মাসিক ৪০ হাজার টাকা বেতন পেলেও
সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের হিসাব রক্ষক নাসির উদ্দিন প্রায় অর্ধশত কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের মালিক
শেখ নাসির উদ্দিন শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দীর্ঘ ২ যুগ সমকাল ধরে বছর যাবৎ হিসাব রক্ষক হিসেবে কাজ করে আসছেন। এরই মধ্যে গড়ে তুলেছেন অবৈধ সম্পদের পাহাড়। ঢাকা সহ বিভিন্ন জেলা শহরে রয়েছে শতকোটি টাকার সম্পদ।
একাধিক বিলাসবহুল গাড়ি, ঔষধ বাণিজ্য, হাসপাতালে অবৈধ পন্থায় রোগীদের চিকিৎসা,টাকার বিনিময়ে সিট বরাদ্দ, তার স্ত্রীর নামে ঠিকাদারি লাইসেন্স নিয়ে হাসপাতালে রমরমা সাপ্লাই বাণিজ্য, ঠিকাদারকে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে কাজ পাইয়ে দেওয়া, বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে রোগী পাঠিয়ে প্যাথলজিক্যাল টেস্ট করিয়ে তা থেকে কমিশন আদায়সহ নানা অভিযোগ উঠে এসেছে তার বিরুদ্ধে।
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সকল ঠিকাদার ও সাপ্লাইয়ার হিসাবরক্ষক নাসির উদ্দীনের হাতে জিম্মি। সরেজমিনে উঠে আসে, শেখ নাসির উদ্দিনের গ্রামের বাড়ি খুলনা, বর্তমানে তিনি মিরপুরের ১৭/৩/বি/৩ তৌহিদ টাওয়ার টোলারবাগ স্ত্রীর নামে তিনটি ফ্ল্যাট ক্রয় করে বসবাস করছেন।
তিনটি ফ্ল্যাটের বর্তমান বাজার মূল্য আনুমানিক ৫ কোটি টাকা। বিলাসী জীবন পরিচালনার জন্য রয়েছে ঢাকা মেট্রো এঅ-৪২-৬৯৬৪ প্রিমিও ব্র্যান্ডের একটি গাড়ি। এই গাড়ি করে ছেলেমেয়েরা স্কুলে যাতায়াত করেন, নাসিরুদ্দিনের ব্যবহারের জন্য রয়েছে আলাদা গাড়ি। উক্ত গাড়িটি শেখ নাসির উদ্দিনের শ্যালিকা আফরোজা বেগমের নামে ক্রয় করেন। মিরপুরে জিহা এন্টারপ্রাইজ (১৭/৫ মাজার মার্কেট টোলারবাগ মিরপুর ১)নামে রয়েছে একটি বিশাল জেনারেল স্টোর। যা পরিচালনা করেন নাসির এবং তার স্ত্রী। দোকানের পজিশন দেখে অনুমান করা যায় ৫থেকে ৬ কোটি টাকার মালামাল নিয়ে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
তথ্যসূত্রে উঠে আসে, আব্দুস সালাম নামের একজন গত ১২/১০/২০২৩ ইং তারিখ শেখ নাসির উদ্দিনের অবৈধ সম্পদ ও অবৈধ কার্যক্রমের বর্ণনা দিয়ে দুদকে একটি অভিযোগ দায়ের করেন। উক্ত অভিযোগ দুদক আমলে নিয়েছে বলে জানা যায়। অভিযোগে উঠে আসে, শেখ নাসির উদ্দিন চাকরিতে যোগদানের সময় এত বিত্ত বৈভবের মালিক ছিলেননা। অতি সাধারণ জীবন যাপন করতেন তারা। বর্তমানে শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের চাকরি করার সুবাদে বানিয়েছে সম্পদের পাহাড়। সর্বসাকুল্যে ৪০,০০০/টাকা বেতনে চাকরি করে কিভাবে এত সম্পদের মালিক হওয়া যায় তা বোধগম্য নয়। নাসির উদ্দিন তার ছেলে মেয়েদেরকে পড়াচ্ছেন ভালো স্কুল এবং কলেজে। উত্তরা ১২ নম্বর সেক্টরে স্ত্রীর নামে রয়েছে আটতলা বিশিষ্ট একটি বাড়ি।
ঢাকার দারুস সালাম থানার অন্তর্গত তার স্ত্রীর নামে রয়েছে সাত তলা বিশিষ্ট একটি ভবন, যার বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ১০ কোটি টাকা, খুলনায় খান জাহান আলী রোডে ১০ কাঠা জমির উপর ষষ্ঠ তলা একটি বাড়ি নির্মাণ করেন, যার নির্মাণ ব্যয় ১৪ কোটি টাকা প্রায়।সাভার বিরুলিয়াতে রয়েছে প্রায় ২০ কোটি টাকার সম্পত্তি। গাজীপুর কাশিমপুরে রয়েছে কয়েক কোটি টাকার সম্পদ।
উক্ত বিষয়ে শেখ নাসির উদ্দিনের কাছে বক্তব্য নিতে গেলে বারবার চেষ্টা করেও বক্তব্য পাওয়া যায়নি। পরপর তিনদিন দীর্ঘ সময় বসে থাকার পরও অফিসে তার দেখা মিলেনি। এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তার সহকর্মীরা জানায়, নাসির সাহেব সারাক্ষণ তদবির নিয়ে ব্যস্ত থাকেন, তাকে অফিসের টেবিলে পাবেন না। একাধিকবার তার মুঠো ফোনে ফোন দিয়েও সাড়া মিলেনি।
পক্ষান্তরে শেখ নাসির উদ্দিন বিভিন্ন পত্রিকার সাংবাদিক ও সম্পাদক দ্বারা প্রতিবেদককে ফোন করিয়ে রিপোর্ট বন্ধ রাখার তদবির করিয়েছেন। শেখ নাসির উদ্দিন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে কখন আসেন কখন যান কেউ জানে না। তাকে পরপর এক সপ্তাহে খুঁজে হাসপাতালে পাওয়া যায়নি। এতে প্রমাণিত হয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ধার ধারেননা তিনি।