আর্থিক অনিয়মের অভিযোগে গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ ফজলুল হকের বেতন প্রারম্ভিক ধাপে নামিয়ে দেয়া হয়েছে
গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ ফজলুল হককে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগে তার বেতন বর্তমান গ্রেডের প্রারম্ভিক ধাপে নামিয়ে দেয়া হয়েছে। গত ২৫ জানুয়ারি গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের এক অফিসাদেশে তাকে এই গুরুদন্ড প্রদান করা হয়।
সূত্রমতে, মোহাম্মদ ফজলুল হক, নির্বাহী প্রকৌশলী, শেরেবাংলা নগর গণপূর্ত বিভাগ-১, ঢাকায় কর্মকালীন সময়ে "ন্যাশনাল ইনষ্টিটিউট অব নিউরোসাইন্স এন্ড হাসপাতাল" নির্মাণ প্রকল্পের ২য় চলতি বিলে ১০৪৪,৯০ লক্ষ টাকা গ/ঝ একইচখ-চঅঊখ ঠিকাদারকে অগ্রিম প্রদান করেন। সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার পরবর্তীতে অসম্পূর্ণ কাজ সম্পন্ন করতে ব্যর্থ হওয়ায় এবং ঠিকাদারকে এরূপ অগ্রিম বিল প্রদান অনুচিত মর্মে উল্লেখ করে মোহাম্মদ ফজলুল হককে দায়ী করে প্রাথমিক তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন দাখিল করে।
উক্ত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তার বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ এর বিধি ৩ এর উপবিধি (খ) অনুযায়ী "অসদাচরণ" এর অভিযোগে ০২/২০২২ নম্বর বিভাগীয় মামলা রুজু করে প্রথম কারণ দর্শানো নোটিশ প্রদান করা হয়। কারণ দর্শানো নোটিশের জবাবে প্রকৌশলী মোহাম্মদ ফজলুল হক জানান সংশ্লিষ্ট বিভাগের সকল প্রকল্পই যথা সময়ের মধ্যেই সম্পন্নকরণ এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি শতভাগ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে যথাযথ জামানত সুরক্ষিত রেখে কাজের গতি বেগবান করার জন্য সরল বিশ্বাসে বিল প্রদান করেছিলেন।
তিনি দীর্ঘ কর্মজীবনে কখনও স্বেচ্ছায়, স্বজ্ঞানে অথবা অন্যের প্ররোচনায় প্ররোচিত হয়ে অন্যায়, অনৈতিক ও দুর্নীতিমূলক কোনো কাজের সাথে আপোষ করেন নাই। তিনি সরকারের উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়নে সর্বদা ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করে উন্নয়ন কাজের সহযোগী হিসেবে নিজেকে আত্মনিয়োগ করেছেন। জবাব পর্যালোচনায় সন্তোষজনক না হওয়ায় বিভাগীয় মামলাটি তদন্ত করার জন্য গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শাকিলা জেরিন আহমেদকে তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়।
তদন্ত কর্মকর্তা প্রতিবেদনে জানান যে, এক্সটেনশন অব নিউরোসাইন্স প্রকল্পের ৪র্থ কিস্তি হিসাবে ২য় চলতি বিল বাবদ ১০৪৪.৯০ লক্ষ ঢাকা সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে অগ্রিম প্রদান সংক্রান্ত আর্থিক অনিয়মে অভিযুক্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ ফজলুল হক, সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী, শেরে বাংলা নগর, গণপূর্ত বিভাগ-১, ঢাকা এর সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। তিনি পিপিএ ২০০৬ ও পিপিআর ২০০৮ এর ব্যত্যয় ঘটিয়ে আর্থিক অনিয়ম করেছেন যা সুস্পষ্টভাবে আর্থিক বিধির লঙ্ঘন।
পরবর্তীতে, সংশ্লিষ্ট বিভাগ কর্তৃক ঠিকাদারের অন্যান্য প্রকল্পসহ বর্ণিত প্রকল্পের জবঃবহঃরড়হ গড়হবু হতে ১০৪৪.৯০ লক্ষ টাকা কর্তন করে সরকারি কোষাগারে জমা প্রদান পূর্বক ঠিকাদারকে প্রদত্ত অগ্রিম টাকা সমন্বয় করা হয়। ফলে, রাষ্ট্র বড় ধরণের ক্ষতি হতে রক্ষা পায়। সে কারণে তাঁকে গুরুদন্ড প্রদান না করে লঘুদন্ড দেয়া সমীচীন বলে প্রতীয়মান হয়। অভিযোগটি আর্থিক শৃঙ্খলা সংশ্লিষ্ট হওয়ায় অভিযুক্ত মোহাম্মদ ফজলুল হককে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ এর বিধি ৪ এর উপবিধি ২ এর (ঘ) অনুযায়ী 'বেতন গ্রেডের নিম্নতর ধাপে অবনমিতকরণ' অর্থাৎ তার বর্তমান বেতন গ্রেডের প্রারম্ভিকধাপে নামিয়ে দেওয়ার দণ্ড প্রদান করা হয়।
মন্ত্রণালয়ের এই আদেশটি গণপূর্তের সকল মহলে বর্তমানে আলোচনার বিষয়বস্তুতে পরিণত হয়েছে। তবে একটি সূত্র মতে এহেন অগ্রিম বিল প্রদানের ঘটনা গণপূর্তের আরো অন্যান্য বিভাগে রয়েছে। যেখানে অগ্রিম বিল নিয়ে ঠিকাদাররা যথা সময় কার্য সম্পাদন না করে নির্বাহী প্রকৌশলীর সাথে যোগসাজসে ভাগবাটোয়ারা করে নিয়েছেন। যা যথাযথ তদারকি করলে বেরিয়ে আসবে আরো কোটি কোটি টাকার আর্থিক অনিয়মের ঘটনা।