ডা. রোবেদ আমিনসহ দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের অপসারণ ও বিচারসহ ৮ দফা দাবি
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. রোবেদ আমিনসহ স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান মন্ত্রানালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের স্থবিরতা ও ছাত্র আন্দোলনে বিরোধিতা করা কর্মকর্তাদের অপসারণ ও বিচারের দাবিসহ ৮ দফা দাবি জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে বৈষম্যের শিকার চিকিৎসক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।
মঙ্গলবার (১০ জুলাই) রাজধানীর মহাখালীতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানান তারা। সম্মেলনে মূল বক্তব্য রাখেন চিকিৎসক ডা.ফারুক হোসেন তিনি বলেন, চিকিৎসক সহ ভিন্নমত পোষণকারী সকল স্বাস্থ্যকর্মী স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের জুলুম, নির্যাতন, পদোন্নতি বঞ্চনা, বদলি হয়রানি ও মিথ্যা মামলায় গত ১৬ বছর অবর্ণনীয় বৈষম্যের শিকার হয়েছে। অনেকের চাকুরীচ্যুতি হয়েছে, নির্যাতনের কারণে অনেকেই চাকরী ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছে। তারপরেও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে আমরা সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছি। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শুরু থেকেই আমরা এই আন্দোলনের প্রতি নৈতিক সমর্থন করি এবং বিভিন্ন পর্যায়ে ছাত্রদের সহিত যোগাযোগ করে সহযোগিতা করি।
ডা. ফারুক হোসেন আরও বলেন ফ্যাসিবাদের দোসর তৎকালীন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তৎকালীন লাইন ডিরেক্টর (এনসিডিসি) বর্তমান নবনিযুক্ত মহাপরিচালক ডাঃ রোবেদ আমীন, পরিচালক (প্রশাসন) ডাঃ হারুনুর রশিদ, লাইন ডিরেক্টর ডাঃ নাজমুল ইসলাম মুন্না, লাইন ডিরেক্টর ডাঃ সোহেল মাহমুদ, উপ-পরিচালক ডাঃ মোবারক হোসেন দিগন্ত, নিপসমের পরিচালক ডাঃ সামিউল ইসলাম সাদি সহ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অন্যান্য পরিচালক, লাইন ডিরেক্টর, উপ-পরিচালক, সহকারী পরিচালক, বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক, ইনস্টিটিউটের পরিচালক সহ অন্যান্য কর্মকর্তারা সরকারী হাসপাতালে আহত ছাত্রদের চিকিৎসা দেওয়ার ব্যাপারে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে এবং বিভিন্ন হাসপাতালে ছাত্রলীগের পেটুয়া বাহিনী ও পুলিশ বাহিনী আহতদের চিকিৎসা কার্যক্রমে বাধার সৃষ্টি করেছে। এমনকি নিহত ছাত্র-জনতার লাশের সংখ্যা গোপন করেছে এবং ছাত্র জনতার লাশগুলোকে সরকারকে দিয়ে বেওয়ারিশ হিসাবে দাফন করতে সাহায্য করেছে। কিন্তু আমরা সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা কার্যক্রম চালিয়ে আহত ছাত্র-জনতার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করি। ফলশ্রুতিতে আমরা বদলি, শারিরীক নির্যাতন এবং হয়রানির শিকার হই। এমত অবস্থায় ছাত্র আন্দোলন যে চেতনার বিরুদ্ধে সেই ফ্যাসিবাদী চেতনার ব্যক্তি, উচ্চাভিলাষী পদলোভী চিকিৎসকদের অপসারণের দাবি জানান তিনি।
সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) এর কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য জিয়াউল করিম জিয়া তিনি অন্তবর্তীকালীন সরকারের কাছে দাবী বাস্তবায়নের আহবান জানিয়ে বলেন, গত ৫ই আগস্ট ছাত্র-জনতার এক রক্তক্ষয়ী আন্দোলন ও আত্মত্যাগের বিনিময়ে দেশে এক ফ্যাসিস্ট সরকারের হাত থেকে নবজাগরণ হয়েছে। হাজার হাজার ছাত্র-জনতা আত্মাহুতি দিয়েছে, হাজার হাজার মানুষ আহত হয়েছে। ঠিক সেই বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে স্বাস্থ্য কাঠামো সংস্কারের জন্য যে বিশেষজ্ঞ প্যানেল গঠন করা হয়েছে-তা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। আমরা চিকিৎসক সমাজ এই প্যানেলের ব্যক্তিদের দেখে বিস্মিত ও হতবাক। এই প্যানেলের আহ্বায়ক এক-এগারো সুবিধাভোগী। প্যানেলের সদস্য সচিব বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের ধারক ও বাহক। অন্যান্য বেশিরভাগ সদস্যরা সরাসরি বিগত সরকারের সুবিধাভোগী। আমরা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলতে চাই, এই ঘোষিত কমিটি ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহিদদের চেতনার সুস্পষ্ট পরিপন্থি। চিকিৎসক সমাজ এই কমিটি প্রত্যাখান করছে।
এসময় তিনি বৈষম্যের শিকার চিকিৎসক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পক্ষে ৮ দফা দাবি তুলে ধরেন, দাবি গুলো হলো ;
১। ডাঃ রোবেদ আমীন (মহাপরিচালক, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর), ডাঃ ফজলে রাব্বি (পরিচালক, প্রশাসন, চ.দা.) সহ বিগত সরকারের সুবিধাপ্রাপ্ত ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের বিরোধীতাকারী স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও অন্যান্য স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ পদে যাদের নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে তাদের নিয়োগ আদেশ বাতিল করতে হবে।
২। আহত ছাত্র জনতাকে যারা চিকিৎসা দিতে অস্বীকার করেছে (বিএসএমএমইউ থেকে শুরু করে সকল সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান) তাদের তালিকা প্রণয়ন করে বিএমডিসি এর রেজিস্ট্রেশন বাতিল করা। শান্তি সমাবেশে যোগদানকারী ও ফ্যাসিবাদের দোসর সকল চিকিৎসক ও কর্মকর্তা/ কর্মচারীকে তার পদ থেকে অব্যাহতি এবং তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনী প্রক্রিয়া গ্রহণ করে শান্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে ।
৩। অতি দ্রুত বৈষম্যের শিকার সকল চিকিৎসক ও কর্মচারীগণকে ভূতাপেক্ষভাবে পদোন্নতি দিয়ে বৈষম্য দূর করা। বর্তমানে পদোন্নতিযোগ্য প্রত্যেককেই দ্রুততার সাথে পদোন্নতির ব্যবস্থা করা। কেবল তাহলেই বঞ্চিত, দক্ষ, যোগ্য কর্মকর্তাদের পদায়ন করে স্বাস্থ্য প্রশাসন ঢেলে সাজানো সম্ভব হবে, যা অতি জরুরী।
৪। মেডিকেল কলেজ সহ প্রতিটি হাসপাতাল দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। এ সকল প্রতিষ্ঠান দুর্নীতিমুক্ত করতে যোগ্য ও বৈষম্যের শিকার শিক্ষক ও চিকিৎসকদের যথোপযুক্ত পদে পদায়িত করে বিগত দীর্ঘ ১৬ বছর সময়ে স্বাস্থ্য খাতে যত দুর্নীতি হয়েছে তার শ্বেতপত্র প্রকাশ ও দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।
৫। মেডিকেল কলেজ, মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ইনস্টিটিউট সমূহ, নার্সিং কলেজসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অতিদ্রুত স্বৈরাচারের দোসরদের সরিয়ে বৈষম্যের শিকার চিকিৎসকদের পদায়ন করতে হবে ।
৬। প্রতিবাদকারী যেসব চিকিৎসকদের হয়রানিমূলক বদলী করা হয়েছে সেই বদলী আদেশ অবিলম্বে বাতিল করা। ভবিষ্যতে বৈষম্যের শিকার চিকিৎসকদের কোনভাবেই হয়রানিমূলক বদলী না করা।
৭। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে দেশের বিদ্যমান স্বাস্থ্য ব্যবস্থার বিষয় ভিত্তিক প্রয়োজনীয় সংস্কার ও চিকিৎসাসেবার গুণগতমান উন্নয়ন এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থার কাঠামো শক্তিশালীকরণের জন্য গঠিত বিশেষজ্ঞ প্যানেল কমিটি অতি দ্রুত বাতিল করে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশকারী চিকিৎসক সমাজের প্রতিনিধিত্ব রেখে কমিটি পুনঃগঠন করতে হবে।
৮। স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তা কর্মচারী, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট এবং সেবক-সেবিকা সহ যাদের হয়রানি ও নির্যাতনমূলক বদলী এবং পদোন্নতি বঞ্চিত করে ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। অবিলম্বে তাদের সিনিয়রিটিসহ বিভিন্ন পদে পদায়ন করতে হবে।
সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন ড্যাবের সিনিয়র যুগ্ন মহাসচিব মেহেদী হাসান, ডাঃ মেহেবুল কাদির,রাজশাহী মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক ডা. মুরশেদ জামান, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের অর্থপেডিক্স বিশেষজ্ঞ ডা. আব্দুল কাদির নোমান, ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ ডা.রাসকিন তালুকদার, অর্থোপেডিক সার্জন ডাঃ শামসুল , ডাঃ হাবিবুল্লাহ তালুকদার, ডা গোলাম মোস্তফা, ডাঃ মিজান,ডাঃ গালিব, নার্সেস অ্যাসোসিয়েশন দুলি আক্তার ,এম-ট্যাব মহাসচিব বিপ্লবুজ্জামান বিপ্লব, খাজা মাইনুদ্দিন মঞ্জু,রুহুল আমিন,আব্দুর রব আকন্দ, মিজানুর রহমান মিজান, হাসেম,আবু সাঈদসহ আরও অনেকে। সম্মেলন শেষে তারা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে।