ওষুধ চুরির অভিযোগ দেওয়ায় মারধর

কর্মবিরতিতে সোহাওয়ার্দী হাসপাতালের নার্সরা

স্টাফ রিপোর্টার
স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশিত: অক্টোবর ১৬, ২০২৫ ২০:০৮:৫০

শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওষুধ চুরি করে বাইরে পাচারের বিষয়ে পরিচালকের কাছে অভিযোগ দেওয়ায় হাসপাতালের এক নার্সকে বেধড়ক পিটিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির ছাত্রদল সভাপতি ও তার অনুসারীরা। এ ঘটনায় গুরুত্বর আহত নার্স কামরুল হাসান হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। সহকর্মী পেটানোর বিচার দাবিতে দিনভর কর্মবিরতি পালন করেছেন হাসপাতালের নার্সরা। বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে নার্সরা সব ধরনের সেবা বন্ধ রেখেছেন। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন রোগীরা।

এ ঘটনায় হাসপাতালজুড়ে উত্তেজনা বিরাজ করছে। রোগী ও স্বজনরা বলছেন, চিকিৎসা পেতে এসে তারা বিপাকে পড়েছেন। নার্সরা কর্মবিরতি প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত চিকিৎসাসেবা ব্যাহত থাকার আশঙ্কা করছেন সবাই। এ ঘটনা আমাদের মধ্যে ভয়-ভীতি তৈরি করছে। যদি প্রশাসন সতর্ক না হয়, তাহলে রোগীদের সেবার মানও প্রভাবিত হবে।’

সংশ্লিষ্টরা জানান, বেশ কিছুদিন ধরে হাসপাতালের ৬৩৪ ও ৬৩৫ নং ওয়ার্ডের কর্মরত সিনিয়র স্টাফ নার্স ও ইনচার্জ রুবিয়া আক্তার মালামাল ও ওষুধপথ্য চুরি করে বাইরে পাচার করছিলেন। গত ৯ অক্টোবর কিছু মালামাল ও ওষুধপথ্য ইনডেন্ড (প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহ জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন) দেয়। কিন্তু তিনি ওই মালামাল ও ওষুধপথ্য নিজ ওয়ার্ডে না নিয়ে দ্বিতীয়তলার ২০৭ নং ওয়ার্ডের একজন ওয়ার্ডবয়ের মাধ্যমে মজুদ করেন এবং সুযোগ বুঝে বাইরে পাচার করেন। ওষুধ পাচারের বিষয়টি ৬৩৪ ও ৬৩৫ নং ওয়ার্ডের একজন ওয়ার্ডবয় স্বচোখে দেখে ব্যক্তিগত মোবাইলে ভিডিও ধারণ করেন। ওই সময় সোহরাওয়ার্দী হাসাতাল শাখা নার্সেস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ন্যাব) সভাপতি জিয়াছমিন, সুপারভাইজর হান্নান মিয়া ঘটনার প্রতক্ষ্যদর্শী ছিলেন। সরকারি হাসপাতালের ওষুধ চুরির বিষয়টি জানিয়ে গত ১২ অক্টোবর সিনিয়র স্টাফ নার্স কামরুল হাসান, জিয়াছমিন, আসমা আক্তার, নাইমা সুলতনা ও ফাহমিদা জান্নাত হাসপতাল পরিচালক পরিচালক বরাবর দরখাস্ত করে ঘটনার তদন্ত দাবি জানান। আবেদনে হাসপাতালেরর এমএলএসএস রহিম বাদশা, লিটন শিকদার, জাহিদুল, রানা ও বিউটি স্বাক্ষর করেন। পরে হাসপাতাল পরিচালক শিহাব উদ্দীন তিন চিকিৎসকের সমন্বয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন।

এদিকে হাসপাতাল পরিচালক বরাবর অভিযোগ দেওয়ায় অভিযুক্ত নার্স রুবিয়া আক্তার ক্ষুব্ধ হয়ে তার স্বামী ও আরেক সহকর্মী নার্স হাফিজা আক্তারের পরামর্শে স্থানীয় যুবদল নেতা-কর্মীদের দারস্থ্য হন। যুবদল নেতা-কর্মীরা শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ছাত্রদলের সভাপতি সৈকত তাওহিদকে বিষয়টি জানান। পরে ১৫ অক্টোবর বিকালে সৈকত ও তার অনুসারী মেডিকেল কলেজ ছাত্রদল কর্মী ইমরান, সিফাতসহ একাধিক চিকিৎসক হাসপাতালের নার্স কামরুল হাসানকে ডিউটিরত অবস্থায় কক্ষে আটকে বেধড়ক পেটান। তাকে মারতে মারতে পরিচালকের পক্ষে নিয়ে যান।

এর প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে কর্মবিরতিতে যান নার্সরা। সকালে হাসপাতালের পরিচালকের কার্যালয়ের সামনে স্লোগান দিয়ে বিক্ষোভ করেন নার্স-স্টাফরা। এসময় নাজমা আকতার নামে একজন সিনিয়র স্টাফ নার্স বলেন, ‘আমাদের নার্সদের গায়ে হাত তুলেছেন এর বিচার চাই। এর প্রতিবাদে আমাদের কর্মসূচি।’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আন্দোলনকারী একাধিক নার্স বলেন, ‘এ ধরনের আক্রমণ আমাদের সবার জন্য হুমকি। নার্সদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না করলে সেবা দেওয়া সম্ভব নয়। এতে রোগীদের চিকিৎসাও বিঘ্নিত হবে।’

অভিযোগের বিষয়ে চিকিৎসক সৈকত তাওহিদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি। তবে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. শিহাব উদ্দিন  বলেন, নার্সদের বুঝিয়ে কাজে ফেরানো হয়েছে। পরিবেশ স্বাভাবিক আছে। রোগীরা চিকিৎসা পাচ্ছেন। অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত কমিটি কাজ করছেন। অভিযোগ প্রমাণিত হলে আইন অনুযায়ী আইন অনুযায়ী কাজ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।