএ শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়েনের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব কুমার দাস বলেন, সরকারি কোন প্রতিষ্ঠানে ট্রেড ইউনিয়ন কিংবা সিবিএ শ্রম অধিদফতর কর্তৃক পরিচালিত হয়ে থাকে, সে মোতাবেক বিআইডব্লিউটিএ’তে আমরা সিবিএ পরিচালনা করে আসছি। হঠাৎ করে জাতীয় শ্রমিক লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আযম খসরুর ক্যাডার হিসেবে পরিচিত মাজহারুল ইসলাম শ্রমিকদলের ব্যানারে আমাদের ইউনিয়নের তালা ভেঙে দখল করেন। আমরা কোন রকম সংঘাতে না গিয়ে নিয়মানুযায়ী শ্রম অধিদপ্তর এবং বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান মহোদয়সহ সংশ্লিষ্ট সকলকে এ ব্যাপারে লিখিতভাবে জানিয়েছি। আশা করি তারা দ্রুত ব্যবস্থা নিবেন।